করোনা সংক্রমণে জারি সামাজিক দুরত্ব, সমস্যায় শ্রমজীবি–খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ
করোনা সংক্রমণে জারি সামাজিক দুরত্ব, সমস্যায় শ্রমজীবি–খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ
করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক। তাই সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে। যে কারণে অনেক পরিবারই নিজের বাড়ির পরিচারিকাকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে অথবা অনেক পরিচারিকা নিজেই দুরত্ব বজায় রাখছে।
গরীবদের জন্য সামাজিক দুরত্ব বজায় অসম্ভব
বেবি দেবী ইতিমধ্যেই এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে তাঁর মাসিক উপার্জনের ৮০ শতাংশ হারিয়ে ফেলেছে। গোটা ভারতেরও এই একই চিত্র আসতে চলেছে। ৩৮ বছরের চার সন্তানের মা, যিনি জীবন চালানোর জন্য বাড়ি পরিস্কারের কাজ করেন, তাঁরাও করোনা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখছেন। দেবী, যিনি বর্তমানে দিনে প্রায় প্রতিদিন ৫১ টাকা করে আয় করেন, তার কমে যাওয়া আয় তার জীবনযাত্রার মতোই উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোভিড-১৯ নামে পরিচিত এই রোগের সংক্রমণের চেইন ভাঙতে যখন মরিয়া ভারত, ঠিক বিপরীত দিকেই তাঁর পরিবার বাস করে আবদ্ধ একটি ঘরে এবং একটি বাথরুম ও শৌচালয় রয়েছে যা ভাগ করে নিতে হয় আরও দুই পরিবারের সঙ্গে। যা এই মুহূ্র্তে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। পূর্ব দিল্লির বাসিন্দা দেবী বলেন, ‘এই পরিস্থিতি সত্যিই খুব কঠিন। বাইরে বেড়নো যেমন সমস্যার তেমনি বাড়িতে থাকাও কঠিন।' প্রসঙ্গত, এই মারণ রোগ বিশ্বের সব স্তরের মানুষকেই আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সামাজিক দুরত্ব থেকে লকডাউন, সবই প্রভাব ফেলছে অর্থনীতির ওপরে। বিশেষ করে দরিদ্র যাঁরা রয়েছেন তাঁদের হাল আরও খারাপ।
সমস্যায় শ্রমজীবি মানুষ
দেবীর হল সেই যার গল্প ভারতের এক তৃতীয়াংশ শ্রমিকের গল্প, এঁরা হল অনাড়ম্বর ক্ষেত্রের অংশ যাঁরা এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে জিডিপির অর্ধেক অবদান রাখেন। এঁরা ভারতের মোট শ্রমশক্তির ৯০%-এরও বেশি। প্রায় ৮.৮ মিলিয়নেরও বেশি পরিবার যারা শহুরে ভারতের বস্তি জুড়ে বাস করে। অধিকাংশ পুরুষ ও মহিলারা মাত্র ২ ডলারের জন্য প্লাম্বার, বাড়ির কাজ, জঞ্জাল কোড়ানো, রিক্সা টানা ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে হকারি করেন। তাঁদের বাড়িতে বসে কাজ করার কোনও বিকল্প নেই, গণ পরিবহন এড়িয়ে যাওয়ার বা সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখারও কোনও উপায় নেই। গোটা বিশ্ব জুড়ে এঁরাই তো আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন।
লক ডাউন
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের ১.৩ বিলিয়ন মানুষকে রবিবার ‘জনতা কার্ফু'তে অংশ নেওয়ার জন্য বলেছিলেন। রবিবার সাফল্যের পর দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে লক ডাউন। লোকাল ও দুরপাল্লার ট্রেন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ, স্কুল-কলেজ, বাস, অটো, রিক্সা সবই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে জরুরি ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ক্ষেত্র খোলা রাখা হবে। ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে এই লকডাউন।