মোদীর অহঙ্কারই বিজেপিকে ডোবাচ্ছে, আর কী বললেন প্রাক্তন এনডিএ জোটসঙ্গী এই নেতা
এক সাক্ষাতকারে টিডিপি নেতা তথা অন্ধপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু জানালেন, মোদীর অহঙ্কারই বিজেপিকে ডোবাচ্ছে।
লোকসভা ভোটের একবছর আগে মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন প্রাক্তন এনডিএ জোটসঙ্গী টিডিপি নেতা তথা অন্ধপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। তাঁর মতে মোদীর অহঙ্কারই বিজেপিকে ডোবাচ্ছে। সাফ জানালেন ২০১৯-এ কিছুতেই ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না বিজেপি। বরং সরকার গঠনে আঞ্চলিক দলগুলো বড় ভূমিকা নেবে।
২০১৪ লোকসভা ভোটে এনডিএ-তে বিজেপির পরই সবচেয়ে বেশি আসন ছিল টিডিপির। ১৬টি আসন জিতেছিল তারা। অন্ধ্রপ্রদেশে একসঙ্গে সরকারও গঠন করেছিল টিডিপি-বিজেপি। কিন্তু চার বছর পর এবছরের মার্চে এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসে টিডিপি। সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে টিডিপি নেতা চন্দ্রবাবু লাইডু জানিয়েছেন, এনডিএ ছাড়ার প্রধান কারণ নরেন্দ্র মোদীর ইগো সমস্যা।
চন্দ্রবাবু জানান, 'বিজেপি নিজের জোরে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যাওয়ায় মোদী ভেবেছিলেন সব জোট সঙ্গীদের তিনি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। তাদের ক্রমে দুর্বল করে দেবেন। দুর্বল দুর্নীতিবাজ জোটসঙ্গী তিনি পছন্দ করেন। কারণ তারা তাঁর কথা মতো চলবে। কিন্তু আমি সেরকম নই। আমি স্বাধীন ও শক্তিশালী নেতা। মোদী বুঝেছিলেন যতদিন আমি এখানে আছি, বিজেপির কোন সুযোগ নেই। তাই নানাভাবে তিনি রাজ্যকে বঞ্চিত করে অন্ধ্রের টিডিপি সরকারকে চাপে রাখতে চেয়েছিলেন।
চন্দ্রবাবুর রাজনীতিতে মোদীর চেয়ে সিনিয়র। ১৯৯৫ সালে তিনি প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন। আর মোদী গুজরাতের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ২০০২ সালে। কিন্তু চন্দ্রবাবুর দাবি তিনি রাজ্যের স্বার্থে সেসব মাথায় রাখেননি বরং মোদীকে বাড়তি সম্মান জানিয়ে রাজ্য়ের উন্নয়নে তাঁর সাহায্য আশা করেছিলেন। চন্দ্রবাবুর অভিযোগ মোদী সেই সম্মান স্বীকার করেননি এবং রাজ্যের উন্নয়নের দন্য কেন্দ্র কোনও অর্থ প্রদান করেনি। এই অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ মোদীকে সতর্ক করে বলেছেন, 'মনে রাখতে হবে ক্ষমতা আজ আছে কাল নেই। কিন্তু সম্পর্ক থেকে যায়।'
তিনি আরও জানান, 'আমি এনডিএতে যোগ দিয়েছিলাম শুধু জনগণের জন্য। যখন কেন্দ্র থেকে কোনও সাহায্যই পাচ্ছি না, তাহলে আর কেন থাকব? মোদীর এই অহংবোধের জন্যই বিজেপিকে ভুগতে হচ্ছে। এখন এনডিএ-কে ধরে রাখতে বিজেপি নেতাদের জোটসঙ্গীদের হাতে পায়ে ধরতে হচ্ছে। টিডিপি-কে উপেক্ষা করে বিজেপিরই ক্ষতি হয়েছে। টিডিপির কিন্তু কোনও ক্ষতি হয়নি।'
