প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন ট্রাক্টর মার্চে যোগ দিতে প্রস্তুত উত্তরপ্রদেশের আঁখ চাষের প্রাণকেন্দ্র সিসৌলি
কেন্দ্র সরকারের তিনটি কৃষি আইন নিয়ে ক্ষুব্ধ দেশের সব কৃষকরাই। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের সিসৌলি গ্রাম, যেটি মহেন্দ্র সিং তিকেতের গ্রাম হিসাবে পরিচিত তিনিও এই কৃষি আইনের বিরুদ্ধে। প্রসঙ্গত, এই মহেন্দ্র সিং তিকেতের ডাকেই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের অর্ধ লক্ষাধিক কৃষক ১৯৮৮ সালের অক্টোবরে এক সপ্তাহ ধরে দিল্লির বোট ক্লাব লনে অবস্থান করেছিলেন। তিনি জানান, ট্রাক্টর তাঁদের প্রস্তুত রয়েছে প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রতীকি প্রতিবাদ করার জন্য।

কৃষক ও দল আলাদা
সিসৌলি নগর পঞ্চায়েতের প্রাক্তন চেয়ারম্যান যশপাল বাঞ্জি বলেন, ‘এখানে ১১ হাজার ভোটার রয়েছেন। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ৮ হাজার বিজোড় ভোট পড়েছে এবং সাড়ে পাঁচ হাজারের মত ভোট বিজেপি পেয়েছে। কিন্তু এই বিষয়ে কৃষক এবং দল আলাদা। অনেক বিরোধ রয়েছে।' মুজফ্ফরনগর জেলার বুধানা তেহশিলেল সিসৌলি গ্রাম আঁখ চাষের প্রাণকেন্দ্র বলা চলে। ৩,২০০ একর জমির মধ্যে ২,৬০০ একর ফসল ফলে রয়েছে, যার অধিকাংশ জমির মালিক জাটেরা। সম্প্রদায়ের মোট ১১ হাজার ভোটারদের মধ্যে ৬ হাজারের বেশি কাশ্যপ (১,৮০০), জাতব দলিত (১৪০০), মুসলিম (১৩০০) এছাড়াও অন্যান্য জাতি (ব্রাহ্মণ, কুমোর ও খাতিক) রয়েছে।

আঁখ চাষের প্রাণকেন্দ্র সিসৌলি
২০১৯-২০ সালে আখের মরশুমের সময় (অক্টোবর-সেপ্টেম্বর), সিসৌলি গ্রামের কৃষকরা ত্রিবেণী ইঞ্জিনিয়ারিং ও শিল্প এবং বাজাজ হিন্দুস্থান চিনি লিমিটেডের খাতৌলি ও গাঙ্গনৌলি মিলগুলিতে ৮.৩৪ লক্ষ কুইন্টাল আঁখ সরবরাহ করেছিলেন। এই ফসলের পরিবর্তে ২০০০ কৃষকের উত্তরপ্রদেশের স্টেট অ্যাডভাইজড প্রাইস (এসএপি) হিসাবে প্রতি কুইন্টালে ৩২৫ টাকা করে লাভ হয়, যা প্রায় ২৭ কোটি টাকা।

সিসৌলি গ্রাম যোগ দেবে ট্রাক্টর মার্চে
ভারতীয় কিষাণ সংগঠনের সভাপতি নরেশ সিং তিকেত বলেন, ‘এই সরকার খুব জেদি রাজা ও অটল। ১৯৪৩ সালে ব্রিটিশরা যদি স্যার ছোটু রামের (কিংবদন্তী জাট কৃষক নেতা) এর কাছে দমে যেতে পারে, যখন তিনি গমের সরকারী সিলিং দাম মণ প্রতি ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা করার দাবি করেছিলেন এবং কৃষকরা তাঁদের ফসল পোড়ানোর হুমকি দিয়েছিল, তবে নরেন্দ্র মোদী সরকার কেন এই কালো আইনগুলির (কৃষি আইন) সংস্করণ করছেন না?' জুনিয়র তিকেত বালিয়ান খাপ, জাত সম্প্রদায়ের প্রধান। এই বালিয়ান খাপ মুজফ্ফরনগরের ৮৪টি গ্রাম ও শামলি জেলাকে প্রতিনিধিত্ব করে। রবিবার সিসৌলিতে বিকেইউ কিষাণ পঞ্চায়েতের বন্দোবস্ত করে, যেখানে খাপের বরিষ্ঠ কৃষকরা যোগ দিয়েছিলেন। এজেন্ডা ছিল একটাই তা হল প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন ট্রাক্টর মার্চের জন্য অধিকাংশ কৃষককে একত্রিত করে দিল্লি অভিযান করা, যেখানে ২৬ নভেম্বর থেকে রাজধানীর সীমান্ত দখল করে রয়েছেন কয়েক লক্ষ কৃষক।

২৬ জানুয়ারি দিল্লির পথে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ
শামলি সংলগ্ন বনাতের বিকেইউ নেতা রাজকুমার গুড্ডু বলেন, ‘২৬ জানুয়ারির জন্য আমাদের জেলা থেকে যাবে ১০০০-১২০০ ট্রাক্টর-ট্রলি, প্রত্যেকটিত ২৫ জন করে থাকবেন।' শনিবার দেখা গেল পোশাক পড়ে মহড়া দিতে ১৫০০ ট্রাক্টরকে (ট্রলি সহ)। তোমার জাটদের দেশ খাপ সংগঠনের সঞ্জীব চৌধুরি জানিয়েছেন যে তাঁর জেলা থেকে ২০০০-২,২০০ টি ট্রাক্টর দিল্লির উদ্দেশ্যে যাবে। সিসৌলির চাঁদ সিং বলিয়ান, যিনি প্রায় ২০ বিঘা জমির মালিক, তিনি ১৯৮৮ সালে দিল্লির বোট ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন এবং ওই বছরের শুরুতেও মিরুট কমিশনের বিরুদ্ধে ২৫ দিনের অবস্থানও করেছিলেন। ৭২ বছরের কৃষক মনে করেন যে বর্তমানের এই কৃষক আন্দোলন আরও বৃহৎ। তিনি বলেন, ‘কারণ এই আন্দোলনে অন্যান্য রাজ্যের কৃষকরাও সামিল হয়েছেন। আর এখানে আন্দোলনের কারণ আঁখ বা বিদ্যুতেই সীমাবদ্ধ নয়।' চাঁদ সিং বলিয়ানের বিশ্বাস কৃষকদের কাছে সরকারকে মাথা নত করতেই হবে।
প্রশান্ত কিশোরকে হারিয়ে দিলেন বিজেপির 'চাণক্য’! বাংলার 'রায়ে’র উল্টো পথে সমীক্ষা