শাহরুখ-সলমান নয়, ভরা বর্ষায় এঁরাই মুম্বইয়ের আসলি হিরো
দায়িত্ব পালনের জন্য এই মানুষগুলি মুম্বইয়ের ভরা বর্ষায় জলে থইথই শহরে চরম আবহাওয়ায় সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যান। তাদের কাহিনীই এখানে বর্ণিত হল।
মুম্বইয়ের বৃষ্টি মানেই বিপর্যয়, দুর্ভোগের একশেষ। বৃষ্টি মানেই গোটা শহর জল থই থই, আর তার মধ্যে প্রত্যেক পদে পদে লুকিয়ে থাকে বিপদের সম্ভাবনা। এবছরও বহু মানুষ বৃষ্টির কারণে মারা গিয়েছেন মুম্বইয়ে। তাই সচরাচর কেউ মিম্বইয়ের বৃষ্টিতে বাড়ির বাইরে বের হতে চান না। কিন্তু এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা কেবল দুর্যোগের দিনগুলোতে বাড়ির বাইরে বের হন তাই নয়, প্রকৃত নায়কের মতো স্বার্থহীনভাবে সাহায্য করে চলেন অপর মানুষকে। এবছরও মুম্বইতে ভরা বর্ষায় এরকমই কিছু মুখ চোখে পড়েছে।
ছাতা নেই, নেই বর্ষাতি - নেই কর্তব্যে গাফিলতিও
এবছর বর্ষায় মুম্বইয়ে ভারি বৃষ্টির মধ্যে ছাতা বা বর্ষাতি ছাড়াই এক ট্রাফিক পুলিশের যান নিয়ন্ত্রণের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ঘটনাটি গত ৪ জুনের। পূর্ব কান্দাভালির ওয়েস্টার্ণ এক্সপ্রেস হাইওয়ের কাছে আকুর্লি রোডে যান নিয়ন্ত্রণ করছিলেন ৪৭ বছরের নন্দকুমার ইঙ্গলে। তখনও সেভাবে বর্ষা নামেনি মুম্বইয়ে। তাই সঙ্গে ছাতা, বর্ষাতি কিছু ছিল না তাঁর। হঠাত ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে। তারমধ্যে ভিজে ভিজেই প্রায় আড়াই ঘন্টার উপর তিনি কাজ চালিয়ে যান।
খোলা ম্যানহোল নিয়ে সতর্ক করলেন যিনি
প্রতি বছরই মুম্বইতে জলে ডোবা রাস্তায় ম্যানহোল বা গর্তের কারণে বহু মানুষ হতাহত হন। এবছরও এরকম সংখ্যা কম নেই। কিন্তু ৭ জুন তারিখে মাতুঙ্গার কাছে এরকম একটি খোলা ম্যানহোল দেখতে পেয়ে দাঁড়িয়ে যান বছর ৩৪-এর রবি প্যাটেল। তিনি প্রথমে পুর কর্মীদের খবর দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাতে কাজের কাজ হয়নি। এরপর তিনি খানিকক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়েই বাকি পথচারীদের সাবধান করেন। তারপর একটি বাঁশের রঞ্চিতে লাল কাপড় লাগিয়ে সেখানে বিপদসঙ্কেত রেখে চলে যান। একটু পরে ফিরে আসেন তাঁর সহকর্মী এক মালি ও এক দারোয়ানকে নিয়ে। তিনজনে মিলে গাঁইতি দিয়ে ম্যানহোলের ঢাকনাটি সঠিক জায়গায় বসিয়ে দেন।
স্বার্থহীন স্কুলভ্যান চালক
ঘটনাটি মর্মান্তিক। গত ২৫ জুন তারিখে অতি ভারি বৃষ্টি শুরু হওয়ায় মুম্বইয়ের বিভিন্ন স্কুলে তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। ভিরারের এক স্কুল থেকে স্কুলশিশুদের নিয়ে ৪০ বছরের প্রকাশ বালু পাতিল যাত্রা শুরু করেছিলেন। স্কুল ছাত্রদের আনা-নেওয়া করার ব্যাবসায় তিনি নতুনই ছিলেন। নারাঙ্গি গ্রামের কাছে একটি নালায় পড়ে ভ্য়ানটি উল্টে যায়। তিনি দেখেছিলেন দুটি শিশু জমা জলে প্রায় ডুবতে বসেছে। একমুহুর্ত অপেক্ষা না করে তিনি সেই জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের উদ্ধার করেন। কিন্তু স্রোতের টানে তলিয়ে যান নিজে। পরে দমকল কর্মীরা তাঁর দেহ উদ্ধার করে।
|
মুম্বই ট্রাফিক পুলিশ
জেএসডব্লু চেয়ারম্যান সজ্জন জিন্দল ও মহিলা কংগ্রেস কমিটির সেক্রেটারি শিল্পা বোরখে সহ অনেকেই মুম্বই পুলিশ ও মুম্বই ট্রাফিক পুলিশকে এই চরম আবহাওয়ার মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাহবা দিয়েছেন।
|
লোকাল ট্রেনের চালক
বৃষ্টিতে মুম্বইয়ের অনেক জায়গাতেই অনেক সময় লোকাল ট্রেন পরি।েবা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কুরলা থেকে দাদারের পথে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত রেলপথ ধরেও যাত্রীদের নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছিলেন এক ট্রেন চালক। এক য়াত্রীর মোবাইল ক্যামেরায় বন্দী হয়েছে তাঁর সেই কীর্তি।
|
মুম্বইয়ের পুরকর্মীরা
মুম্বইয়ে জল জমা ও রাস্তায় গর্ত তৈরি সমস্যা সহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বৃহন্মুম্বই পুরসভাকে। কিন্তু সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন মুম্বইয়ের পুরকর্মীদের আত্মত্যাগ ও কর্মনিষ্ঠার। বর্ষার কঠিনতম আবহাওয়াতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যান তাঁরা। ফিটনেস বিশেষজ্ঞ রুজুতা দিবেকরের মতো অনেকেই এই পুরকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।