সাক্ষাতকারে চন্দ্রবাবু আরও দাবি করেছেন এনডিএ ছাড়ার ইচ্ছে তাঁর ছিল না। শেষদিন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে আর কোনও বিকল্প হাতে না থাকায় তাঁর দলকে এনডিএ থেকে বেরতে হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, অনেকেই এই সিদ্ধান্ত নিতে চার বছর অপেক্ষা কেন করলাম বলে আমায় দোষারোপ করছেন। কিন্তু আমি জানি, 'এর আগে যদি এনডিএ থেকে বেরোতাম, এঁরাই আবার বলতেন আমি হঠকারি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রাজ্যের জন্য তহবিল আনতে ব্যর্থ হয়েছি।'
অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী জানান তাঁর দল দায়িত্বশীল রাজনীতি করে। তাই হুট করে কোনও সিদ্ধান্ত তাঁরা নেন না। তিনি জানান, 'মানুষ আমাদের প্রথম থেকেই কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতে যাওয়ার জন্য ভোট দেননি। আমরা এতদিন এনডিএর সঙ্গে ছিলাম বলেই কেন্দ্র থেকে অন্তত কিছু সহায়তা পেয়েছি। তাছাড়া শুরু থেকেই কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতে জড়ালে বেশিরভাগ সময় তাদের সঙ্গে লড়াই করতেই কেটে যেত। বাজে সময় এবং শক্তি খরচা হত।'
তবে মোদীর এই অহংবোধ শুধু তাঁকেই নয়, মানুষকেও বিজেপির থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রাক্তন এই এনডিএ নেতা। তাঁর সাফ কথা ২০১৯-এ বিজেপি আর ফিরতে পারবে না। তিনি বলেছেন, ২০১৪ সালে জনগণের ব্যাপকহারে বিজেপি ভোট দিয়ে যে সুযোগ তাদের দিয়েছিল তা তারা হেলায় নষ্ট করেছে। অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, 'দেশের সবকটি সিস্টেমের পতন হয়েছে। ডিমানিটাইজেশন এবং গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স বা জিএসটি-র মতো পদক্ষেপগুলি মানুষের উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলেছে। নন পারফর্মিং অ্যাসেটস জমে জমে ব্যাঙ্কগুলো দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। কাজেই, মোদীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিঃসন্দেহে পড়েছে। নিশ্চিতভাবেই বিজেপি আবার ক্ষমতায় আসবে না।'
এঅবস্থায় আঞ্চলিক দলগুলো পরবর্তী সরকার গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন টিডিপি প্রধান। তবে ফেডেরাল ফ্রন্ট গড়াটা যে সহজ নয় তাও তিনি জানেন। সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণেই বিভিন্ন আদর্শের আঞ্চলিক দলগুলি একজোট হচ্ছে। আসন্ন দিনগুলো পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে হবে। তবে কেন্দ্রে ও রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলো বিজেপিকে বালই বেগ দেবে।'
টিডিপি সেই জোটে একটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করলেও তিনি তৃতীয় ফ্রন্টকে নেতৃত্ব দিতে চান না বলেই জানিয়েছেন চন্দ্রবাবু নাইডু। তিনি বলেন, 'অতীতে দু'বার আমার কাছে সুযোগ এসেছিল, দু'বারই প্রত্যাখ্যান করেছি। এখন, আমার যাবতীয় মনোযোগের কেন্দ্রে আমার রাজ্য। ২০২৯ সালের মধ্যে রাজ্যকে দেশের এক নম্বর করার জন্য চেষ্টা করছি। আমি এখানেই খুশি। কিন্তু আমি যেখানেই থাকি না কেন, রাজনীতিতে একটি গুণগত পরিবর্তন আনতে চেষ্টা করবো।' বলাই বাহুল্য প্রাক্তন এই জোটসঙ্গী নেতার এহন মন্তব্যে অস্বস্তি বাড়ল বিজেপির।