‘ইতিবাচক খবর ছড়িয়ে দিন মানুষের মধ্যে’, সাংবাদিকদের কাছে আর্জি যোগী আদিত্যনাথের
উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আদিত্যনাথের প্রতিক্রিয়া
দেশজুড়ে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েভের মহামারিতে যখন প্রতিদিনই প্রিয়জন হারানোর খবরে মন ভারাক্রান্ত ঠিক তখনই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানান যে রাজ্যের মহামারি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। রবিবার যোগী জানিয়েছেন যে যদি তৃতীয় কোভিড–১৯ ওয়েভ আসে তাই তাঁর রাজ্য সেটারই প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কোনও তথ্য গোপন করছে না সরকার
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, কোভিড পরিচালনায় প্রশিক্ষিত পর্যবেক্ষণের দলকে অতিরিক্ত টেস্ট কিট ও মেডিক্যাল কিট দিয়ে গ্রামের মহামারি সংক্রমণের পরিস্থিতি দেখে আসার জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলায় গঙ্গায় ভেসে উঠতে দেখা গিয়েছে একাধিক দেহ। যার মধ্যে কোভিড দেহ রয়েছে বলেও সন্দেহ করা হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বরং বলেন, 'আমরা কিছুই গোপন করছি না। সবকিছুতেই স্বচ্ছতা রয়েছে, টেস্টের তথ্য, সুস্থতা ও মৃত্যু সংক্রান্ত সব খবরই সরকারের কোভিড পোর্টালে আপলোড হচ্ছে।' নয়ডাতে সাংবাদিকদের এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। তিনি এও বলেন, 'উত্তরপ্রদেশের জনসংখ্যার ভিত্তিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এনটা আশঙ্কা করা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি।'
তৃতীয় ওয়েভের জন্য প্রস্তুতি
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে উত্তরপ্রদেশ বছরের পর বছর ধরে জাপানি এনসেফালাইটিসের সঙ্গে লড়াই করেছে এবং তার জন্য যে পরিকাঠামো তৈরি রয়েছে তা তৃতীয় ওয়েভের মোকাবিলা করতে সক্ষম। মুখ্যমন্ত্রী এও জানান যে এই পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে একাধিক বিভাগের আধিকারিকদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা হাসপাতালগুলিতে ১২০০-১৫০০ বেড যেমন রয়েছে, তেমনি গোরক্ষপুর মেডিক্যাল কলেজ ও লখনউয়ের কেজিএমইউ হাসপাতাল থেকে প্রশিক্ষণরত কর্মীদের গ্রামের কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এও জানান যে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত দেড় কোটি মানুষের টিকাকরণ সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে এবং বিদেশ থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করার পদক্ষেপ করা হয়েছে। এছাড়াও ভ্যাকসিন অপচয় হ্রাস করা হয়েছে।
সংক্রমণ হ্রাস রাজ্যে
গত দু'সপ্তাহ ধরে উত্তরপ্রদেশে সংক্রমণ হ্রাস পেয়েছে। ৩০ এপ্রিল এ রাজ্যে ৩৪,৭২২টি কেস দেখা গিয়েছিল এবং সক্রিয় কেসের সংখ্যা ছিল ৩.১০ লক্ষ। এরপরই থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করে সংক্রমণ। শনিবার এই রাজ্যে মাত্র ১২,৫১৩টি নতুন কেস দেখা গিয়েছে এবং সক্রিয় কেসের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে ১.৭৭ লক্ষে নেমে এসেছে। কিন্তু রাজ্যে দৈনিক ৩০০ মৃত্যু রিপোর্ট হচ্ছে, যা কোনওভাবেই হ্রাস পাচ্ছে না। আদিত্যনাথ স্বীকার করেছেন যে মহামারির সংক্রমণ উদ্বেগজনক। তাঁর সরকার ৫ মে থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যেক ওয়ার্ড ও শহরের পুর অঞ্চলগুলিতে পর্যবেক্ষকের দলকে পাঠিয়েছেন পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে। এই দলটি এলাকার পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্যানিটেশন এবং ফগিং করার বিষয়ের ওপর নজর রাখবে। এছাড়াও উপসর্গ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের স্ক্রিনিং ও মেডিক্যাল কিট বন্টন করবে।
