শ্মশানে বাড়ছে কোভিডে মৃতের সংখ্যা, চাপে পড়ে বিকল্প বন্দোবস্ত গুজরাত সরকারের
শ্মশানে বাড়ছে কোভিডে মৃতের সংখ্যা, চাপে পড়ে বিকল্প বন্দোবস্ত গুজরাত সরকারের
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার পাশাপাশি দেশে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। যার জীবন্ত সাক্ষী বহন করছে বিবিন্ন রাজ্যের শ্মশানঘাট ও কবরস্থানগুলি। গুজরাতের সুরাতের ডায়মন্ড সিটির পাশের শ্মশানের চিতাগুলি ক্রমাগত জ্বলছে এবং আরও করোনার দেহ পোড়ার জন্য অপেক্ষা করছে লাইনে। মৃতদেহের অতিরিক্ত ভিড় সামলানোর জন্য শ্মশানগুলি তাদের পরিসীমা বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও শনিবার রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করে বলা হয়েছে যে সুরাতে মাত্র ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়।
শনিবার কোভিডে মৃত্যু ৪৯ জনের
রাজ্য সরকারের বুলেটিন অনুযায়ী, গোটা রাজ্য জুড়ে সর্বোচ্চ ৪৯ জনের মৃত্যুর খবর রেকর্ড হয়েছে। গত বছর করোনার মহামারি যখন ঊর্ধ্বগামী সেই সময় ৫ মে শেষবারের তো একদিনে ৪৯ জনের মৃত্যুর খবর রেকর্ড হয় গুজরাতে। যদিও এই সংখ্যাটিকে খুব কম বলেই মনে করা হচ্ছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও আহমেদাবাদ, সুরাত, ভদোদরা ও রাজকোটের মতো প্রধান শহরে করোনায় মৃতদের দেহের ভিড়ে নাজেহাল শ্মশানগুলি।
সুরাতের শ্মশানে চলছে কোভিড দেহ সৎকার
এই শহরগুলির মধ্যে সুরাতের অবস্থা নিয়ে কথা বলা যাক। মহামারির আগে রামনাথ ঘেলা শ্মশান (আরজিসি), উমরা ও কুরুক্ষেত্র শ্মশানে (কেসি) ও জাহাঙ্গিরপুরা শ্মশানে প্রতিদিন গড়ে ২০টি করে দেহ আসত। কিন্তু বিগত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ এই শ্মশানগুলুতে দিনে ৮০টি করে মৃতদেহ আসছে। সুরাতের সবচেয়ে বড় শ্মশান অশ্বিনী কুমার শ্মশানে (একেসি) দৈনিক ৩০টির বেশি দেহ আসত বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু এখন সেখানে দিনে গড়ে ১১০টি দেহ আসে। একেসির কার্যকর অবস্থায় ৯টি গ্যাস চালিত চুল্লি ও কাঠের চিতার চারটি স্ট্যান্ড রয়েছে। এই নিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে।
প্রকৃত সংখ্যা জানাচ্ছে না সরকার
সূত্রের খবর, বাকি তিনটে শ্মশানে দু'সপ্তাহ ধরে মৃতদেহের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। যদিও সরকার রাজ্যে কোভিডে মৃতের প্রকৃত সংখ্যা গোপন করছে এই অভিযোগ শনিবার অস্বীকার করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি। আহমেদাবাদে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'আইসিএমআরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, একাধিক রোগে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হলে বিশেষজ্ঞ কমিটি এই জাতীয় মৃত্যুর প্রাথমিক ও গৌণ কারণগুলি স্থির করেন। কমিটি যদি সনাক্ত করেন যে কোনও করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হৃদরোগে হয়েছে, তবে তা কোভিডে মৃত্যু বলে গণ্য হবে না। একই পদ্ধতি গোটা দেশজুড়ে অনুসরণ করা হচ্ছে।' রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, শনিবার গুজরাতের সামগ্রিক কোভিড-১৯ টোল দাঁড়িয়েছে ৪,৭৪৬-এ।
শ্মশানে করোনায় মৃতদেহের ভিড়
কিন্তু ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে একেসিতে অপেক্ষারত মৃতদেহের সার অস্বস্তিতে ফেলেছে সরকারকে এবং এই চাপ কমাতে বিকল্প বন্দোবস্ত করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, উমরার আরজিসি সংলগ্ন মাঠটি শ্মশানে পরিণত করা হয়েছে এবং শনিবার এসএমসির দল গিয়ে সেখানে আলো সহ জরুরি ব্যবস্থার জন্য পরিকাঠামো তৈরি করে এসেছে। এসএমসির কর্মী জানিয়েছেন যে, 'যাঁদের মৃত্যু স্বাভাবিক তাঁদের কাঠের চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে। আলো লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতেও রাতেও শ্মশানে পোড়ানোর কাজ চালানো যেতে পারে।' একই ধরনের বন্দোবস্ত করা হয়েছে জাহাঙ্গিরপুরাতেও, তাপি নদীর ধারে কাঠের চুল্লির দু'টি নতুন স্ট্যান্ড লাগানো হয়েছে।
মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে রাজকোটে
রাজকোটেও বিভিন্ন হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যদিও জেলা শাসকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী রাজকোটে কোভিড চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয়েছে ৮৯ জনের, ৬ থেকে ৮ এপ্রিলের মধ্যে ১৪ জন কোভিডে মারা গিয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু নিয়মানুসারেল কোভিডের বিধি মেনেই ৮৯ জনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। তবে রাজকোটের সবচেয়ে বৃহৎ রামনাথপারা শ্মশানের ট্রাস্টিরা জানান, তারা প্রতিদিন কোভিড বিধি মেনে দৈনিক ২০টি করে দেহ পোড়ায় এবং কোভিড নয় এমন ১৫টি দেহ এমনি পোড়ানো হয়।
আহমেদাবাদের শ্মশানেও কোভিড দেহের ভিড়
শনিবার আহমেদাবাদের বদাজ, দুধেশ্বর ও থালতেজ শ্মশানে ২৫টির মতো কোভিড মৃতদেহের সৎকার করা হয়। রেকর্ড অনুযায়ী শনিবার আহমেদাবাদে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিডে। শুক্রবার রাজ্যের স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলা হয় যে ভদোদরাতে কোভিডে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। অথচ ভদোদরা পুরনিগম জানিয়েছে যে তাদের কাছে করোনায় ২ জনের মৃত্যুর খবর রয়েছে।
চরমে শয্যা সঙ্কট, চেয়ারেই অক্সিজেন নিচ্ছেন করোনা আক্রান্ত রোগী