সামাজিক বাধা ছিল একাধিক, তাও স্বাধীনতা সংগ্রামে দমিয়ে রাখা যায়নি এই নারীদের
দীর্ঘ সংগ্রামের পর ভারত ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনে সমানভাবে লড়েছিলেন মহিলারাও। বরং বিভিন্ন সামাজিক বাধা থাকায় তাঁদের লড়াইটা ছিল আরও বেশি।
দীর্ঘ সংগ্রামের পর ভারত ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনে পুরুষদের সঙ্গে সমানে সমানে অংশ নিয়েছিলেন মহিলারাও। তবে কেবল ব্রিটিশ সরকার নয়, তাঁদের লড়াইটা ছিল বিভিন্ন সামাজিক বাধার বিরুদ্ধেও। কিন্তু তাঁদের মনে ছিল স্বাধীনতার অদম্য ইচ্ছে। যার সামনে ম্লান হয়ে গিয়েছে সব বাধা।
আজ সেইসব বীরাঙ্গনাদের অনেককেই মনে রাখেনি ইতিহাস। আবার অনেকে ফিকে হতে বসেছেন ইতিহাসের পাতায়। আর এক স্বাধীনতা দিবসের আগে সেরকমই কয়েকজন নারী স্বাধীনতা সংগ্রামীকে স্মরণ করা হল।
দুর্গাবাই দেশমুখ
বেশ কয়েকটি সত্যাগ্রহ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দুর্গাবাই দেশমুখ। পরবর্তীকালে তিনি ভারতের গণপরিষদের সদস্য এবং ভারতের যোজনা কমিশনের সদস্যও ছিলেন। নিয়ম নীতির ক্ষেত্রে তিনি কখনও আপোষ করেননি। ১৯২৩ সালে উপযুক্ত টিকিট না থাকায় তিনি এমনকী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুকেও খাদি প্রদর্শনীতে প্রবেশ করার অনুমতি দেননি ।
সুচেতা কৃপালানি
দেশভাগকে কেন্দ্র করে যে দাঙ্গা বেধেছিল সেই সময় এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে এই গান্ধীবাদী নেত্রী সবসময় মহাত্মার সঙ্গে থেকে কাজ করেছিলেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে তিনি গণপরিষদে বন্দে মাতরম গানটি গেয়েছিলেন। শুধু তাই নয় ১৯৪০ সালে তিনিই অল ইন্ডিয়া মহিলা কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও হন। তিনিই ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী।
আবাদি বানো বেগম
১৮২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আবাদি বানো বেগম। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথমদিকে যে সামান্য কয়েকজন মহিলা অংশ নিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে আবাদি ছিলেন অন্যতম। সেসময়ে মুসলিম সমাজে মহিলাদের বাধ্যতামূলক পর্দা রাখতে হত। কিন্তু সেই প্রথা আবাদির স্বাধীনতার যুদ্ধে বাধা হয়নি। তিনিই প্রথম পর্দার পিছন থেকেই জনসভায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন।
পার্বতী গিরি
মাত্র ১৬ বছর বয়স থেকেই সক্রিয়ভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে, বিশেষত ভারত ছাড় আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন পার্বতী গিরি। ২ বছর কারাবাসের সাজাও ভোগ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের কাজে অংশ নেন। পশ্চিম ওড়িশায় তাঁকে মাদার টেরেসা বলে ডাকা হত।
ভেলু নাচিয়র
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা প্রথম রাণী ছিলেন ভেলু নাচিয়র। ব্রিচিশদের ভালরকম নাকালি-চোবানি খাইয়েছিলেন তিনি। রামনাথপুরমের এই প্রাক্তন রাজকুমারী সিপাহী বিদ্রোহেরও আগে ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করেছিলেন।
ভোগেশ্বরী ফুকানানি
অসমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে 'ভার্ভুজ' নামে বিপ্লবী গণ-কর্মসূচি চালু করেছিলেন ভোগেশ্বরী ফুকানানি। এর জন্য ব্রিটিশরা তাঁকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছিল।
কনকলতা বড়ুয়া
আসামের আরেক বীরাঙ্গনা কণকলতা বড়ুয়া। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় তিনি সগর্বে জাতীয় পতাকা বহন করেছিলেন। সেই 'অপরাধ'-এ তাঁকেও গুলি করে হত্যা করেছিল।