কটক আদালতে সিবিআইয়ের জোর সওয়াল, রোজভ্যালিকাণ্ডে আরও বিপাকে সুদীপ
কটক আদালতে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিনের বিরোধিতা করে জোর সওয়াল করলেন সিবিআই-এর আইনজীবীরা। ফলে রোজভ্যালিকাণ্ডে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় পড়ে গেলেন আরও বিপাকে।
ওড়িশা আদালতে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিনের বিরোধিতা করে জোর সওয়াল করলেন সিবিআই-এর আইনজীবীরা। ফলে রোজভ্যালিকাণ্ডে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় পড়ে গেলেন আরও বিপাকে। প্রভাবশালী তত্ত্ব খাড়া করেই সুদীপের জামিনের বিরোধিতায় জোর সওয়াল করেন সিবিআইয়ের বিশেষ আইনজীবী।
দিল্লি থেকে উড়িয়ে আনা সিবিআই-এর বিশেষ আইনজীবী সুদীপ অসুস্থতার ভান করছেন বলে দাবি করে জামিনের আর্জির বিরোধিতা করেন। অন্যদিকে নিজের হাতে সুদীপ যে টাকা নিয়েছিলেন রোজভ্যালি কর্ণধারের কাছ থেকে এবং তা ঘুরে যে তৃণমূলের পার্টি ফান্ডেই গিয়েছিল- সেই তথ্যও প্রকাশ করেন তিনি।
রোজভ্যালি কাণ্ডে চার্জশিট পেশ হওয়ার পর কটকের আদালতে প্রথম উঠল সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিন মামলা। এই মামলায় তৃণমূলের লোকসভা দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তার অসুস্থতার কারণ দর্শিয়ে জামিনের আর্জি জানান। এই জামিনের শুনানিতে সিবিআই আইনজীবীর এদিন সওয়াল করার কথা ছিল। সেই মতো দিল্লি থেকে উড়ে এসেছিলেন বিশেষ আইনজীবী। তিনি যে এই সওয়ালের জন্য রীতিমতো প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলেন, তার নমুনা এদিন তুলে ধরলেন আদালতে।
সুদীপের প্রভাবশালী তত্ত্ব খাড়া করে সিবিআই-এর আইনজীবী বলেন, ছেলের ভর্তির জন্য সেন্ট জেভিয়ার্সে এক কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিলেন রোজভ্যালি কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু। সেই টাকা তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ঘুরেই গিয়েছিল সেন্ট জেভিয়ার্সে। আইনজীবীর দাবি, সেই টাকা পরে ঘুরে গিয়েছিল তৃণমূলের পার্টি ফান্ডেই।
এহেন প্রভাবশালী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে যদি জামিন দেওয়া হয়, তবে তদন্তে প্রভাব পড়তে পারে। তারপর রোজভ্যালিকাণ্ডে ধৃত সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জামিনের জন্য যে কারণ দেখাচ্ছেন, তাঁর সেই অসুস্থতা বহুলাংশেই বাহানা। তিনি যতটা অসুস্থ বলে দাবি করা হচ্ছে, তিনি আদৌ ততটা অসুস্থ নন। কারণ তিনি ভুবনেশ্বরের অ্যাপোলো হাসপাতালে এমন কোনও চিকিৎসা করাননি, যাতে প্রমাণ হয় তিনি সাংঘাতিক অসুস্থ। আসলে তিনি অসুস্থতার ভান করে পড়ে রয়েছেন হাসপাতালে।
তাই তাঁর জামিনের তীব্র বিরোধিতা করেন সিবিআই-এর আইনজীবীরা। তাঁরা আদালতের কাছে আর্জি জানান, রোজভ্যালি কাণ্ডের তদন্তের স্বার্থেই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রভাবশালীর জেল হেফাজতে থাকা জরুরি। তিনি জামিন পেলে এই তদন্ত চালানো সমস্যা হবে। প্রভাবশালী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিন তদন্তে প্রভাব ফেলতে বাধ্য। তারপর তদন্তের অগ্রগতিও থমকে যাবে।
এর আগে দু'বার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় ওড়িশার আদালত। প্রভাবশালী তত্ত্বেই জামিনের বিরোধিতা করে সাফল্য পায় সিবিআই। এদিন ফের সিবিআই আইনজীবীরা একই পথে হাঁটলেন। তিনি কতটা প্রভাবশালী, আর তাঁর অসুস্থতার তত্ত্ব যে সঠিক নয়, তা প্রমাণে নথিও দাখিল করলেন।
দু'পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে বিচারপতি সুদীপের জামিনের আবেদনের শুনানি চলবে কিনা তার রায়দান স্থগিত রেখেছেন। প্রথমে শোনা গিয়েছিল, আজ সোমবার বিকেলেই রায় দিতে পারে আদালত। তবে শেষপর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে এই জামিন শুনানির রায়দান হতে পারে।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় যে বিশাল প্রভাবশালী তার প্রমাণ স্বরূপ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখা করতে যাওয়া, তাঁর হয়ে জামিনের সওয়াল করা, মুখ্যমন্ত্রীর সেই দাবিও তুলে ধরা হয়। উল্লেখ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এবং তাঁর জামিনের আর্জি জানান।
উল্লেখ্য, গত ৩ জানুয়ারি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হয়েছিলেন রোজভ্যালিকাণ্ডে। তাঁর বয়ানে অসঙ্গতি ধরা পড়ায় সিবিআই নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে চেয়ে গ্রেফতার করে তৃণমূল সাংসদকে। তারপর চার মাস অতিবাহিত, এখনও জামিন মেলেনি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের।