চিত্রনাট্যেও বিপ্লব! দেখুন তামিল সিনেমাকে কিভাবে বদলে দিয়েছেন করুণানিধি
তামিল সিনেমাতেও বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন করুণানিধি। পরাশক্তি, মনোহরা, মালাইক্কাল্লান তাঁর সেরা চিত্রনাট্যগুলি বদলে দিয়েছিল তামিল সিনেমার ধারা।
আগে ছিলেন ত্যাগরাজ ভাগবতার, পরে এসেছেন রজনিকান্ত। কিন্তু কোনও সন্দেহ নেই এখনও তামিল চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় দুই সুপারস্টার হলেন এমজি রামাচন্দ্রন ও শিবাজী গণেশন। কিন্তু তাঁদের এই সুপারস্টার খেতাব আসত না যদি না একজন করুণানিধি থাকতেন। এম করুণানিধি রাজনীতিক হিসেবেই বেশি পরিচিত, কিন্তু তামিল সিনেমাতেও কিন্তু বিপ্লব এনেছিলেন তিনিই।
তাঁর আগে তামিল সিনেমা মানেই ছিল মহাভারতের কোনও আখ্যানকে ভিত্তি করে বানানো পৌরাণিক কাহিনী। ১৯১৬ সালে নির্বাক ছবি 'কীচক বধম' যে পথের সূচনা করেছিল, সেই নিরাপদ পথেই এগিয়েছিল একের পর এক তামিল চলচ্চিত্র। কিন্তু করুণানিধিই তা পাল্টে দেন। ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে পেরিয়ার ও আন্নাদুরাইয়ের দ্রাবিড়িয় দর্শনকে তিনি তুলে আনেন চিত্রনাট্যে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক তাঁর কিছু সেরা চিত্রনাট্য।
পরাশক্তি
পৌরাণিক কাহিনী, অন্তত খান চল্লিশেক গান - এই ছিল তামিল ছবির স্বরূপ। ১৯৫২ সালে এই ছবিটাই করুণানিধি বদলে দেন পরাশক্তি ছবির মাত্র একটি মনোলগে। এই ছবি তামিল ছবির জগতে বিপ্লব এনেছিল। প্রথমত সেই প্রথম সিনেমাকে রাজনৈতিক মতবাদ প্রটারে ব্যবহার করা হয়। দ্বিতীয়ত এই ছবি থেকেই তামিল ছবিতে মনোলগ-ডায়ালগ ভিত্তিক বিনোদনের সূচনা হয়। এই ছবি নাড়িয়ে দিয়েছিল ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু সমাজকে। ছবিতে শিবাজী গণেশনের মুখে একটি ডায়ালগ ছিল, 'একটি পাথরকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্র পড়লে আর ফুল ছড়ালেই কি সে দেবতা হয়ে যায়?'
মনোহরা
পরাশক্তি মুক্তি পাওয়ার দুবছরের মাথাতেই আবার বক্স অফিস কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন করুণানিধি। আবার শিবাজী গণেশনের সঙ্গে তাঁর জুটি বক্সঅফিসে ফুল ফুটিয়েছিল। অদ্ভুত সম্পর্ক ছিল এই তুই তামিল সুপারস্টারের। শিবাজী গণেশনের আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল লম্বা ডায়ালগ মনে রাখার। তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন ৮-১০ মিনিটের দীর্ঘ ডায়ালগের সিনও তিনি এক শটেই ওকে করে দিতেন। আর তাঁর জন্যই ওইরকম লম্বা ডায়ালগ লিখতেন করুণানিধি। তাঁকে ছাড়া শিবাজী গণেশন যেরকম স্টার হতে পারতেন না, সেরকম শিবাজী গণেশনকে না পেলে করুণানিধিও চিত্রনাট্যকার হিসেবে আজকের স্থানে আসতে পারতেন না। এই ছবি ছিল শেক্সপিয়ারের হ্যামলেটের অনুকরণে। কিন্তু করুণানিধির লেখার মুন্সিয়ানায় তা বোঝার উপায় ছিল না, এতটাই তামিলভূমে এনে ফেলেছিলেন তিনি শেক্সপিয়ারকে।
মালাইক্কাল্লান
মনোহরার একই বছরে মুক্তি পেয়েছিল মালাইক্কাল্লান। চার মাস ধরে চেন্নাই ও শহরতলীতে সফল ভাবে চলেছিল এই ছবি। নতুন ভাবনা এবং নতুন ডডায়ালগ স্টাইলের দৌলতে এই ছবি প্রথম তামিল চলচ্চিত্র হিসেবে জিতে নিয়েছিল রাষ্ট্রপতি পদক। শুধু তাই নয়, এই ছবি পরবর্তীতে রিমেক হয়েছে তেলুগু, মালয়ালম, কন্নড় ও হিন্দি ভাষায়। এই ছবিতে এক পৌরাণিক চরিত্রকে বর্তমান সমাজে এনে ফেলেছিলেন করুণানিধি। আজকের সমাজে সে কিভাবে নিজের লোকজনকে রক্ষা করে, নায়িকার মন জিতে নেয়, এবং শাসক হয়ে বসে তাই ছিল ছবির বিষয়। আর এই ছবিই এমজি রামাচন্দ্রনের পরবর্তীকালের যাবতীয় সাফল্যের মূল সুরটা বেঁধে দিয়েছিল।
রাজকুমারী
করুণানিধি মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি চিত্রনাট্যকার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন তামিল চলচিত্র শিল্পে। তাঁর লেখা প্রথম ফিল্ম ছিল রাজকুমারী। যাতে অভিনয় করেনন এম জি রামাচন্দ্রন। এই সময় থেকেই রামাচন্দ্রনের সঙ্গে তাঁর বন্ধুতা গড়ে উঠেছিল, যা পড়ে পাল্টে যায় তিক্ততায়।