দাক্ষিণাত্যের জোট রাজনীতে ধাক্কা বিজেপি-র, সঙ্গ ছাড়ল টিডিপি, আজ ২ মন্ত্রীর ইস্তফা
চন্দ্রবাবু নাইডু এই সাংবাদিক সম্মেলনে সাফ জানিয়েছেন, অন্ধ্রপ্রদেশকে 'স্পেশাল স্ট্যাটাস' না দিয়ে এই রাজ্যের মানুষকে অপমান করেছে কেন্দ্র।
এনডিএ ছাড়ল তেলেগু দেশম পার্টি। ৭ মার্চ সন্ধ্যায় এক সাংবাদিক সম্মলনে একথা ঘোষণা করে দিয়েছেন তেলেগু দেশম পার্টি তথা টিডিপি-র প্রধান এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ-র হাত ধরেছিল টিডিপি। অন্ধ্রপ্রদেশের ক্ষমতার তখতে বসতে বিজেপি-র সঙ্গে এই জোট টিডিপি-র পক্ষে খুবই পজিটিভ মুভ বলে প্রতিপন্ন হয়েছিল। এমনকী, টিডিপি-র সরকার গঠনের অনুষ্ঠানেও হাজির ছিলেন বিজেপি-র শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
চন্দ্রবাবু নাইডু এই সাংবাদিক সম্মেলনে সাফ জানিয়েছেন, অন্ধ্রপ্রদেশকে 'স্পেশাল স্ট্যাটাস' না দিয়ে এই রাজ্যের মানুষকে অপমান করেছে কেন্দ্র। তাঁর আরও অভিযোগ, কেন্দ্রে বিজেপি-কে সবধরণের সাহায্য দিয়েছে টিডিপি। কিন্তু, অন্ধ্রের মানুষদের মনে আঘাত হেনেছে মোদী সরকার।
টিডিপি প্রধানের অভিযোগ, কেন্দ্রের উচিত ছিল অন্ধ্রের মানুষের কথা মাথায় রেখে 'এপি রেগুলেশন অ্যাক্ট, ২০১৪'-কে সংসদে পাস করানো। এই অ্যাক্ট-কে সংসদে পাস না করে বিজেপি যে আঘাত দিয়েছে তার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার এনডিএ জোট থেকে টিডিপি-র দুই মন্ত্রী পদত্যাগ করছেন বলেও জানিয়েছেন চন্দ্রবাবু নাইডু।
চন্দ্রবাবু নাইডু জানিয়েছেন প্রতিবাদের এটা প্রথম পদক্ষেপ। পরিস্থিতি দেখে এরপর আরও বড়সড় প্রতিবাদে যাওয়া হবে। তাঁর আরও অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে গত ৪ বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দরবারও করা হয়েছে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এমনকী ৭ মার্চ সকাল থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলারও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীকে কোনওভাবেই পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন চন্দ্রবাবু নাইডু। তাই এনডিএ ছাড়ার সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি। এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক এনডিএ জোটে থাকা টিডিপির দুই মন্ত্রী কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী পি অশোকপতি গজপতি রাজু এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্রুজানা চৌধুরীর পদত্যাগের কথাও ঘোষণা করে দেয় টিডিপি।
বিজেপি-র পক্ষ থেকে অরুণ জেটলি চন্দ্রবাবু নাইডুকে এখনই কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নেওয়ারই কথা বলেন। বরং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আর একপ্রস্থ আলোচনারও কথা বলেন তিনি। কিন্তু, চন্দ্রবাবু নাইডু আর কোনও আলোচনায় বসতে রাজি ছিলেন না। জেটলি জানান, তেলেঙ্গানা গঠনের পর অন্ধ্রপ্রদেশের আয় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। এর জন্য নানা সমস্যাতেও পড়তে হচ্ছে টিডিপি সরকারকে।
বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ঘোষণা করে দেন যে অন্ধ্রপ্রদেশকে কোনওভাবেই 'স্পেশাল স্ট্য়াটাস' দেওয়া বা কর ছাড়ের ক্ষেত্রে কোনও বিশেষ সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয়। এরপরই চন্দ্রবাবু নাইডু এনডিএ থেকে বেরিয়ে আসার কথা ঘোষণা করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে কয়েকবার 'বিট্রেয়াল' শব্দটিও ব্যবহার করেন চন্দ্রবাবু। তিনি আরও জানিয়েছেন, যেভাবে কংগ্রেস সভাপতি অন্ধ্রের 'স্পেশাল স্ট্যাটাস'-কে সমর্থন দিয়েছেন সে ভাবে সরকারের জোটসঙ্গী হয়েও বিজেপি-র কাছ থেকে তেমন কোনও সাড়া তাঁরা পাননি। এই সিদ্ধান্তে অন্ধ্রপ্রদেশকে কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ পেতে যে আরও সমস্য়ার সম্মুখিন হতে হবে তেমন আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন চন্দ্রবাবু। তবে, টিডিপি একটা সূত্রের খবর এনডিএ জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়তো আর কিছুদিন ঝুলিয়ে রাখতে পারতেন চন্দ্রবাবু। সামনে সাধারণ নির্বাচন। তার আগে নতুন জোটসঙ্গী বেছে মোদীদের সঙ্গ ছাড়া যেত বলেও মনে করছেন অনেকে।
টিডিপি এমন সময় এনডিএ জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিল যখন শিবসেনার মতো সঙ্গীরাও মোদী বিরোধিতায় গলা চড়িয়েছেন। এই মুহূর্তে লোকসভায় টিডিপি-র ১৬ জন এবং রাজ্যসভায় ৪ জন সদস্য আছেন। এমনকী বিজেডি যারা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি এতদিন নরম মনোভাবই পোষণ করছিল তারাও পিএনবি কেলেঙ্কারিতে কংগ্রেসের সঙ্গে মোদী বিরোধিটতায় গলা মিলিয়েছে। এই সময়ে টিডিপি-র জোট ছাড়াটা বিজেপি-র পক্ষে খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয় বলেই মনে করা হচ্ছে।