বাড়ছে আন্দোলনের তেজ! কৃষি ব্যবস্থার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়েও মাথাচাড়া দিচ্ছে একাধিক প্রশ্ন
বাড়ছে আন্দোলনের তেজ! কৃষি ব্যবস্থার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়েও মাথাচড়া দিচ্ছে একাধিক প্রশ্ন
সাত দিন অতিক্রান্ত। কিন্তু এখনও এক বিন্দুও কমেনি দিল্লির কৃষক আন্দোলনের ঝাঁঝ। এমন কৃষক আন্দোলন এযাবৎকাল তো বটেই, নিকট অতীতেও কেউ কখনও দেখেছে কিনা মনে করতে পারছেন না। অন্যদিকে গতকাল কেন্দ্রের সঙ্গে কৃষক নেতাদের একদফা বৈঠক হলেও তা শেষ পর্যন্ত বিফলেই যায়। দিল্লির চলমান কৃষি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আরও একবার পরিষ্কার হচ্ছে ভারতীয় কৃষি ব্যবস্থার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট।
আন্দোলনের তেজ বাড়াতে আরও বাড়ছে জমায়েত
গতকাল কৃষকদের দাবি দাওয়া শুনতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিলেও তা বিশেষ কাজে আসেনি। উল্টে নয়া আইন বাতিল না হলে আন্দোলনের রাস্তা থেকে কৃষকরা সরবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন কৃষকরা। এমনকী প্রয়োজনে দিল্লিগামী ৫ টি জাতীয় সড়ক বন্ধেরও হুশিয়ার দিয়েছে বিক্ষুব্ধ কৃষকরা। পাশাপাশি আন্দোলনের তেজ বাড়াতে ইতিমধ্যেই পাঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে আরও হাজার হাজার কৃষক এসে জমায়েত করতে শুরু করছেন দিল্লি সীমান্তে।
পরিষ্কার হচ্ছে ভারতীয় কৃষি ব্যবস্থার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট
কৃষকদের যুক্তি নূন্যতম সহায়ক মূল্য বা এমপিএস ব্যবস্থা তুলে দিয়ে খোলা বাজার অর্থনীতিতে জোর দিতে চাইছে সরকার। যার ফলে ঘুরপথে পুঁজিবাদীদের হাত আরও শক্ত হবে। মার খাবেন ছোট কৃষকেরা। লাভবান হবে বেসরকারী সংস্থাগুলি। আর তাই ২৬টি কৃষিপণ্যে নূন্যতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করার দাবিতে শুরু থেকেই আওয়াজ তুলেছেন কৃষকরা। যদিও দিল্লি সীমান্তে ধুন্ধুমার শুরু হলেও, দেশের অন্যত্র কৃষকরা যে খুব উদ্বিগ্ন, তা মনে হচ্ছে না। আর এখানেই মাথাচাড়া দিচ্ছে অন্য প্রশ্ন।
পাঞ্জাব হরিয়ানায় বিত্তশালীদের বড় অংশই কৃষক সমাজের
বর্তমানে দেশে এমপিএস আইন থাকলেও তাতে বিশেষ লাভবান হন না দেশের একটা বড় অংশের কৃষকেরা। উল্টে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের সর্বত্র কৃষি মান্ডি থাকলেও বাস্তবে বাংলার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কৃষক মান্ডিমুখো হন না। ফড়েরা মাঠে এসে কৃষকের কাছ থেকে ফসল কিনে পরে তা এমএসপি নির্ধারিত মূল্য সরকারকে বেচে। কিন্তু পাঞ্জাব হরিয়ানার সমস্যাটা অন্য জায়গায়। মাথায় রাখতে হবে পাঞ্জাব হরিয়ানায় সমাজের সব থেকে বিত্তবান শ্রেণি কিন্তু কৃষক সমাজের একটা বড় অংশ।
সবুজ বিপ্লব সফল করতে গিয়েই আজ ঋণের বোঝায় জর্জরিত পাঞ্জাবের কৃষকেরা?
ওয়াকিবহাল মহলের মতে সবুজ বিপ্লবের দরুন পাঞ্জাব-হরিয়ানায় পরিস্থিতিটা এখন আলাদা। কৃষকদের ফড়ে-নির্ভরতা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় সেখানে কম। আজ পাঞ্জাবের কৃষক মনে করছেন, সবুজ বিপ্লব সফল করতে গিয়ে তাঁদের মাথার উপর এখন বিশাল ঋণের বোঝা। এমনকী উন্নত বীজ, সার ও কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার করতে গিয়ে তাঁদের জমি উর্বরাশক্তি হারিয়েছে। তাই মান্ডি নির্ভরতাই তাদের একমাত্র বিকল্প।
কেন ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবিতে বারবার সোচ্চার হচ্ছেন কৃষকরা ?
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, যে পাঞ্জাবকে কেন্দ্র করে এক সময় গোটা দেশে দানা বেঁধেছিল সবুজ বিপ্লব আজ সেই পাঞ্জাবের কৃষকদের কাছেই সব থেকে বেশি মূল্যবান সরকারের এই ‘ন্যূনতম সহায়ক মূল্য'। এই সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই আন্দোলরত কৃষকদের এখন সাফ বক্তব্য, নয়া কৃষি আইনের হাত ধরে তারা কোনও ভাবেই আদানি-আম্বানিদের মতো বেসরকারী সংস্থার হাত শক্ত হতে দেবেন না। বাতিল করতেই হবে নয়া কৃষি আইন।
নিজের বাড়িতে অনুগামীদের সঙ্গে বৈঠক শুভেন্দুর, ছন্দপতনের মাঝেই ফের ভাঙনের রেখা তৃণমূলে