টিকে থাকাই কাশ্মীরে সাংবাদিকতার প্রথম চ্যালেঞ্জ - সুজাত বুখারি চলে গেলেও থেকে গেল তাঁর বলিষ্ঠ মতামত
জঙ্গিদের হাতে মৃত্যু হয়েছে সুজাত বুখারীর। কিন্ত কাশ্মীরের বিভিন্ন বিষয়ে তার দৃঢ় মতামত এবং লেখা স্মরণীয় হয়ে রইল।
তিন মাস আগেই 'রাইজিং কাশ্মীর' পত্রিকায় এক সম্পাদকীয়তে সুজাত বুখারি লিখেছিলেন, 'টিকে থাকাই কাশ্মীরে সাংবাদিকতার প্রথম চ্যালেঞ্জ'। তিন তিনবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল, তিনি টিকে ছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার আর পারলেন না। জঙ্গিদের গুলিতে মরতে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু রয়ে গিয়েছে রমজানে সংঘর্ষ বিরতি থেকে আফস্পা প্রত্যাহার -কাশ্মীরের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তাঁর বলিষ্ঠ মতামত, লেখা।
কাশ্মীরের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর হিসেবেই পরিচিত ছিলেন বুখারি। তাঁর প্রত্যেকটি সম্পাদকীয় কাশ্মীরের প্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। কোনও এক পক্ষের হয়ে মত প্রকাশ নয়, তাঁর ভাবনা চিন্তায় ভারসাম্য রক্ষার নজির ছিল। কাশ্মীরে রমজান মাসে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান বন্ধ রেখেছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এই সিদ্ধান্তের পেছনে পিডিপি বিধায়ক বশরত বুখারির ভাই সুজাতর বড় ভূমিকা ছিল বলে অনেকে মনে করেন। সাম্প্রতিক এক কলামে সুজাত এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন, এটা কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দিকে এক ইতিবাচক পদক্ষেপ। তিনি জানান, এতে অন্তত কাশ্মীরের সাধারণ নাগরিকদের মনে খানিক আশার সঞ্চার হবে। তিনি লেখেন, 'গত কয়েক বছরের মধ্যে যেসব নাগরিক জঙ্গিদলে নাম লিখিয়েছেন, আর যাঁরা সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষের শিকার - সবার মৃত্যুই সমান কষ্টদায়ক'।
কাশ্মীরিদের দীর্ঘদিনের দাবি আফস্পা প্রত্যাহারের পক্ষেও তিনি সওয়াল করেন কলামে। তিনি সাফ জানান, শুধু নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয় বলেই এই আইনকে কাশ্মীরিরা ঘৃণা করেন তা নয়। এই আইনের বলে নিরাপত্তার নামে সশস্ত্র বাহিনী অবাধ ক্ষমতা ভোগ করে। পাথরিবাল, বন্দিপোড়, গন্দেরবাল, হন্দওয়ারা ও মছিলের সাজানো এনকাউন্টারের ঘটনার স্মৃতি কাশ্মীরিদের মনে এখনো টাটকা রয়েছে। একইভাবে পাকি সেনার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গোলা নিক্ষেপ করার ঘটনারও তীব্র সমালোচক ছিলেন সুজাত বুখারি। তাঁর মতে এতে দুদেশই সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কাশ্মীর সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে যে কোনও অনুষ্ঠানে দেখা মিলত এই কৃতী নির্ভিক সাংবাদিকের। সম্প্রতি ভারত পাকিস্তান, দুই দেশের গুপ্তচর বাহিনীর প্রধানের যৌথ উদ্যোগে লেখা 'দ্য় স্পাই ক্রনিকলস - র, আইএসআই অ্যান্ড দ্য ইল্যুশন অব পিস' বই প্রকাশ অনুষ্ঠানেও তাঁকে দেখা গিয়েছিল। সেখানে কাশ্মীরি যুব সম্প্রদায়ের সন্ত্রাসবাদের দিকে আগ্রহ বাড়ার বিষয়ে তিনি আলোচনা করেন। তিনি বলেছিলেন, '১৯৮৯ সালের পরে যে প্রজন্মের জন্ম, তারা ছোট থেকে বন্দুকের নলের সামনেই বড় হয়েছে। দেখেছে আফজল গুরুকে দ্রুত বিচার শেষ করেই ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে। এসব ঘটনা থেকেই তাদের মনে সন্ত্রাসের প্রতি আস্থা জাগছে।' নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাশ্মীর নীতির বিরুদ্ধেও তিনি সোচ্চার ছিলেন। হয়ত কড়া সত্যি কথা বলার জন্যই তাঁকে মরতে হল। তবে তাঁর লেখা ও মত রয়ে যাবে উপত্যকার ইতিহাসে।