যে কারণে আত্মহত্যার পথ নিতে হল তামিলনাড়ুর এই মেধাবি ছাত্রকে
তামিলনাড়ুতে বাবার মদ্যপানের বদ অভ্যাস ছাড়াতে আত্মঘাতি হল ১৭ বছরের কিশোর এম দীনেশ নাল্লাশিবন।
সে ডাক্তার হতে চেয়েছিল। এনইইট অর্থাৎ সারা ভারতের জন্য যে ডাক্তারির এন্ট্রান্স পরীক্ষা নেওয়া হয়, তার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু সমস্যা হল বাবা মদ্যপ। মদ ছেড়ে দেওযার জন্য বাবাকে বারবার বলেছিল সে, কিন্তু কিছুতেই কাজ হয়নি। অভিমানে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হল ১৭ বছরের ওই কিশোর। রেখে গিয়েছে এক মর্মভেদী সুইসাইড নোট।
মর্মান্তিক ঘটনাটি তামিলনাড়ুর তিরুনেলভেলি-এর। বুধবার সকালে এম দীনেশ নাল্লাশিবন নামে ওই কিশোরের দেহ তিরুনেলভেলির একটি ব্রিজে ঝুলতে দেখা যায়। পুলিশে খবর দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে তিরুনেলভেলি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। দীনেশের কাছ থেকে একটি ব্যাগ পাওয়া গিয়েছে। তাতে ছিল প্লাস্টিকে মোড়া একটি নষ্ট হয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন, এনইইটি-র হলটিকিট, এসএসএলসি-র মার্কশিট এবং ওই সুইসাইড নোট।
তামিলে লেখা সুইসাইড নোটের প্রতি ছত্রে বাবার প্রতি অভিমান ঝড়ে পড়েছে তার। দীনেশ লিখেছে, 'বাবা, তুমি আমার শেষকৃত্য কোরও না। বদলে মদ খাওয়াটা ছেড়ে দাও। তাহলেই আমার আত্মা শান্তি পাবে'। বিচক্ষণ দীনেশ জানত বাবার মদ্যপানের বদ অভ্যেস টা যেমন তার বাবার তেমনই এর পেছনে দায় রয়েছে তামিলনাড়ুতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা মদের দোকানগুলিরও। তাই শেষপত্রে সে মদের দোকানগুলো বন্ধ করার জন্য আর্জি রেখে গেছে প্রশাসন তথা, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পলানিস্বামীর উদ্দেশ্যেও। দীনেশ লিখেছে, 'এরপরও যদি তামিলনাড়ুর মদের দোকানগুলি মুখ্যমন্ত্রী না বন্ধ করেন, তাহলে আমার আত্মা ফিরে এসে ওগুলো ধ্বংস করে দেবে'। তাঁর এই বলিদানের পর এলাকাবাসীও মদের দোকান বন্ধ করার আওয়াজ তুলেছে।
দীনেশদের বাড়ি রেড্ডিয়াপট্টিতে। তাঁর বাবা এস মদাস্বামী শ্রমিকের কাজ করেন। তিন সন্তানের মধ্যে বড় দীনেশই। ৯ বছর আগে তার মা এসাকিয়াম্মল মারা যান। তারপর বাবা ফের বিবাহ করেন। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে মাদুরাইয়ে মামা শঙ্করকুতালামের কাছেই মানুষ হয়েছে দীনেশ। ছোট ভাই এসাকিরাজ পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে, বোন ধনুশ্রী ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
তারা দুজন বাবা ও সৎমায়ের সঙ্গেই থাকে। মেধাবী ছাত্র ছিল দীনেশ। মাধ্য়মিকে ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৪৬৬ পেয়েছিল সে। দীনেশের কাকা পুলিসকে বলেছেন, বাবাকে খুব ভালোবাসত সে। গত পাঁচ বছর ধরে বাবার মদ্যপান ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল তাঁর ভাইপো। মঙ্গলবার রাতেও এনিয়ে দু'জনের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। তারপরই সকালে সে কাকাকে বলেছিল পিসির বাড়ি যাচ্ছে। এরপরই তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
২০১৬ সালের ভোটে তামিলনাড়ুতে মদের দোকান বন্ধ একটা বড় ইস্যু ছিল। ডিএমকে বলেছিল ক্ষমতায় এলে সব দোকান বন্ধ করে দেবে। এআইএডিএমকের মত ছিল একবারে নয়, কয়েক ধাপে বন্ধ করাতে। জয়ললিতার সময়ে ৫০০টি সরকার নিয়ন্ত্রিত মদের দোকান বন্ধ করা হয়। ২০১৭ সালে পলানিস্বামী মুখ্যমন্ত্রী হয়ে আরও ৫০০টি দোকান বন্ধ করেছিলেন। কিন্তু এখনও সরকারি ৪ হাজার ৮০০টি দোকান চালু রয়েছে।
এদিনের ঘটনার পর পিএমকে নেতা অন্বুমানি রামডস বলেছেন, 'তামিলনাড়ুতে মদ নিষিদ্ধ করে দেওয়া উচিত'। মৎস্যমন্ত্রী ডি জয়কুমার দাবি করেছেন, 'রাজ্য সরকার তো এক হাজার মদের দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। দোকান বন্ধ নয়, মানুষ যদি মদ্যপান ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, একমাত্র তাহলেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব'।