সিএএ নিয়ে বিক্ষোভের আঁচ কম করতে গেরুয়া শিবিরের মুসলিম মুখদের কাজে লাগাচ্ছে বিজেপি
সিএএ নিয়ে বিক্ষোভের আঁচ কম করতে দলের মুসলিম মুখদের কাজে লাগাচ্ছে বিজেপি
গোটা দেশের মতো উত্তরপ্রদেশেও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে প্রতিবাদ–বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। অশান্তি থামাতে এবার ময়দানে নামল বিজেপি। রাজ্যের মুসলিম ধর্মীয় নেতা এবং ইসলামিক পণ্ডিতদের কাছে পৌঁছে বিজেপি তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করছে যে যাঁরা ভারতের নাগরিক এই আইন তাঁদের বিপক্ষে নয়।
বিজেপি কাজে লাগাচ্ছে দলের মুসলিম মুখকে
বিজেপি উত্তরপ্রদেশে দলের মুসলিম মুখ ও সংখ্যালঘু সেলকে দায়িত্ব দিয়েছে যে বিক্ষোভের আগুনকে শান্ত করতে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে। মুসলিম যাজক ও ইসলামিক পণ্ডিতদের সহ সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে দেখা করবে তাঁরা। এটি বিজেপির অশান্ত পরিবেশ শান্ত করার পরিকল্পনা। যার জন্য দল ও সরকার সমন্বয় পদ্ধতিতে কাজ করছে। একদিকে বিজেপির সংখ্যালঘু সেল গুরুত্বপূর্ণ সিয়া ও সুন্নি নেতাদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে, অপরদিকে যোগী আদিত্যনাথ সরকার উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য বিশিষ্ট মুসলিম যাজক ও সাম্প্রদায়িক নেতাদের সংস্পর্শে রয়েছে। আদিত্যনাথ সরকার সোমবার গভীর রাতে ইদগাহের ইমাম খালিদ রশিদ ফিরঙ্গিমহালকে শান্তির আবেদন জানাতে সফল হয়েছে।
সিয়া–সুন্নি নেতাদের সঙ্গে বিজেপির যোগাযোগ
খলিদ রশিদ তাঁর আবেদনে বলেছেন, ‘সিএএ বিষয় সম্পর্কে, আমি আমাদের সম্প্রদায়কে বলব যে অনেকেই এ সংক্রান্ত আবেদন সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে এবং আমাদের সকলেরই আদালতের ওপর আস্থা রাখা উচিত। আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করে ততদিন কোনও ধরনের শান্তি বিঘ্নিত হতে দেব না এবং কোনও উস্কানিমূলক প্ররোচনায় কেউ পা দেবেন না।' খলিদ রশিদের এই আবেদন বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে।
সুন্নি সেক্টরের প্রভাবশালী ইমাম ফিরঙ্গিমহল হলে হামিদুল হাজান সিয়া সেক্টরের প্রভাবশালী ইমাম। তিনি যোগী সরকারের মুসলিম মুখ মহসিন রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সিয়ার ইমামও শান্তির জন্য আবেদন করেন এবং যুব সমাজকে আবেগের ওপর ভিত্তি করে কিছু না করার উপদেশ দেন। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী সবকা সাথ, সবকা বিকাশের কথা বলেছিলেন। নির্বাচনের পর তিনি জানান যে সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে, কে ভোট দিয়েছে আর কে ভোট দেয়নি, এটা ভাবলে চলবে না। সেই কারণেই মোদী সকলের বিশ্বাস অর্জন করতে চান। সুতরাং আমি নিশ্চিত যে প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রকৃত উদ্বেগের সমাধান করবেন তবে আমাদের তরুণদের বুঝতে হবে যে এমন পদক্ষেপ গ্রহণের দরকার নেই যা কোথাও নেতৃত্ব দেয় না।'
রাজ্যের অন্য মুসলিম নেতারাও বিজেপির সঙ্গে
মৌলানা কালবে সাদিকের বিভিন্ন ইমাম, যারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন, সেই প্রতিষ্ঠানের মৌলানা আঘা রুহি ও মৌলানা ইয়াসুব আব্বাস সহ বিভিন্ন উত্তরপ্রদেশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পুনরায় যাতে অশান্তি না ছড়ায় তার জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী মহসিন রাজার নেতৃত্বে মুসলিম ইমামদের একটি প্রতিনিধি দল মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গেও সাক্ষাত করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সব ধরনের সুরক্ষার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে কোনও সরকারি কর্মী যদি তাঁদের হেনস্থা করে তবে মুখ্যমন্ত্রী সেইসব কর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে। এ ধরনের বিষয় বরদাস্ত করা হবে না।
যোগী আদিত্যনাথের আর্জি
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেন এবং আইনকে নিজেদের হাতে না তোলার আর্জি জানান। ডিজিপি ওপি সিংয়ের সঙ্গে রাজ্যের বর্তমান অবস্থা আলোচনা করার পর আদিত্যনাথ বলেন, ‘গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ জানানোর অধিকার সকলের রয়েছে কিন্তু কারোর উচিত নয় আইনকে নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া।' এরই মধ্যে সংখ্যালঘু সেলের প্রধান হায়দার আব্বাস চাঁদ বারাণসীতে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় মুসলিমদের ভয়ের কিছু নেই, সিএএ পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের নিপীড়িত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে। কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে নয়। অর্থ দিয়ে এ ধরনের বিক্ষোভ করানো হচ্ছে।'