মমতার বিরোধিতাই সঙ্ঘবদ্ধ করবে কংগ্রেস-জোটকে! রাহুল-সকাশে শিবসেনার আগমনে জল্পনা
মমতার বিরোধিতাই সঙ্ঘবদ্ধ করবে কংগ্রেস-জোটকে! রাহুল-সকাশে শিবসেনার আগমনে জল্পনা
২০২১-এর ভোটে বিপুল জয়ের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস বিরোধী হয়ে উঠেছেন। তিনি ২০২২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বিরোধী প্রধান মুখ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। আর তা করতে গিয়ে তাঁর মুখ্য লক্ষ্য হয়ে উঠেছে কংগ্রেসকে ভাঙা। কংগ্রেসে মিত্রশক্তিকে ভাঙিয়ে নেওয়া। কিন্তু সেই কাজ করতে গিয়ে কংগ্রেস-জোটকে আরও সঙ্ঘবদ্ধ করে তুলছেন তিনি।
কংগ্রেসই জোটকে নেতৃত্ব দেওয়ার উপযুক্ত
রাজনৈতিক মহলে মনে করছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত কংগ্রেস বিরোধিতা করছেন, ততই কংগ্রেসের মিত্রশক্তিরা সতর্ক হচ্ছেন। তাঁরা তৃণমূলের জাক উপেক্ষা করে কংগ্রেসের সঙ্গেই থাকতে চাইছেন। ইউপিএ-র প্রাদেশিক দলগুলি মনে করছে, কংগ্রেসই জোটকে নেতৃত্ব দেওয়ার উপযুক্ত। কারণ কংগ্রেসেরই একমাত্র প্যান ইন্ডিয়া ট্যাগ রয়েছে।
যে দলের বেশিরভাগ রাজ্যে শক্তি রয়েছে, তারাই নেতৃত্বে
বিজেপির সঙ্গে লড়তে গেলে এমন একটা দলকে নেতৃত্বে থাকতে হবে, যে দলের বেশিরভাগ রাজ্যে শক্তি রয়েছে। প্রায় অর্ধেক আসনে বিজেপি বনাম কংগ্রেস লড়াই হবে। বাকি অর্ধেক আসনে বিজেপি ও কংগ্রেস বা অন্যান্য প্রাদেশিক দলের সঙ্গে অন্য প্রাদেশিক দলের লড়াই। তা এনডিএ-র হতে পারে বা ইউপিএ-র হতে পারে।
বিজেপি বিরোধী প্রধান মুখ হয়ে উঠতে কংগ্রেস বিরোধিতা
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে চাইছেন বা কংগ্রেসের সঙ্গে সমান্তরাল পথে হেঁটে বিজেপি বিরোধী প্রধান মুখ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন, তখন ইউপিএ-র দলগুলি তৃণমূলকে পাত্তা দিচ্ছে না। কেননা অন্য আঞ্চলিক দলগুলি যেমন সেই রাজ্যে শক্তিশালী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলও বাংলায় শক্তিশালী। অন্য রাজ্যে তাঁদের এখনও সে অর্থে পদচিহ্ন পড়েনি।
কংগ্রেস ভাঙিয়ে প্রধান বিরোধী দলে হয়ে উঠতে চাইছে তৃণমূল
ত্রিপুরা, গোয়া, মেঘালয়ের মতো ছোট রাজ্যে তৃণমূল চেষ্টা করছে নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতে। কিন্তু সেই কাজে তারা কতটা সফল হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ত্রিপুরা পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূল আগরতলা পুর নিগমে ভোট প্রাপ্তির নিরিখে বিরোধী দল হিসেবে উঠে এলেও, সার্বিকভাবে এখন ত্রিপুরায় তারা সিপিএম-কংগ্রেসের থেকে পিছিয়ে। আর গোয়ায় তারা কংগ্রেস ভেঙে সংগঠন গড়ে বিধানসভা নির্বাচনে লড়তে চলেছে, তার ফলও এখন সুদূরপ্রসারী। মেঘালয়ে আবার কংগ্রেস ভাঙিয়ে প্রধান বিরোধী দলে হয়ে উঠেছে তৃণমূল, ঠিক চার-পাঁচ বছর আগে ত্রিপুরায় যেমন হয়েছিল।
কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপি বিরোধী জোটে সাড়া পাচ্ছেন না মমতা
এরই মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো আবার কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপি বিরোধী বিকল্প জোট গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। তিনি প্রথমেই মহারাষ্ট্রে এনসিপি ও শিবসেনাকে টার্গেট করেছেন। কিন্তু দুই তরফেই হোঁচট খেতে হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আবার প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ডেও বন্ধু হেমন্ত সোরেন ইতিবাচক সাড়া দেননি। আরজেডির তরফেও সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তিনি সাড়া পাবেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তেমনই তামিলনাড়ুতেও স্ট্যালিন রাহুলকে নেতা মানবেন একথা বলাই যায়।
রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে জোট গড়ার কাজে নেতৃত্ব দিতে আহ্বান
এই অবস্থায় পড়ে রইল সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, টিআরএস, টিডিপি, ওয়াইএসআর কংগ্রেস, বিজেডি প্রভৃতি। তবে এদের তরফে কতটা সহাতা মিলবে তা বলা কঠিন। যে শিবসেনার সঙ্গে কংগ্রেস দূরত্ব রেখে চলত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা পদক্ষেপ তাদেরকে কাছাকাছি এনে দিয়েছে। শিবসেনা সরাসরি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে জোট গড়ার কাজে নেতৃত্ব দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
কংগ্রেস-জোটে ১৬টি দলকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়, তৃণমূল একা
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে অবস্থান নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে এগোচ্ছেন, তাতে কংগ্রেস জোট সঙ্ঘবদ্ধ হবে। রাহুল গান্ধীদের সক্রিয় করে তোলার পক্ষে মমতার এই বিরোধিতার রাস্তায় হাঁটা ফলপ্রসূ হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পদক্ষেপ করলেও সম্প্রতি সংসদ অধিবেশনের আগে কংগ্রেস-জোটে ১৬টি দলকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। বরং তৃণমূল একা হয়ে যায়।
রাহুলকে বিরোধী ঐক্যের রাশ শক্ত হাতে ধরার আর্জি শিবসেনার
যাঁরা বিজেপি বিরোধিতার লক্ষ্য ইউপিএ-তে সামিল হয়েছেন, তাদের কাছে স্পষ্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদক্ষেপে বিজেপিরই সুবিধা করে দেবে। এই সারসত্যটাই রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন জোটকে শক্তিশালী করে তুলবে। তাই আর কালক্ষেপ না করে রাহুলকে বিরোধী ঐক্যের রাশ শক্ত হাতে ধরার আর্জি জানালেন শিবসেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কংগ্রেস বিরোধিতায় ইউপিএকে শক্তিশালী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহারাষ্ট্র সফর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় রাজনীতিতে কোন ভূমিকা পালন করছেন বর্তমানে। তিনি কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে এগোতে চাইছে তা যেমন স্পষ্ট শিবসেনার কাছে, তেমনই আরও অনেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান বদলের দিকে নজর রেখেছেন। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কংগ্রেস বিরোধিতা ইউপিএকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে আরও।
বিরোধী দলগুলিকে সঙ্ঘবদ্ধ করে তোলার উদ্যোগে নিন রাহুল
কংগ্রেস ছাড়া বিরোধী জোট সম্ভব নয়। আর বিজেপির বিরুদ্ধে একটাই বিরোধী জোট হওয়া উচিত। এই দুই মন্ত্রে সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে ইউপিএ শরিকরা। বেশিরভাগ শরিকেরই একটাই কথা, যা এদিন ফলাও করে জানাল শিবসেনা। তা হল- দুটো-তিনটে জোট বা ফ্রন্ট করে হবেটা কী! সেই তো বিরোধীদের মধ্যে ভাগাভাগি। তাহলে বিজেপিই তো ভোট কাটাকাটির সুবিধা নিয়ে বেরিয়ে যাবে। জোটের কোনও মূল্যই থাকবে না। তাই এবার বিরোধী দলগুলিকে সঙ্ঘবদ্ধ করে তোলার উদ্যোগে শুরু করে দেওয়া উচিত রাহুলের।