তেলেঙ্গানা থেকে ছত্তিশগড় ১০০ কিমি রাস্তা পার, বাড়ির কাছে মৃত্যু হল ১২ বছরের কিশোরীর
তেলেঙ্গানা থেকে ছত্তিশগড় ১০০ কিমি রাস্তা পার, বাড়ির কাছে মৃত্যু হল ১২ বছরের কিশোরীর
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণার পরই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা নিজেদের বাড়ি ফেরার তাগিদে দীর্ঘপথ হেঁটে পার হচ্ছেন। এখনও সেই রেশ চলছে। এরই মধ্যে এক কিশোরী শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল। ১২ বছরের জামালো মদকাম প্রথমবার তাঁর বাড়ি ছেড়েছিল ২ মাস আগে। কিছু বন্ধু ও আত্মীয়ের সঙ্গে তেলেঙ্গানাতে লঙ্কার খামারে কাজের জন্য গিয়েছিল। কিন্তু রবিবার তেলেঙ্গানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে তার মৃত্যু হয়।
শরীরে জল–ইলেক্ট্রলের ঘাটতি ও ক্লান্তিতে মৃত্যু জামালোর
সরকারিভাবে জানা গিয়েছে, ১৮ এপ্রিল ওই আদিবাসী কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ হিসাবে বলা হয়েছে শরীরে জল ও ইলেক্ট্রলের ভারসাম্যহীনতা ও ক্লান্তি। ওই কিশোরী গত তিনদিন ধরে আরও ১৩ জনের সঙ্গে ১০০ কিমিরও বেশি রাস্তা অতিক্রম করেছিল, কিন্তু তার বাড়ি ছত্তিশগড়ের বিজাপুর জেলার আদেদে পৌঁছানোর ১১ কিমি দূরেই তার মৃত্যু হয়।
১২ বছরের জামালো প্রথম কাজের জন্য বাইরে যায়
জামালো ৩২ বছরের আন্দোরাম ও ৩০ বছরের সুকোমতি মদকামের একমাত্র সন্তান ছিল। কিশোরীর অভিভাবক জঙ্গলে যা পাওয়া যায় তাই দিয়েই নিজেদের জীবন অতিবাহিত করেন। এটাই প্রথমবার ছিল যখন ১২ বছরের জামালো কাজের জন্য বাড়ির বাইরে যায়। আন্দোরাম বলেন, ‘গ্রামের কিছু মহিলার সঙ্গে সে তেলেঙ্গানা গিয়েছিল।' সোমবার এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল জামালোর পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। প্রত্যেক বছর ছত্তিশগড়ের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ তেলেঙ্গানায় লঙ্কা তুলতে যায় অর্থ উপার্জনের জন্য।
১৬ এপ্রিল তেলেঙ্গানা থেকে রওনা দেয় ১৩ জন
আন্দোরাম জানান, তিনি শেষবারের মতো শুনেছিলেন যে তাঁর মেয়ে ১৬ এপ্রিল তেলেঙ্গানার পেরুরু গ্রাম, যেখানে সে কাজ করত, ওখান থেকে একটি দলের সঙ্গে বিজাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, ‘লকডাউনের মেয়াদ বেড়ে যাওয়ার পরই তারা উপলব্ধি করে যে এখানে কোনও কাজ আর হবে না তাই তারা ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। জামালো সহ ১৩ জনের ,দলে তিনজন শিশু ও আটজন মহিলা ছিল।' সূত্রের খবর, ১৮ এপ্রিল জামলো সকাল আটটায় মারা যায়। সেই সময় ১৩ জনের দল বিজাপুর জেলার সীমান্তে পৌঁছেছিল। অন্যরা জামালোর মৃত্যুর খবর পরিবারকে দিতে পারেনি কারণ একজনের কাছেই ফোন ছিল এবং সেই সময় তার ফোন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে ওই দলটি বিজাপুর জেলার ভান্ডারপাল গ্রামে কোনও মতে পৌঁছায় ও তারা সেখান থেকে কিশোরীর পরিবারকে ফোন করে। ভান্ডারপাল গ্রামের বাসিন্দারা পুলিশকে জানায়। বিজাপুর জেলার মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ বি আর পুজারি জানান, খবরটা পাওয়া মাত্রই সেখানে তাঁরা যান। তিনি বলেন, ‘তেলেঙ্গানাতেও করোনা কেস ধরা পড়েছে তাই আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যাই, কিন্তু তাদের খুঁজে পাই না।'
কিশোরীর করোনা টেস্ট নেগেটিভ
বিজাপুরের মেডিক্যাল টিম ভান্ডারপাল গ্রামের বাইরে অবশেষে ওই দলটিকে খুঁজে পেতে সফল হয়। জামালোর দেহটিকে মর্গে পাঠানো হয়েছে ও ওই দলটিকে কোয়ারান্টাইন সুবিধায়। রবিবার সন্ধ্যায় মেয়ের দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য আন্দোরাম ও সুকোমতি আসেন। চিকিৎসকদের মতে, জামালোর মৃত্যু হয়েছে দেহে জল ও ইলেক্ট্রলের কমতি হওয়ায় ও ক্লান্তিতে। ১৩ জনের দল তিনদিন টানা হেঁটেছে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। জামালোর করোনা টেস্ট নেগেটিভ এসেছে। ছত্তিশগড়ে ৩৬টি পজিটিভ কেস পাওয়া গিয়েছে, যার মধ্যে ১১ জন হাসপাতালে। রাজ্যের বাইরে থেকে আগত যাঁরা তাঁদের কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। তেলেঙ্গানাতে ৮৭২ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে।
প্রতীকী ছবি
একইসময়ে লকডাউন, তবু দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা সাতগুণ বেশি ভারতে