মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের বর্ষপূর্তি, হাজারো বিতর্কের মাঝেও কেমন কাটল একবছর
মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের বর্ষপূর্তি, হাজারো বিতর্কের মাঝেও কেমন কাটল একবছর
মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংস এক বছর পার করল। এর মধ্যেই বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার যে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা যেমন অনেক ক্ষেত্রে সমাদৃত হয়েছে, তেমনই তুমুল সমালোচিত হয়েছে বহু জায়গায়। নাটকের দৃশ্যের মত একের পর এক ঘটনায় গত একবছরে ভারতীয় রাজনীতি যেভাবে তোলপাড় হয়েছে, তাতে এটা অন্তত স্পষ্ট যে মোদী সরকার ২.০ ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসের পাতায় এক বিতর্কিত অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
লকডাউনের মধ্যেই বিজেপি সরকারের বর্ষপূর্তি
করোনা প্রকোপ ঠেকাতে ইতিমধ্যেই চতুর্থ বারের দফার লকডাউন চালু হয়েছে সারা দেশে। তালাবন্ধ দেশেরে প্রায় সমস্ত ক্ষেত্র। যার জেরে জিডিপি-র পারা পতন, তীব্র অর্থনৈতিক মন্দায় জেরবার ২০২০। কঠিন সঙ্কটে দেশবাসী। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিদারুণ কষ্টে দিন গুজরান করছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। সঙ্কট মোকাবিলায় মোদী সরকারের ঘোষিত ২০ লক্ষ কোটির আর্থিক প্যাকেজ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এতকিছুর মধ্যে বর্তমানে আবার ভারত-চিন লাদাখ সীমান্তে চড়ছে উত্তেজনার পারদ। তৈরি হচ্ছে যুদ্ধ সম্ভাবনা। এরই মধ্যে মোদী সরকারের দ্বিতীয়বারের বর্ষপূর্তিতে দেশজুড়ে ৭৫০ মিছিল বের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাসকদল। যা নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপনৌতর।
একাধিক হিন্দুত্ব ঘেঁষা নীতির ফলে সমালোচনার মুখে পদ্ম শিবির
গত একবছরে প্রতিটি খুঁটিনাটি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এনডিএ সরকারের অদূরদর্শিতা দেশবাসীকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। শাসকদলের একাধিক হিন্দুত্ব ঘেঁষা নীতি, রাম মন্দির নিয়ে অহেতুক বাড়াবাড়ি ও তিন-তালাক আইন নিয়ে প্রত্যেক পদক্ষেপ যেভাবে মুসলিম-বিরোধী মনোভাবকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে তাতে সমালোচনায় সরব হয়েছে সমাজের একাধিক মহল। পাশাপাশি বর্তমান মহামারীর মাঝেও সরকারের একাধিক সিদ্ধান্তকে সরাসরি গরীব বিরোধী বলে তকমা দিয়ে দিয়েছে বিরোধীরা। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিপক্ষে দুর্বল বিরোধীদলের উপস্থিতির কারণের শাসকদলকে স্বেচ্ছাচারিতার এহেন সুযোগ তৈরি হয়েছে।
একের পর এক প্রশ্ন বানে বিদ্ধ এনডিএ
মোদী সরকারের দ্বিতীয় দফার বর্ষপূর্তিতে দাঁড়িয়েও সরকারের কার্যক্রম নিয়ে জনসাধারণের মনে জমছে একের পর এক প্রশ্ন। করোনা মহামারীর আবহে মাত্র ৪ ঘণ্টার নোটিশে লকডাউনই হোক বা পিএম কেয়ার্স ফান্ডে জমা পড়া ১০,০০০ কোটি টাকার হিসেব নিকেশ। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই এনডিএ সরকারের একাধিক ক্রুটি ধরা পড়ছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের মত রাজ্যে বিজেপির ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের প্রতিও ক্ষুব্ধ মানুষ।
৪৫ বছরে সর্বাধিক বেকারত্বের শিকার ভারত
এদিকে গত ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বাধিক বেকারত্বের শিকার ভারত। অন্যদিকে একের পর সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে জড়াতে দেখা যায় শাসকদলের নেতা-মন্ত্রী দের। এনআরসি-সিএএ বিরোধীদের বিরুদ্ধে 'গোলি মারো সালোকো' স্লোগানও উঠতে দেখা যায়। সিএএ ও এনআরসির দেশজোড়া প্রতিবাদ দিল্লিতে ফিরে আসে গুজরাট দাঙ্গার স্মৃতি। একই সাথে জম্মু ও কাশ্মীরে বিশেষ মর্যাদা রোধ করে ৩৭০ ধারার বাতিলের পরেও দেশজুড়ে বিরোধিতার মুখে পড়ে মোদী সরকার।
করোনা মহামারির পূর্বাভাস ফেলেও প্রতিরোধে ব্যর্থ সরকার
সূত্রের খবর, ২৪শে ফেব্রুয়ারিই ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল তিন এবং তারপরেও বিশেষজ্ঞরা আগাম মহামারীর পূর্বাভাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেসময়ে সরকার বাহাদুরকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় অতিথি আপ্যায়নে। প্রায় ১০০ কোটি ভারতীয় অর্থ ব্যয়ে গুজরাটের আহমেদাবাদে স্টেডিয়ামে ১,২৫,০০০ মানুষের সমাগমের মধ্যে চলে ট্রাম্প বন্দনা। অনেকেই বলছেন আগাম পূর্বাভাস পেলেও, মার্চের শুরুতেও করোনা ঠেকাতে নেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত সতর্কতা। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক উড়ান চলাচল নিয়ে চলে টালবাহানা। যার জেরে মাত্র দুমাসেই বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লক্ষ ছুঁই ছুঁই।
৩৭০ ধারা বিলোপ থেকে করোনা সংক্রমণ, এক নজরে দ্বিতীয় মোদী সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির কর্মকাণ্ড