সমালোচনার মুখে যোগী সরকার
কোভিড পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার বিষয়ে বিজেপির অন্তর্ভুক্ত উত্তরপ্রদেশ সরকার সমালোচনার মুখে পড়েছিল। রাজ্যের কিছু অংশে গঙ্গায় দেহ ভেসে ওঠার ঘটনা নিয়ে আদিত্যনাথ জানিয়েছেন এটা মানুষেরই সৃষ্টি, শ্মশান বা কবরস্থানে ভিড় এড়ানোর জন্য দেহগুলিকে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, 'আমরা রাজ্য বিপর্যয় প্রতিক্রিয়া বাহিনী ও প্যাকের কর্মীদের প্রত্যেক নদী ও জলাশয়ে নিয়োগ করেছি এবং পঞ্চায়েত ও পুরনিগমদের সতর্ক করে বলা হয়েছে যে কোনও দেহ যাতে নদীতে না ফেলা হয় সেদিকে নজর রাখতে। স্থানীয়দের এটা না করার জন্য তাঁদের রাজি করাতে বলেছি।' মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান যে যে সব কোভিড দেহের কোনও দাবি থাকে না তা শেষকৃত্য করার জন্য পুরনিগমকে আর্থিক সহায়তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো যথেষ্ট ভালো
তবে রাজ্যে চিকিৎসা না পেয়ে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে তা মানতে নারাজ যোগী আদিত্যনাথ। তিনি বলেন, 'কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। হয়ত অন্য কোনও রাজ্যে এ ধরনের পরিস্থিতি হলেও হতে পারে।' মুখ্যমন্ত্রীর মতে, রাজ্যে প্রথম ওয়েভে লেভেল ২ ও ৩-এর ২৩ হাজার বেড রয়েছে এবং এছাড়াও লেভেল ১-এর সুবিধাযুক্ত ১.১৬ লক্ষ বেড রয়েছে। কিন্তু এল১ বেড যেহেতু খুব বেশি ব্যবহার হয়নি তাই দ্বিতীয় ওয়েভে রাজ্য এল২ ও এল৩ মিলিয়ে ৮০ হাজার বেড প্রস্তুত করেছে, যা ব্যবহৃত হচ্ছে। এই সুবিধাগুলি ডিআরডিও সংগঠন থেকে এই সুবিধা মিলেছে। আদিত্যনাথ বলেন, 'ব্যতিক্রম থাকতেই পারে। কারণ সকলে ১০৮ নম্বরে ফোন করেন না এবং সকলে রেজিস্টারও করেন না। কিন্তু সরকার তাঁদের কাছেও পৌঁছায়।'
পজিটিভ খবর করুন
মুখ্যমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে আর্জি জানান যে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টি করতে পারে এমন অক্সিজেন ও ওষুধের ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ না দেখিয়ে বরং ইতিবাচক ও গঠনমূলক বার্তা দিক তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'অক্সিজেন, রেমডেসিভির ইত্যাদি নিয়ে যেভাবে আমাদের উদ্বেগ বাড়ছে, তা সাধারণ মানুষের মধ্যেও আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। এই সময় আমাদের মানুষকে সাহস ও শক্ত থাকার অনুপ্রেরণা দিতে হবে। আমরা মহামারির সঙ্গে লড়াই করছি সাধারণ কোনও রোগের সঙ্গে নয়। এই মহামারি শুধু ভারতের নয়, গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে। ভারতের চেয়ে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো অনেক উন্নত আমেরিকা ও ইউরোপের। তাও আমেরিকায় কীভাবে এতজনরে মৃত্যু হল?'
নারদা কাণ্ডে সকালেই ফিরহাদ, মদন, শোভন, সুব্রত-র বাড়িতে সিবিআই! নিয়ে যাওয়া হল নিজাম প্যালেসে
উত্তরপ্রদেশ নিয়ন্ত্রণে
এই পরিস্থিতির জন্য কী কোনওভাবে গাফিলতি দায়ি? এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে উত্তরপ্রদেশের। দিল্লির মতো অবস্থা নয়ডায় হয়নি। নয়ডা ও দিল্লির মধ্যে পার্থক্য দেখতে পাচ্ছেন না (সংক্রমণ ও মৃত্যু)। পুরো উত্তরপ্রদেশে একই পরিস্থিতি রয়েছে।'