কফিনবন্দি সুশান্ত ইস্যু, রাজপুতকে ভুলেই বিহারে সরগরম ভোটের ময়দান
'বিহারি বাবু' সেন্টিমেন্টকে জাগিয়ে তুলে ভোটের ময়দান কাঁপাতে চেয়েছিল বিজেপি থেকে এলজেপি। এমনকি জেডিইউ-ও সুশান্ত ইস্যুতে রাজনৈতিক লাভ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। তবে সিবিআইয়ের হাতে কেসটি গেলেও এখন আর সেই ইস্যুতে কোনও মন্তব্য করতে দেখা যাচ্ছে না কোনও রাজনৈতিক দলকে।

একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে নীতীশ
অতি-গুরুত্বপূর্ণ ২০২০ বিহার বিধানসভা ভোটের দামামা বাজতে যেখানে আর মাত্র দিন কয়েক বাকি, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার চতুর্থ বারের জন্য রাজ্য প্রশাসনকে নেতৃত্ব দেওয়ার উদ্যোগে একাধিক এবং বিপজ্জনক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে সুশান্ত সিংয়ের কেসকে পিছনের সারিতে পাঠিয়ে এনডিএ জোট এখন অন্যান্য ইস্যুতে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করাতে ব্যস্ত।

ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে জাগিয়ে তুলবেন কী করে?
মুখ্যমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন জোটের কাছে এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় হল রাজ্যের অর্থনীতির ঝিমিয়ে পড়া অবস্থা, শিল্পের দুর্দশা আর কর্মসংস্থানের অভাব। যা সমস্ত রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে আরজেডি মুখ্য নির্বাচনী ইশু করে তুলেছে। আরজেডি নেতা এবং বিহার বিধানসভায় বিরোধী দলের বর্তমান নেতা, তেজস্বীপ্রসাদ যাদব, যিনি লালুপ্রসাদ যাদবের পুত্র, নিজের সমস্ত নির্বাচনী প্রচারে বিহারের বেকারত্বের হার (৪৬.৬ শতাংশ) তুলে ধরেছেন। যা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

নীতীশের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছেন তেজস্বী
তেজস্বী নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে রাজ্যে শূন্যপদ ভরার চেষ্টা না করে রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়াতে মদত দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন এবং এবার বিরোধী জোট রাজ্য়ে ক্ষমতায় এলে ১০ লক্ষ স্থায়ী সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন। নীতীশের নিষেধ কার্যকর করার ফলে যেভাবে রাজ্যের নিজস্ব রাজস্ব কর ব্যবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবং তার ফলে রাজ্যের পর্যটন শিল্প প্রায় ধসে পড়েছে এবং বহু হোটেল বন্ধ হওয়ার ফলে হাজার হাজার রাজ্যবাসী বেকার হয়ে পড়েছেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে।

নীতীশ নিজেও বুঝেছেন বেকারত্ব ইস্যুর জ্বালা
এমনকী, নীতীশ নিজেও সম্ভবত বুঝেছেন যে , বেকারত্বের ইশু তাঁর পক্ষে আসন্ন নির্বাচনে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ ১৪ অক্টোবর ভার্চুয়াল মাধ্যমে ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দাদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, দেশের মধ্যে কোনও রাজ্য নেই এবং বিশ্বের মধ্যে এমন কোনও দেশ নেই , যেখানে প্রত্যেককে চাকরি দেওয়া সম্ভব।

মনে করা হয়েছিল, ভোটের ময়দান কাঁপাবে সুশান্ত মামলা
যদিও মনে করা হয়েছিল, নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় অ্যাজেন্ডা হতে চলেছে প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মামলা। বিহার নির্বাচনের ময়দান গরম করে সুশান্ত সিং রাজপুতের ছবি সহ ফ্লেক্স লাগিয়েছে বিজেপি। তাতে লেখা - 'আমরা ভুলিনি, আর ভুলতেও দেব না।' পাশেই পদ্মফুলের ছবি। বিহার বিজেপির সেই 'জাস্টিস ফর সুশান্ত' অ্যাজেন্ডা কাজে লাগাতে মহারাষ্ট্র থেকে দেবেন্দ্র ফড়নবিশকে পর্যবেক্ষক হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছে বিহারে।

বিহারে আরজেডি-কংগ্রেস ছাড়াও গঠিত হয়েছে আরও দুটি জোট
তবে পরিযায়ী শ্রমিক, করোনা, বেহাল অর্থনীতি, জাতপাতের সমীকরণের মাঝে হারিয়ে গিয়েছে সুশান্তের জন্য 'বিচারের ডাক।' হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলির মধ্যে বিহারেও জাত-ভিত্তিক রাজনৈতিক সমীকরণ বিশাল প্রভাব ফেলে। দলিত রাজনীতি বিহারে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি থেকেও বড় ফ্যাক্টর। এর উপর ভিত্তি করেই বিহারে আরজেডি-কংগ্রেস ছাড়াও গঠিত হয়েছে আরও দুটি জোট।

লালুর স্মৃতি বনাম নীতীশের বর্তমান
বিহারে ২০০৫ সালে নীতীশ কুমার যেবার প্রথমবার লালু প্রসাদকে হারিয়ে গদিতে বসেছিলেন, সেবার সবথেকে বড় নির্বাচনী ফ্যাক্টর ছিল রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এরপর ১৫ বছরে গঙ্গা দিয়ে গড়িয়েছে অনেক জল। এর মাঝেই এক সময়ের চির প্রতিদ্বন্দ্বী আরজেডির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন নীতীশ। পরে ফের মোদী বিরোধিতা ছেড়ে বিজেপির সঙ্গ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন নীতীশ। তবে আইনশৃঙ্খলার ইস্যুটি এখনও রয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি আগের থেকে ভালো কি খারাপ, তার বিচার না করে বিরোধীদের কাছে এটা একটি বড় হাতিয়ার।

'তুরুপের তাস' দলাই লামা, লাদাখ সীমান্ত সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি লুকিয়ে তিব্বতে