নোট বাতিলের প্রক্রিয়া আদৌ বৈধ! কেন্দ্র ও আরবিআইকে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
কেন্দ্র ও আরবিআইকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
২০১৬ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার পুরনো ৫০০ টাকার নোট এবং এক হাজার টাকার নোট বাতিল করেছিল। বুধবার এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হয়। ঘটনার ছয় বছর কেটে গেলেও এর প্রভাব এখনও মানুষের ওপর পড়ছে বলে আবেদনকারীদের আইনজীবী বলেন। সরকারি নীতিগত সিদ্ধান্তের কতটা বিরুদ্ধে আদালত কতটা যেতে পারে, তার একটা লক্ষণ রেখা রয়েছে। সেই লক্ষণ রেখা মেনেই নোটবন্দি মামলার শুনানি হবে বলে সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানায়, নোটবন্দি সিদ্ধান্ত ও তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটি খতিয়ে দেখা হবে। দেশের শীর্ষ আদালত এই বিষয়ে কেন্দ্র ও আরবিআইকে বিশদে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের দাবি
বুধবার সুপ্রিম কোর্টে নোটবন্দিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ৫৮টি মামলার শুনানি ছিল। বিপক্ষের আইনজীবী জানান, নোটবন্দি হওয়ার পর প্রায় ছয় বছর কেটে গিয়েছে। সেই অর্থে এখন এই মামলার কোনও মূল্য নেই। এই মামলাটি কেতাবি হয়ে গিয়েছে। যদিও সেই দাবি আবেদনকারীদের আইনজীবী নস্যাৎ করে দেন। আবেদনকারীদের আইনজীবী বলেন, নোটবন্দির ফলাফল সদূর প্রসারী। অতীতে মানুষকে নোটবন্দির জেরে ভুগতে হয়েছে। ভবিষ্যতেও এর প্রভাব রয়েছে। দুই পক্ষের যুক্তি শোনার পরেই সুপ্রিম কোর্টের সংবিধানিক বেঞ্চ নোটবন্দির প্রক্রিয়াটি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে নোটবন্দির শুনানি
বিচারপতি এসএ নাজিরের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৯ নভেম্বর হবে বলে জানিয়েছে। এই বিষয়ে বিচারপতিরা বলেন, সংবিধানিক বেঞ্চের সামনে কোনও প্রশ্ন উঠলে তার উত্তর দেওয়া কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। বিচারপতি বিআর গাভাই, এএস বোপান্না, ভি রামাসুব্রমানিয়ান এবং বিভি নাগারথনার সমন্বয়ে গঠিত সাংবিধানিক বেঞ্চের তরফে বলা হয়েছে, আমরা জানি সরকারি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধ কতটা যাওয়া যায়। তার একটা লক্ষণ রেখা রয়েছে। সেই লক্ষণ রেখা মেনেই সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার শুনানি করবে।
আবেদনকারীদের দাবি
বিমুদ্রাকরণের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে একাধিক প্রশ্ন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কেন্দ্র সরকারের নোটবন্দির সিদ্ধান্ত সংবিধানের ৩০০এ ধারা লঙ্ঘিত হচ্ছে। এই ধারা অনুযায়ী আইনি পদ্ধতি ছাড়া কোনওভাবেই কোনও ব্যক্তিকে তাঁর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। প্রবীণ আইনজীবী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদাম্বরম বলেন, নোটবন্দি সম্পর্কিত গবেষণা সহ তথ্য আরবিআই থেকে আসা উচিৎ ছিল। তারপর তা সরকারের বিবেচনা করার কথা। এখানে সম্পূর্ণ বিষয়টি বিপরীত ছিল বলে পি চিদাম্বরম অভিযোগ করেন সুপ্রিম কোর্টে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না পাওয়া গেলে দেশের ভবিষ্যৎও প্রভাবিত হবে। এরপরেই সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়।
ছয় বছর আগে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত
২০১৬ সালের নভেম্বরে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে নোট বন্দির ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কয়েক ঘণ্টার নোটিশে তিনি পুরনো ৫০০টাকার নোট ও এক হাজার টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা করেন। এরপরেই দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। বাতিল নোটের বিনিময়ে নতুন নোট নেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন পড়ে যায়। মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনায় সরব হয় বিরোধী দলগুলো।