দেশব্যাপী একটানা লকডাউনের জের, শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত পথশিশুরা
দেশব্যাপী একটানা লকডাউনের জের, শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত পথশিশুরা
সম্প্রতি ইউটিউবে 'সারভাইভিং দ্য স্ট্রিটস' নামক একটি খবরের সিরিজে উঠে এসেছে তিনসপ্তাহব্যাপী লকডাউনে পথশিশুদের দুরবস্থা।সারাই কালে খান এলাকা থেকে শম্ভু রিপোর্ট করেন যে পথশিশুরা জানিয়েছে যে তারা চারিদিকে 'শুধু অন্ধকার' দেখছে, অর্থাৎ অধিকাংশ শিশুর ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক করোনা মহামারির ব্যাপকতাকে বুঝতে সক্ষম নয়। উত্তর-পূর্ব দিল্লি থেকে শান্নুর রিপোর্টে উঠে এসেছে যে পথশিশুরা ক্রমশ ভরসা হারাচ্ছে, ইচ্ছাশক্তি কমছে তাদের।
মিড ডে মিলের উপর নির্ভর করাও সম্ভব হচ্ছে না
এই সিরিজেই উঠে এসেছে যে, সরকারি স্কুল চলাকালীন পথশিশুরা মিড-ডে-মিলের উপর নির্ভর করতে পারলেও এখন তা সম্ভব নয়, ফলে শুধু জল পান করেই দিন কাটাচ্ছে তারা। শম্ভুর রিপোর্টে একটি শিশুকে বলতে দেখা যায়, "বাড়ি নেই, টাকা নেই, খাবার নেই। মনে হয় হেঁটেই কোথাও চলে যাই।"
এই ধরণের সিরিজ ভারতে প্রথম
এরকম সিরিজ ভারতে এই প্রথম। প্রথম থেকে সিরিজটি দেখলে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে শিশুদের মধ্যে ধীরে ধীরে আশার আলো ফুরিয়ে আসছে। প্রতিদিন পথেঘাটে মানুষের কাছ থেকে রোজগার করে যাদের পেট চলে, দেশব্যাপী লকডাউনে স্বাভাবিকভাবেই তাদের মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি সমানভাবে হচ্ছে।
মানসিক ভাবে ক্রমেই ভেঙে পড়ে অগুনতি পথশিশু
লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে পশ্চিম দিল্লির পথশিশুরা নিজেদের ২৪ঘন্টার জেলবন্দি মনে করছে। অপর একটি অংশে দেখা যায় একটি শিশুরা বলছে, "আর মাত্র ৬-৭ দিনের খাবার আছে, তারপর কি হবে জানি না। দুধও প্রায় নেই। তাই এখন ভাইবোনদের সাথে খেলে সময় কাটাচ্ছি যাতে খাওয়ার কথা মনে না থাকে।"
আগ্রার রিপোর্টেও একই চিত্র
লকডাউনের তৃতীয় দিনে আগ্রা থেকে অপর একটি রিপোর্টে উঠে আসে বস্তিগুলির দুর্বিষহ অবস্থার কথা। ঘরবন্দি হওয়ার ফলে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা। খোলা বাতাসের অভাব, বাড়ি থেকে না বেরোনোর চারিদিকে জমা জঞ্জাল-ইত্যাদি মিলিয়ে শিশুরা বিপাকে।
সাংবাদিকের আত্মিকযোগ যখন পথশিশুদের সঙ্গে
এই সিরিজে প্রত্যহ পাঁচজন রিপোর্টারের তথ্যে ফুটে উঠছে কিভাবে লকডাউনে মানসিক-শারীরিক ব্যাধির শিকার হচ্ছে পথশিশুরা। উক্ত পাঁচজনের কেউ কেউ পথশিশুদের দ্বারা পরিচালিত সংবাদপত্র 'বালকনামা'-য় কর্মরত। লকডাউনের জেরে অনলাইন মাধ্যমেই কাজ করছেন এনারা। আসলে উক্ত পাঁচজন অর্থাৎ, পশ্চিম দিল্লির বিজয় কুমার,উত্তর-পূর্ব দিল্লির শান্নু, সারাই কালে খানের শম্ভু, আগ্রার পুনম ও লখনৌনিবাসী সুমিত - প্রত্যেকেই বড় হয়েছেন বস্তিতে এবং এখনও তাঁরা এমন পরিবেশেই বসবাস করেন, ফলে পথশিশুদের সঙ্গে তাঁদের আত্মিক যোগাযোগ তৈরি হয়েছে।
একটি সাক্ষাৎকারে সারাই কালে খাননিবাসী শম্ভু জানান, "কাগজকুড়ানি হিসেবে যেসকল শিশু চারিদিকে ঘুরে বেড়ায়, তাদের এখন গৃহবন্দি করা হয়েছে। ফলে গৃহ-হিংসা প্রত্যক্ষ করা থেকে হিংসার শিকার হওয়া,সব কিছুই অতিষ্ঠ করে তুলছে এইসব ক্ষুদ্র প্রাণকে।"
আসুন, আপনিও পথশিশুদের পাশে দাঁড়ান
'চেতনা' নামে একটি শিশুদের অধিকার রক্ষাকারী সংস্থার অধিকর্তা সঞ্জয় গুপ্তার মতে, টানা লকডাউন পথশিশুদের অপরাধপ্রবণ করে তুলতে পারে। সরকারি সাহায্য না পাওয়ায় সমাজ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন এই শিশুরা। তিনি আরও জানিয়েছেন, "এইসকল শিশুকে লকডাউনের আওতা থেকে বের করা সম্ভব না হলেও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি একযোগে এগিয়ে এলে আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের ভরসা জোগাতে পারি। যেহেতু, ফোন, ইন্টারনেটের মত জিনিস তাদের কাছে বিলাসিতা মাত্র, সেহেতু সকল নাগরিকের কাছে আমার আবেদন যদি আপনারা দিল্লির এই ২লক্ষ পথশিশুর দৈনিক খাবারের দায়িত্ব নেন এবং সরাসরি না হলেও অন্তত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির সাহায্যে ফোন মারফত তাদের পাশে দাঁড়ান।"