মানিকবাবু ‘বিশ্রামে’ বিপ্লবের রাজত্বে! সিপিএম-বিজেপিকে এক বন্ধনীতে নিশানা সুস্মিতার
মানিকবাবু ‘বিশ্রামে’ বিপ্লবের রাজত্বে! সিপিএম-বিজেপিকে এক বন্ধনীতে নিশানা সুস্মিতার
সিপিএমকে প্রাসঙ্গিক করার চেষ্টা করছে বিজেপি। রাজ্যসভার সাংসদ পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়ে তৃণমূল নেত্রী সুস্মিতা দেব সাফ জানিয়ে দিলেন, তাঁর প্রথম টার্গেট ত্রিপুরা। ত্রিপুরাকে পাখির চোখ করে তাঁরা লড়াই করছেন। সেই লড়াইয়ে সাফল্যে এলেই উত্তর-পূর্বের জন্য আলাদা করে রণনীতি তৈরি করে এগোবেন তাঁরা।
তৃণমূল ত্রিপুরায় পা রাখতেই ঘুম ভেঙেছে সিপিএমের
রাজ্যসভার প্রার্থী মনোনীত হওয়ার পর বুধবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় এসেছিলেন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া নেত্রী সুস্মিতা দেব। তিনি বিধানসভায় তৃণমূলের পরিষদীয় সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ত্রিপুরায় সিপিএম বিরোধী ভূমিকা পালন করেনি। তৃণমূল ত্রিপুরায় পা রাখতেই ঘুম ভেঙেছে সিপিএমের।
বিরোধী নেতা মানিকবাবু সাড়ে তিন বছর বিশ্রামে ছিলেন
সুস্মিতা দেব বলেন, বিগত সাড়ে তিন বছরের সিপিএম কোনও আন্দোলন করেনি ত্রিপুরায়। বিশ্রাম নেওয়া বিরোধীদের কাজ নয়। বিরোধী নেতা হয়ে মানিকবাবু সাড়ে তিন বছর ধরে বিশ্রাম নিয়েছেন। যার সুযোগ নিয়ে বিজেপি একচ্ছত্র রাজ করছে ত্রিপুরায়। মানিকবাবু আগে বলুন, কদিন বিধানসভা গিয়ে বিপ্লব দেব সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। বিজেপি সরকারের কাজের সমালোচনা করেছেন।
আসলে ম্যাচ ফিক্সিং হয়েছে বিজেপি-সিপিএমের মধ্যে
সুস্মিতা দেব বলেন, ত্রিপুরা একটা ছোট রাজ্য। মাত্র ৬০টি আসন এখানে। এটা ছিক যে বিজেপির সঙ্গে সিপিএমের ভোট শতাংশের ব্যবধান খুব সামান্য ছিল। চোটো রাজ্য ত্রিপুরায় বরাবরই খুব ক্লোজড ফাইট হয়। তবে যত ক্লোজড ফাইটই হোক না কেন এই মুহূর্তে সিপিএমের কোনও ভূমিকা নেই। তৃণমূল ময়দানে নামতে বিজেপি তড়িঘড়ি সিপিএমকে সক্রিয় করার চেষ্টা করছে। আসলে ম্যাচ ফিক্সিং হয়েছে বিজেপি-সিপিএমের মধ্যে।
বিজেপি মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে ক্ষমতায়, সিপিএম মানুষের পাশে নেই
ত্রিপুরায় মানুষ পরিবর্তন চাইছেন। সাম্প্রতিক সমীক্ষা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে তৃণমূলকে বিকল্প ভাবতে শুরু করেছেন মানুষ। বিজেপির বিকল্প হিসেবে সিপিএমকে তারা আর চাইছে না। সিপিএম মানুষের পাশে থাকেনি এতদিন। আর বিজেপি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। তাদের স্বরূপ চিনে নিয়েছেন ত্রিপুরার মানুষ।
ত্রিপুরা-যুদ্ধে তৃণমূলের সুস্মিতা দেব বনাম সিপিএমের মানিক সরকার
সুস্মিতা দেব সিপিএম ও বিজেপিকে একই বন্ধনীতে রেখে আক্রমণ শানালেও, সিপিএম কিন্তু বিজেপির বিরোধিতায় তৃণমূলের পাশে দাঁড়িয়েছে। এমনকী তৃণমূলের উপর হামলার ঘটনায় প্রতিবাদী হয়েছেন সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। তবে তিনি তৃণমূলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজেপির মোকাবিলা প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলেছেন, তৃণমূল সক্রিয় হলে আমাদের কোনও সমস্যা নেই।
উত্তর-পূর্ব ভারতকে সম্মান দিয়েছেন মমতা, অঙ্ক কষছেন সুস্মিতা
এদিকে সুস্মিতা দেব সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতকে সম্মান দিয়েছেন। তার প্রতিদান তাঁর হাতে তুলে দিতে হবে। এখন শুধু ত্রিপুরাকে টার্গেট করে তাঁরা ছুটছেন। ত্রিপুরা আমারা জিতবই। আর তারপর উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য আলাদা পরিকল্পনা করে তাঁরা এগোবেন।
সিপিএমকে নিশানা করলেন বিজেপির সঙ্গে একই আসনে রেখে
মাস খানেকও হয়নি কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন সুস্মিতা দেব। যোগদানের পরই তাঁর উপর ত্রিপুরা তৃণমূলের গুরুদায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেসের মহিলা শাখার সর্বভারতীয় সভানেত্রী ছিলেন। তৃণমূলে নতুন দায়িত্ব নিয়েই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর লক্ষ্য। একদিন আগেই বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুস্মিতা বলেছিলেন, বিজেপি নেতাদের থেকে অনেক বেশি ত্রিপুরাকে চিনি আমি। এবার সিপিএমকে নিশানা করলেন বিজেপির সঙ্গে একই আসনে রেখে।
ত্রিপুরার মানুষ বিজেপির নেতাদের থেকেও বেশি সুস্মিতাকে চেনে
সন্তোষমোহন দেবের মেয়ে সুস্মিতা দেব কংগ্রেসে থাকাকালীন ত্রিপুরা-যোগ ছিল। বাবার সঙ্গে বহুবার ত্রিপুরায় এসেছেন তিনি। বাবার সূত্র ধরেই ত্রিপুরার মানুষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল বলে অকপটে জানান চিনি। তাঁর দাবি, ত্রিপুরার মানুষ বিজেপির নেতাদের থেকেও আমাকে বেশি চেনেন।
গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতই সম্মানিত হয়েছে মমতার সিদ্ধান্তে
সুস্মিতা দেব বলেন, এটা আমার গর্ব যে অসমের পাশাপাশি ত্রিপুরাতেও আমি ঘরের মেয়ে আর বাংলার ঘরের মেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে তাঁর নিজের লোক করে নিয়েছেন। উত্তর-পূর্বের এক মহিলাকে তিনি তাঁর রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তে শুধু আমি সম্মানিত নই, গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতই সম্মানিত হয়েছে।
বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়, অসম-ত্রিপুরা সুস্মিতাকে!
এহেন সুস্মিতা দেবকে তৃণমূল ট্রাম্প কার্ড করছে অসম ও ত্রিপুরায়। ত্রিপুরা রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে আরও একজন মহিলা নেত্রীকে তুলে ধরে মাস্টারস্ট্রোকটা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা নিজের মেয়েকেই চায় স্লোগান তুলে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে অসম ও ত্রিপুরায় তৃণমূল সুস্মিতাকে সামনে রাখে, সেই ফায়দা তোলার চেষ্টায়।