মানের দিক দিয়ে বিদেশি স্টেন্টের সমগোত্রীয় ভারতীয় স্টেন্ট! দাবি এক গবেষণায়
লক্ষ-লক্ষ ভারতবাসীর বুকে বল জোগাতে পারে এই গবেষণা। কারণ, এই গবেষণায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ভারতে তৈরি মেডিক্যাল স্টেন্টের মান বিদেশি স্টেন্টের সমান। 'ক্লিনিক্যাল আউটকাম'-এ এদের কোনও ফারাক নেই।
লক্ষ-লক্ষ ভারতবাসীর বুকে বল জোগাতে পারে এই গবেষণা। কারণ, এই গবেষণায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ভারতে তৈরি মেডিক্যাল স্টেন্টের মান বিদেশি স্টেন্টের সমান। 'ক্লিনিক্যাল আউটকাম'-এ এদের কোনও ফারাক নেই।
প্রতিমুহূর্তেই বিশ্বজুড়ে লাফিয় লাফিয়ে বাড়ছে হৃদরোগে আক্রান্তদের সংখ্যা। মূলত হৃদরোগের চিকিৎসাতেই এই স্টেন্ট কাজে লাগে। ফলে, চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহৃত স্টেন্ট অপরিহার্য। হৃদরোগে আক্রান্তদের অধিকাংশ-কে প্রথমে স্টেন্ট প্রতিস্থাপন করে সুস্থ করে তোলা হয়। কিন্তু, এই স্টেন্টের দাম নিয়ে বহুদিন ধরেই নানা অভিযোগ হয়েছে। কারণ, অভিযোগ ছিল এই স্টেন্ট-এর দাম যতটা হওয়া দরকার কার্যক্ষেত্রে তার থেকে অনেক বেশি অর্থ দিতে হয়।
২০১৭ সালে ভারত সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সরকার স্টেন্টের দাম নির্ধারণে হস্তক্ষেপ করে। ভারতীয় বাজারে স্টেন্টের দাম এর ফলে ৭৫ % কমাতে বাধ্য হয় সংস্থাগুলি। কিন্তু, এই দাম কমানোর বিরুদ্ধে ফোঁস করে ওঠে বিদেশি সংস্থাগুলি। তাদের দাবি, ভারতে তৈরি স্টেন্টের থেকে তাদের তৈরি স্টেন্টের মান অনেক গুণ ভালো। তাই বিদেশি স্টেন্টের দাম কমানো চলবে না। যদিও, সেই ওজর-আপত্তি খুব একটা ধোপে টেকেনি। বিদেশি সংস্থাগুলিও স্টেন্টের দাম কমাতে বাধ্য হয়। আম ভারতীয় নাগরিকদের ধারনা যে দেশে তৈরি স্টেন্ট-এর মান ভালো নয়। ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষ বিদেশি স্টেন্টে ভরসা পোষণ করেন। তবে, জার্মানির একটি গবেষণা এবার এই ধারনাকে বদলে দিতে পারে।
জার্মানিতে গবেষণা
জার্মানিতে বেশকিছু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ১০ বছর ধরেই স্টেন্ট বসানো রোগীদের নিয়ে একটি গবেষণা চালাচ্ছিল। এই গবেষণায় মূলত এমন রোগীদের নেওয়া হয়েছিল যাদের হৃদযন্ত্রে হয় আমেরিকান অথবা ভারতীয় স্টেন্ট প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। মোট ২,৬০৩ জন রোগীকে নিয়ে এই পরীক্ষা চলে। খতিয়ে দেখা হয় আমেরিকান ও ভারতীয় স্টেন্টের মান।
গবেষণায় চমকদার ফল
জার্মান বিশেষজ্ঞরা জানান গবেষণায় দেখা গিয়েছে ভারতীয় স্টেন্টের মান আমেরিকান স্টেন্টের কাছাকাছি। এদের ক্লিনিক্যাল আউট-কামেও কোনও ফারাক নেই। ভারতে তৈরি ইউকোন চয়েস পিসি এবং আমেরিকার অ্য়াবোট সংস্থার তৈরি জিয়েনসে স্টেন্ট নিয়ে এই পরীক্ষা চলেছিল। এমনকী, মাস দুয়েক আগেও আরও একটি ভারতীয় স্টেন্ট নিয়ে পরীক্ষা চালায় এই জার্মান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা। সুপ্রা ফ্লেক্স নামে এই স্টেন্টটি-র মানও আমেরিকার জিয়েনসে স্টেন্টের সমগোত্রীয় বলে গবেষণায় নাকি প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৮-র ১১ নভেম্বর চিকাগো শহরে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর সম্মেলন হয়। সেখানেও এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
উচ্ছ্বসিত ভারতীয় চিকিৎসক মহল
জার্মানির এই গবেষণা স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় চিকিৎসক মহলকে আশাবাদী করে তুলেছে। ভারতীয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থাগুলির-ও এমন গবেষণায় মনোনিবেশ করা উচিত। এরফলে আন্তর্জাতিক স্তরে চিকিৎসাক্ষেত্রে ভারতীয় প্রোডাক্ট নিয়ে আস্থা বৃদ্ধি পাবে। এই মুহূর্তে আরও অত্যাধুনিক স্টেন্ট বানানোর একটা চেষ্টা চলছে। স্টেন্ট-কে যাতে আরও পাতলা করা যায় তার জন্য নানা ধরনের কর্মকাণ্ডও চলছে। স্টেন্টে পলিমার কোটিং ব্যবহার করা যায় কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেইসঙ্গে নজর রাখা হয়েছে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার উপরেও। বায়োডিগ্রেবল কোনও জিনিস এক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে কি না তা নিয়েও ভাবনা হচ্ছে।