সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর এক বছর পরও এই চারটে প্রশ্নের উত্তর আজও অধরা
সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর এক বছর
একবছর আগে এই ১৪ জুন মুম্বইয়ের বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় সুশান্ত সিং রাজপুতের ঝুলন্ত দেহ। দেশজুড়ে এই মৃত্যু নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে, সিবিআই–ইডি–এনসিবি মিলে তদন্ত শুরু করে। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর এক বছর পরও এখনও একগুচ্ছ প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। এই মৃত্যু মামলার নেতৃত্বে অবশ্যই ছিল সুসান্তের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তী ও অভিনেতার পরিবারের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুড়ির বিষয় এবং এটা ক্রমেই রাজনৈতিক লড়াইতে পরিণত হয়েছিল। বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে এই মৃত্যুর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে রহস্য এবং নিশানা বানানো হয় মহারাষ্ট্র বিকাশ আগাদি সরকারকে, বিশেষ করে পর্যটন মন্ত্রী আদিত্য ঠাকরেকে, যিনি নাকি সুশান্তের খুনিদের আড়াল করে রেখেছেন। সুশান্তের মৃত্যুর পরও যে চারটে প্রশ্ন এখনও সাধারণ মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
পাটনাতে এফআইআর করার পরামর্শ কে দিয়েছিলেন
সুশান্ত সিং রাজপুতের বাবা কে কে সিং তাঁর ছেলের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে তাঁর নিজের আদিবাড়ি বিহারের পাটনায় গত বছরের ২৫ জুন। রিয়ার বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন অভিনেতার বাবা। তিনি এও জানিয়েছিলেন যে রিয়া তাঁর ছেলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছেন। এরপর এই কেসটি গত বছরের ৫ অগাস্ট মুম্বই পুলিশের থেকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআইয়ের হাতে চলে যায়। এটা মনে করা হচ্ছে যে মহারাষ্ট্রের এক আইপিএস অফিসার, যিনি বিহারের বাসিন্দা, তিনি সুশান্তের পরিবারের শুভাকাঙ্খী হয়ে পাটনায় এফআইআর করতে বলেন, যাতে এই তদন্ত থেকে মুম্বই পুলিশ দূরে থাকে। আসলে মুম্বই পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওই আইপিএস অফিসারের বিরুপ মনোভাব থেকেই এই ধরনের পদক্ষেপ তিনি করেছিলেন। সিবিআই এখনও সেই অফিসারের নাম প্রকাশ্যে আনেনি।
সিবিআই কেন নীরব
সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে সুশান্তের মৃত্যু রহস্য তদন্তের জন্য তিনজন আধিকারিককে পাঠানো হয়। গত বছরের অগাস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই আধিকারিকরা মুম্বইতে ছিলেন। তাঁরা অভিনেতার পরিবার, প্রাক্তন প্রেমিকা রিয়া ও অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ২০২০ সালের অক্টোবরে এইমসের চিকিৎসকরা জানিয়ে দেয় যে সুশান্ত সিং রাজপুত আত্মহত্যা করেছেন কিন্তু তাও সিবিআই তাতে শিলমোহর দেয়নি। সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে এই রিপোর্ট পেশ করার আশা করছে। খুব আশ্চর্যজনকভাবে সুশান্তের কেস নিয়ে যখন গোটা দেশ তোলপাড় তখন মহারাষ্ট্রের ডিজি সুবোধ জয়সওয়াল, যিনি এখন সিবিআই প্রধান। তিনি যদি সিবিআইয়ের তদন্তকে বৈধতা দেন তবে এটা মুম্বই পুলিশের কাজের দক্ষতাকেও শংসাপত্র দেওয়া হবে, যারা তদন্তের প্রথমেই বলেছিল যে সুশান্তের মৃত্যু আত্মহত্যা।
সুশান্তের দিদি প্রিয়াঙ্কা সিংয়ের বিরুদ্ধে মামলাটি কী হল?
সুশান্ত সিংয়ের দিদি প্রিয়াঙ্কা সিংয়ের বিরুদ্ধে গত বছরের সেপ্টেম্বরে অভিনেতার জন্য জাল ও ভুয়ো মেডিক্যাল প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসায় রিয়া চক্রবর্তী অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। প্রিয়াঙ্কা দিল্লির এক চিকিৎসক তরুণ কুমারের পরামর্শে গত বছরের এপ্রিল মাসে তাঁর ভাইকে অ্যান্টিডিপ্রেশনের ওষুধ হোয়াটসঅ্যাপ করে পাঠান। রিয়ার অভিযোগ, এই ওষুধগুলি সুশান্তের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রচণ্ড প্রভাব ফেলেছিল। ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বম্বে হাইকোর্ট প্রিয়াঙ্কার বিরুদ্ধে মামলাটি বহাল রাখে। এটি মুম্বই পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পথ সুগম করলেও এই মামলাটি কী হবে তা নিশ্চিত নয়, যদিও প্রিয়াঙ্কার স্বামী সিদ্ধার্থ তানওয়ার একজন প্রবীণ আইনজীবী।
মাদক সিন্ডিকেট কোথায়
সুশান্ত সিং রাজপুতকে মাদক দেওয়ার অভিযোগে এনসিবি গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর রিয়া চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করে। এছাড়াও মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আরও ৩৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এনসিবি দাবি করে যে বলিউড মাদকের আখড়া হয়ে গিয়েছে, যেটাকে গোড়া থেকে নির্মূল করতে হবে। দীপিকা পাড়ুকোন, শ্রদ্ধা কাপুর, অর্জুন রামপাল, সারা আলি খান ও রাকুল প্রিতের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নামও এই মাদক যোগে জড়িয়ে পড়ে এবং তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। যদিও এই মামলায় কোনও বড় চক্রকে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে এনসিবি। ছোট ছোট মাদক সরবরাহ, পাচারকারী ও মাগক সেবনদের ওপরই এনসিবি মনোযোগ দিতে থাকে। এখনও পর্যন্ত বলিউডের কোনও বড় তারকা এই মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িত আছে বলে কোনও তথ্য দিতে পারেনি এনসিবি।