নির্বাচনের আগে রাফালে কাঁটায় আটকে মোদী সরকার, সুপ্রিম কোর্ট জারি করল নয়া নির্দেশিকা
রাফালে চুক্তি-র মূল্য এবং কৌশল তথ্য জমা করতে হবে সুপ্রিম কোর্টে। এই মর্মে নতুন করে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত। ১০ দিনের মধ্যে এই তথ্যগুলি জমা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাফালে চুক্তি-র মূল্য এবং কৌশল তথ্য জমা করতে হবে সুপ্রিম কোর্টে। এই মর্মে নতুন করে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত। ১০ দিনের মধ্যে এই তথ্যগুলি জমা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সন্দেহ নেই এই নয়া নির্দেশিকায় মোদী সরকারের অস্বস্তি আরও বাড়ল। ১৪ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টে রাফালে মামলায় যে নির্দেশ দিয়েছে তাতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, এই চুক্তি কী ভাবে বাস্তবায়িত হল তার প্রতিটি পদক্ষেপ আদালতে জমা করতে হবে। এই সম্পর্কিত যে যে প্রামাণ্য নথি আছে তাও জমা করতে বলা হয়েছে। রাফালে চুক্তি বিতর্ক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছিল। বুধবার প্রধানবিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বে তিন বিচারপতি-র বেঞ্চে চারটি মামলা নিয়ে শুনানি হয়। আর সেখানে শীর্ষ আদালত পরিষ্কার করে মোদী সরকারকে জানিয়ে দেয়, তথ্যের মধ্যে রাফালের ক্রয়মূল্য যেমন রাখতে হবে, তেমনি এই চুক্তি বাস্তবায়িত হওয়ার পদক্ষেপ ও কী ভাবে অফসোর-পার্টনার ঠিক করা হয়েছে তারও উল্লেখ করতে হবে।
রাফালে চুক্তি বিতর্ক মামলায় অন্যতম আবেদনকারী প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অরুণ শৌরিও রয়েছেন। তিনি আদালত থেকে বেরিয়ে জানান, এই মামলায় এদিন অতি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ জারি করেছে শীর্ষ আদালত। তিনি আরও জানিয়ে বলেছেন, এদিন শুনানি শুরু হতেই শীর্ষ আদালতের প্রধানবিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, রাফালের যুদ্ধ বিমানের ক্রয়মূল্য থেকে শুরু করে এই চুক্তি কার্যকর হওয়ার পদক্ষেপ এবং কীভাবে অফসেট-পার্টনার ঠিক করা হয়েছে, মানে রাফালে যুদ্ধবিমান তৈরির বরাত ডাসল্ট ও রিলায়েন্স কীভাবে পেল তারও উল্লেখ থাকতে হবে। অরুণ শৌরি জানান, এই সমস্ত তথ্য শুধু আদালতের সঙ্গেই নয় যারা এই মামলাগুলি করেছেন তাদেরকেও সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু, দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়ে দেন এতে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে যা আদালতেও জমা করা সম্ভব নয়। সেখানে মামলাকারীদের তা কীভাবে জানানো যাবে! অরুণ শৌরি জানান, এতে আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে পরিষ্কার জানিয়েছে, সমস্ত তথ্যই মুখবন্ধ খামে দিতে হবে। এতেও যদি আপত্তি থাকে তাহলে সরকারকে এফি়ডেবিট দাখিল করে হলফনামা দিতে হবে। সেখানে শীর্ষ আদালতকে জানাতে হবে কেন তথ্যগুলি দেওয়া সম্ভব নয়।
মামলাকারী অরুণ শৌরির মতে, এই এফিডেবিট জমা করা নিয়ে মোদী সরকার বিপাকে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাঁর মতে, ৩৬টি রাফালে যুদ্ধবিমানের দাম নিয়ে একেক সময় একেক তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারির্কর জানিয়েছেন, ৯০ হাজার টাকা ফরাসী সরকারকে দিতে হয়েছে। কিন্তু, সংসদের মধ্যেই আবার মোদী সরকার জানিয়েছিল ৬৫৭ কোটির চুক্তি। অরুণ শৌরির আরও দাবি, অথচ, রিলায়েন্স-এর বার্ষিক অডিট রিপোর্টে ৬০ হাজার টাকা মূল্যের চুক্তি বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অরুণ শৌরির মতে তাহলে সত্য কোন তথ্য?
রাফালে নিয়ে অন্যতম মামলাকারী হিসাবে আছেন সমাজকর্মী তথা আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। তিনি জানান, ১০ দিনের মধ্যে মুখবন্ধ খামে সমস্ত তথ্য জমা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকী, সরকার যদি এই তথ্য জমাতে সরকারে আপত্তি থাকে তাও এফি-ডেবিটের মাধ্যমে আদালতকে জানাতে হবে। এর আগে রাফেল চুক্তি নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন প্রশান্ত ভূষণ। কিন্তু, সেই মামলার শুনানিতে শীর্ষ আদালত অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু, এরপরও প্রশান্ত ভূষণ ফের সিবিআই তদন্তের দাবিতে ফের আবেদন করেছিলেন শীর্ষ আদালত।
এদিন সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই খুশি মোদী বিরোধীরা। এঁদের অনেকেরই দাবি, রাফালে চুক্তি নিয়ে এবার নাগ-পাশে আটকাতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এতদিন কেন্দ্র প্রচুর মিথ্যা বয়ান দিয়েছিল বলে দাবি করেছেন মামলাকারীদের আইনজীবীরা।