শীর্ষ আদালতের ভর্ৎসনার মুখে এএসআই, জানুন তাজমহল সংরক্ষণ নিয়ে কী বলল তারা
তাজমহল সংরক্ষণে ব্যর্থতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার মুখে আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া
বুধবার সুপ্রিম কোর্টে প্রবল ভর্ৎসনা মুখে পড়তে হল ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগকে। আদালত স্পষ্ট ভাষায় জানায় ঐতিহাসিক সৌধ তাজমহলকে রক্ষা করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া। পাশাপাশি সর্বোচ্চ আদালত ওই তাজমহলে কীটপতঙ্গের হানা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
কীটপতঙ্গের প্রভাবে তাজমহলের দেওয়ালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আদালতের তরফে এএসআই কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কীটপতঙ্গের হাত থেকে স্মৃতি সৌধটিকে বাঁচাতে তারা কি পদক্ষেপ নিয়েছে? বিচারপতি এম বি লোকুর ও দীপক গুপ্তের বেঞ্চ বলেন, 'এএসআই তাদের নিজেদের কাজ করলে এই পরিস্থিতিই তৈরি হত না। এরপরও যেভাবে এএসআই নিজেদের পিঠ বাঁচানোর চেষ্টা করছে, তা বিস্ময়কর।' এরপর কেন্দ্রের তরফে আদালতে উপস্থিত অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এএনএস নাদকার্নি-কে ওই বেঞ্চ বলে, 'এএসআই প্রয়োজন আছে কি নেই, তা আপনারাই (কেন্দ্র) বিবেচনা করুন।'
নাদকার্নি বেঞ্চকে জানান, শীর্ষ আদালত যে তাজমহলের রক্ষা এবং সংরক্ষণ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রক (এমওইএফ) সেই পরামর্শ গ্রহণের কথা ভাবছে। এসআইয়ের আইনজীবি আদালতকে বলেন পোকামাকড়ের সমস্যার মূল কারণ যমুনার নদীর স্রোতহীনতা। জমে থাকা জলেই কীটপতঙ্গ জন্মাচ্ছে।
গত ১ মে সর্বোচ্চ আদালত দূষণের কারণে তাজমহলের রঙ পরিবর্তনের বিষয়টি তুলেছিল। সরকারের কড়া সমালোচনা করে বলেছিল, 'সম্ভবত এতে আপনাদের কিছু যায় আসে না'। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, আগেই শ্বেতশুভ্র সৌধটির রঙ হলদেটে হয়ে গিয়েছিল এবং এখন তা ক্রমে বাদামী ও সবজে হয়ে যাচ্ছে। এরজন্য সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষের রক্ষণাবেক্ষণের গাফিলতিকেই দায়ি করেছিল। বলেছিল সরকারের তরফে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। সরকারকে আদালতের পরামর্শ ছিল ভারত ও বিদেশের বিশেষজ্ঞদের ডেকে তাজমহলের ক্ষতির মূল্যায়ন করতে হবে। এবং এর তারপর একে আগের অবস্থায় ফেরানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
পরিবেশবিদ এম সি মেহতা তাজমহলের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে মামলাটি দায়ের করেছিলেন। তিনি বিচারকদের তাজমহলের কিছু সাম্প্রতিক ছবিও দেখিয়েছেন। পাশাপাশি মেহতা বিচারপতিদের বেঞ্চকে জানিয়েছিলেন যে তাজমহল কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশ মতো কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। তাই এখন সৌধটির হাল আরও খারাপ হয়েছে। সাদা মার্বেল পাথরের রঙ পাল্টে যাওয়া তো ছিলই, এখন জায়গায় জায়গায় মার্বেলের গায়ে ক্ষয় দেখা দিয়েছে। কয়েকদিন আগে একটি মিনারও ভেঙে পড়েছে। বিচারপতিরা জানান, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা ভারত-ভ্রমণে এলে তাজ দেখতে যান। ফলে সেই কথা মাথায় রেখেও কর্তৃপক্ষ একে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।