দেশজুড়ে কৃষকদের ডাকা ভারত বন্ধের প্রভাব কোথায় কেমন দেখে নিন এক নজরে
কৃষকদের ডাকা ভারত বন্ধ
কেন্দ্রের তিন কৃষি আইন নিয়ে গত বছর নভেম্বর থেকে দিল্লির সিংঘু সীমান্তে ক্রমাগত আন্দোলন করেও ফল না পাওয়ায় সোমবার ২৭ সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে কৃষকরা ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছেন। সোমবার ভোর ৬টা থেকে এই বন্ধ শুরু হয় যা চলবে বিকেল ৪টে পর্যন্ত।
হাইওয়ে অবরোধ
সোমবার শতাধিক কৃষক দেশের প্রধান প্রধান হাইওয়েগুলি অবরোধ করে দেন। যার মধ্যে ন্যাশনাল হাইওয়ে ১, যার সঙ্গে দিল্লি, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের কিছু অংশের সংযোগ রয়েছে, যা অবরোধ করে বসেন কৃষকরা। দেশজুড়ে কৃষক সংগঠনের ডাকা এই বন্ধের একটাই দাবি কেন্দ্র এই তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করুক।
কৃষক আন্দোলন
প্রসঙ্গত, গত বছরের নভেম্বর থেকে করোনা মহামারির মধ্যেই কেন্দ্রের এই তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা দিল্লির সিংঘু সহ বিভিন্ন সীমান্তে প্রতিবাদে বসেন। ঝড়-জল-ঠাণ্ডাকে উপেক্ষা করে তাঁরা শুধুমাত্র কেন্দ্রকে এই তিন আইন প্রত্যাহার করার আবেদন জানিয়ে যান। একাধিকভার এই ইস্যু নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কৃষকদের আলোচনা হলেও কোনও রফাসূত্র বের হয়নি। ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন কৃষকদের শান্তিপূর্ণ ট্র্যাক্টর যাত্রা হিংসাত্মক ঘটনায় পরিণত হয়। কৃষকরা ট্র্যাক্টর নিয়ে লালকেল্লায় ঢুকে পড়েন। একের অধিক মামলা দায়ের করে পুলিশ।
গুরুগ্রাম–দিল্লি সীমান্তে যানজট
এই ভারত বন্ধকে কেন্দ্র করে দিল্লি পুলিশ ও আধাসেনার জওয়ানরা গুরুগ্রাম-দিল্লি সীমান্তে জাতীয় রাজধানীতে প্রবেশকারী গাড়িগুলির তল্লাশি করার জেরে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। ভারতীয় কিষাণ সংগঠনের (বিকেইউ) নেতা রাকেশ টিকেইত জানিয়েছেন, 'অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক বা জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত যারা তারা যেতে পারে। আমরা কোনও কিছু সিল করে নেই, আমরা শুধু আমাদের বার্তা পৌঁছাতে চাই। আমরা দোকানদারদের অনুরোধ করেছি যে তাদের দোকান এই সময় যেন তারা বন্ধ রাখে এবং বিকেল চারটের পর যেন খোলে। বাইরে থেকে কোনও কৃষক এখানে আসেননি।'
একনজরে বন্ধের খবর
* হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রের সাহাবাদে দিল্লি-অমৃতসর ন্যাশনাল হাইওয়ে অবরোধ
* পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিত সিং চান্নি এই বন্ধকে সমর্থন জানিয়েছেন
* অন্ধপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু সরকারও এই বন্ধকে সমর্থন করেছে
* কংগ্রেস জানিয়েছে সোমবারের এই বন্ধে তারাও যোগ দিয়েছে
ব্যাহত ট্রেন পরিষেবা
রেল লাইন অবরোধ করার দরুণ ট্রেন পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে দিল্লি, আম্বালা ও ফিরোজপুর ডিভিশনে। লাইনের ওপর কৃষকরা বসে পড়ার জন্য ট্রেন চলতে পারছে না। দিল্লি ডিভিশনের ২০টির বেশি স্টেশনে কৃষকরা লাইনের ওপর বসে পড়েছেন। সোমবার উত্তর রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে আম্বালা ও ফিরোজপুর ডিভিশনের প্রায় ২৫টি ট্রেন পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে।
রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেসের সমর্থন
সোমবার
রাহুল
গান্ধী
তিনটি
বিতর্কিত
খামার
আইন
প্রত্যাহারের
জন্য
কৃষকদের
প্রতি
তাঁর
সমর্থন
পুনরায়
নিশ্চিত
করেছেন।
রাহুল
গান্ধী
হিন্দিতে
টুইট
করে
বলেন,
'কৃষকদের
অহিংস
সত্যাগ্রহ
আজও
অক্ষুণ্ণ,
কিন্তু
শোষক
সরকার
এটা
পছন্দ
করে
না
এবং
সেই
কারণেই
আজ
আমরা
ভারত
বন্ধের
ডাক
দিয়েছি।'
রাহুল
গান্ধীর
পাশাপাশি
কংগ্রেসের
পক্ষ
থেকে
কৃষকদের
এই
বন্ধকে
পূর্ণ
সমর্থন
দেওয়া
হয়েছে।
অন্যান্য রাজ্যে বন্ধের প্রভাব
এই ভারত বন্ধের প্রভাব পড়েছে ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও পাঞ্জাবেও। ওড়িশাতে কেওনঝাড় রেল স্টেশন অবরোধ করেন কৃষকরা। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণার কুলতলিতে রাস্তা অবরোধ করেন জয় কিষাণ আন্দোলনের সদস্যরা। কৃষকরা। পাঞ্জাবের সাঙ্গরুতে কৃষকরা রাস্তায় বসে পড়েন। হরিয়ানার সোনিপথে রেললাইন অবরোধ করে প্রতিবাদ করেন কৃষকরা। কর্নাটকেও প্রভাব পড়েছে কৃষকদের ভারত বন্ধের। উত্তরপ্রদেশে এই বন্ধকে কেন্দ্র করে ব্যাহত মেট্রে পরিষেবা। তবে শুধু এই দেশ নয়, বিদেশেও ভারতের কৃষকদের সমর্থন করতে সেখানে প্রতীকি প্রতিবাদ করেন প্রবাসী ভারতীয়রা।
নিরাপত্তার চাদরে দিল্লি
সোমবার ভারত বন্ধকে কেন্দ্র করে গোটা দিল্লি নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়। এক শীর্ষ পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন যে টিকরি, সিংঘু এবং শম্ভু এই তিন সীমান্তে বেশি করে নজরদারি রাখা হয়েছে কারণ এখানে গত দশমাস ধরে কৃষকরা প্রতিবাদ জানিয়ে চলেছেন।
সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা নির্দেশিকা
৪০টি কৃষক সংগঠনকে নিয়ে গঠিত সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা আগেই এই বন্ধের গাইডলাইন জারি করেছিল। তারা জানিয়েছিল জোর করে নয়, স্বেচ্ছায় যারা সমর্থন করবে তাদের স্বাগত। এই বন্ধ তারা শান্তিপূর্ণভাবেই হোক সেটাই চেয়েছিল।
Recommended Video