হাইকোর্টের নির্দেশের জের, হিজাব পরে কর্নাটকের স্কুলে ঢুকতে বাধা পেল পড়ুয়ারা
হাইকোর্টের নির্দেশের জের, হিজাব পরে কর্নাটকের স্কুলে ঢুকতে বাধা পেল পড়ুয়ারা
কর্নাটকের কিছু স্কুলে পড়ুয়াদের হিজাব খুলে স্কুলে ঢোকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দু’দিন আগেই হাইকোর্টের পক্ষ থেকে অন্তর্বতী আদেশে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পুনরায় খোলার নির্দেশ দেওয়া হয় তবে সেক্ষেত্রে স্কুল বা কলেজ চত্ত্বরে ধর্মীয় পোশাক পরে আসা যাবে না। হাইকোর্টের সেই নির্দেশকে মান্যতা দিয়েই স্কুলগুলি পড়ুয়াদের হিজাব খুলে স্কুলে ঢুকতে বলার নির্দেশ দিয়েছে।
হিজাব পরিহিতা ছাত্রীদের স্কুলে ঢুকতে বাধা
সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে যে একজন শিক্ষিকা হিজাব পরিহিতা পড়ুয়াদের মাণ্ড জেলার এক সরকারি স্কুলে ঢুকতে বাধা দিচ্ছেন এবং তাদের আদেশ করছেন তিনি এই হিজাব খুলে ফেলার। ভিডিওতে এও দেখা গিয়েছে যে পড়ুয়াদের স্কুলে ঢুকতে বাধা দেওয়ার জন্য কিছু অভিভাবককে এই নিয়ে তর্ক করতেও দেখা যায়। উত্তপ্ত কথোপকথনের পর ছাত্রীরা হিজাব খুলে (শুধু মুখের মাস্ক পরে) স্কুলের ভেতর প্রবেশ করে। দুই ছাত্রীর বাবা হিজাব পরা নিয়ে শিক্ষিকার সঙ্গে অনেকক্ষণ ঝামেলা করলেও পরে তাঁকে স্কুলের নিয়মের আগে নত হতে হয় এবং তাঁর দুই মেয়ে হিজাব খুলে স্কুলের ভেতর ঢোকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পড়ুয়াদের অভিভাবক এএনআইকে বলেন, 'শিক্ষিকাকে অনুরোধ করি ছাত্রীদের হিজাব পরেই ক্লাসরুমে ঢুকতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক, তারপর খুলে দেবে তারা, কিন্তু স্কুলের পক্ষ থেকে তা করতে দেওয়া হয়নি।' প্রসঙ্গত, ডিসেম্বরে উডুপি জেলার এক সরকার পরিচালিত স্কুলে নবম শ্রেণীর পড়ুয়াদের হিজাব পরে ক্লাসরুমে ঢুকতে দেওয়া হয় না এবং হিজাব খোলার পরই তাদের স্কুলে ঢোকার অনুমতি মেলে।
১৩ জন পড়ুয়াকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়
অন্যদিকে, শিবামোগ্গায় ১৩ জন পড়ুয়া, যার মধ্যে দশম শ্রেণীর দশজন, নবম শ্রেণীর ২ জন ও অষ্টম শ্রেণীর একজন পড়ুয়া হিজাব খুলতে অস্বীকার করায় তাদের স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয় না এবং বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। স্কুলের অধ্যক্ষ সাংবাদিকদের বলেছেন, 'তারা (পড়ুয়া ও অভিভাবক) বোরখা নিয়ে নয়, শুধু হিজাব নিয়ে প্রতিবাদ করছিল। আমরা হিজাব খুলে আসতে বলেছিলাম। আমরা তাঁদের রাজি করানোর চেষ্টা করি কিন্তু তাঁরা আমাদের অনুরোধ শোনেনি। তাই আমরা তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিই।' অন্যদিকে অভিভাবকরা বলেন, 'আমরা আমাদের সন্তানদের পরীক্ষা দেওয়ানোর জন্য নিয়ে এসেছি, তারা বোরখা নয়, হিজাব পরেছিল। এর আগে সব পড়ুয়ারা হিজাব পরত, তখন কোনও সমস্যা হয়নি। আজকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা পড়ুয়াদের বাধা দিচ্ছে। আমরা তাদের হিজাব খুলে ফেলতে বলতে পারি না। তাই তাদের নিয়ে বাড়িতে চলে যাই।'
পরীক্ষা দিতে পারেনি সাতজন পড়ুয়া
এ প্রসঙ্গে কর্নাটকের মন্ত্রী নারায়ণ গোডা, যিনি এই জেলার দায়িত্বে রয়েছেন, তিনি সাংবাদিকদেক জানিয়েছেন যে হিজাব খোলার জন্য চাপ দেওয়ায় সাতজন পড়ুয়া পরীক্ষায় বসতে অস্বীকার করে। তিনি বলেন, 'সাতজন পড়ুয়া হিজাব পরে পরীক্ষায় বসতে চেয়েছিল কিন্তু আধিকারিকরা অনুমতি দেননি। তারা এটা পরে থাকার জন্য জোর দিচ্ছিল। এরপর তাদের অবিভাবকদের ডাকা হয় এবং সাতজনই পরীক্ষা হল ছেড়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয়।'
সোমবার থেকে খুলে গিয়েছে স্কুল
সোমবার থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত কর্নাটকের সব স্কুল পুনরায় খুলে যায়। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় পোশাক পরে আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি। হিজাব পরা নিয়ে কর্নাটকের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে। বুধবার পর্যন্ত একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী বন্ধ থাকবে। গত সপ্তাহেই আদালত জানিয়েছিল যে স্কুল ও কলেজ পুনরায় খুলতে পারে রাজ্যের তবে সেখানে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে, তবে সেখানে হিজাব সহ কোনও ধর্মীয় পোশাক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরে আসার অনুমতি নেই।