মমতা কংগ্রেসকে এড়িয়ে কি সঙ্গী পাবে জাতীয় রাজনীতিতে, তৃণমূল-‘মিত্র’রাই তুলছেন প্রশ্ন
মমতা কংগ্রেসকে এড়িয়ে কি সঙ্গী পাবে জাতীয় রাজনীতিতে, তৃণমূল-‘মিত্র’রাই তুলছেন প্রশ্ন
তৃণমূলের ভোটকৌশলী প্রশান্ত কিশোরও বলেছিলেন কংগ্রেস ছাড়া বিজেপি বিরোধী ঐক্যের কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। তৃতীয় বিকল্পের কোনও ভিত্তি নেই জাতীয় রাজনীতিতে। কিন্তু তারপরেও কংগ্রেসকে এড়িয়ে তৃণমূল তৃতীয় শক্তি হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, তা কি জাতীয় রাজনীতিতে মাইলেজ দেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে? জাতীয়স্তরে খুঁজে পাবে জোটসঙ্গী? প্রশ্ন তুলছেন তৃণমূল-বান্ধবরাই।
কংগ্রেস ছাড়া কেন্দ্রে বিজেপি বিরোধী সরকার অসম্ভব
প্রশান্ত কিশোর যে বার্তা দিয়েছিলেন, এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নয়া ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পর সেই প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল-বান্ধবরা। এ বিষয়ে শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত তৃণমূল কংগ্রেস সহ আঞ্চলিক দলগুলিকে সচেতন করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, কংগ্রেস ছাড়া কেন্দ্রে বিজেপি বিরোধী সরকার গড়া অসম্ভব। আঞ্চলিক দলগুলি যেন এই সহজ সমীকরণ মাথায় রাখে।
বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে নতুন খেলা শুরু তৃণমূলের
শিবসেনা মুখপাত্রের জাতীয় রাজনীতির সমীকরণ ব্যাখ্যার পর তৃণমূল কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে পড়েছে। কংগ্রেস অভিযোগ করছে, তৃণমূল এসব করছে নিজে বাঁচতে। বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে না পারলে তৃণমূলের পিছনে ইডি-সিবিআই লেগে থাকবে। তাই বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে নতুন খেলা শুরু করেছে তৃণমূল। গোয়া-ত্রিপুরা-উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের শক্তিক্ষয় করা হচ্ছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বর্তমান ভূমিকায় বার্তা শিবসেনার
কংগ্রেস বিরোধিতা করে জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আর তা যদি হয় সেটা বিজেপিকেই সুবিধা করে দেওয়া হবে। সঞ্জয় রাউত কংগ্রেসকে নিয়ে যে কথা বলেছেন তা অনেক রাজনৈতিক দলের কাছে তেতো লাগলেও, রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন। সঞ্জয় রাউত মূলত তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বর্তমান ভূমিকা নিয়েই এই বার্তা দেন।
কংগ্রেসের ভূমিকা এবং প্রসারতা এখনও দেশজুড়ে অনেক বেশি
২০২৪-এ বিজেপিকে হারাতে গেলে কংগ্রেসকে পাশে চাই। এই চর্চাই এখন মুখ্য বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে জাতীয় রাজনীতিতে। অ-কংগ্রেসি নেতারাই বারবার বলে আসছেন সে কথা। তার মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছিলেন। কিন্তু তিনি বর্তমানে কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে পৃথক মুখ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। কংগ্রেসকে মান্যতা দিচ্ছেন না। অথচ কংগ্রেসের ভূমিকা এবং কংগ্রেসের প্রসারতা এখনও দেশজুড়ে অনেক বেশি।
বিজেপির প্রধান চ্যালেঞ্জার কংগ্রেসই,এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব!
সঞ্জয় রাউতের কথায়, কংগ্রেস গেশরে সবথেকে বড় দল আবার সবথেকে পুরনো দল। বিজেপি বাদে কংগ্রেসই প্রধান বৃহত্তম দল, এ কথা কোনওভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। আর বাকি সব দলই আঞ্চলিক। একটা-দুটো রাজ্য ছাড়া তাদের সেভাবে অস্তিত্ব নেই। সব রাজ্যে কংগ্রেসের অস্তিত্ব রয়েছে। কোথাও তাঁরা প্রান্তিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বেশিরভাগ বড় রাজ্যেই বিজেপির প্রধান চ্যালেঞ্জার কংগ্রেস। তাই কংগ্রেসকে এড়িয়ে যাওয়া কী করে সম্ভব!
বিজেপি নিজেকে সবথেকে বড় দল বলে মনে করে, কিন্তু...
সম্প্রতি তিনি আরও বলেন, বিজেপি নিজেকে সবথেকে বড় দল বলে মনে করে। কিন্তু সেই দল যদি নির্বাচনে হারে তাকে বিরোধী আসনেই বসতে হবে। কংগ্রেসকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা রয়েছে অনেক আঞ্চলিক দলের মধ্যে। কিন্তু ২০১৯-এর ভোটের আগে পাঁচটি রাজ্যে যে নির্বাচন হয়, সেখানেই একটি রাজ্যেও কংগ্রেসের সরকার ছিল না। কিন্তু পাঁচটির মধ্যে তিনটি রাজ্যে কংগ্রেস সরকার প্রতিষ্ঠা হয়। দুটি রাজ্যে আঞ্চলিক সরকার। বিজেপির শূন্য হয়ে যায়।
বিজেপি জনসমর্থন চায় না, জোর করে সরকার গড়তেই পটু
সঞ্জয় রাউতদের মতো অ-কংগ্রেসি নেতারা মনে করেন, পরে বিজেপি যদি কংগ্রেসকে ভাঙিয়ে জনমতকে অগ্রাহ্য করে জোর করে সরকার গঠন করে, তাতে প্রমাণিত হয় না বিজেপি সর্ববৃহৎ দল। বরং মানুষ মনে করে, বিজেপি জনসমর্থন চায় না, তারা জোর করে সরকার গড়তেই পটু। মানুষের রায় তাঁদের কাছে গুরুত্ব পায় না। এভাবে তাঁরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
কংগ্রেস বিরোধিতায় তৃণমূলের পাশ থেকে সরছে মিত্র শক্তিরা
এই পরিস্থিতিতে বিজেপিকে হারাতে হলে কংগ্রেসকে অগ্রাহ্য করলে হবে না। কংগ্রেসকে নিয়েই সমস্ত দলকে চলতে হবে। কংগ্রেসের দাদাগিরি মানতে হলেও কংগ্রেসকে নিয়েই চলতে হবে। কেননা কংগ্রেস বিজেপি-বিরোধী সবথেকে বড় দল। তাদের অস্বীকার করার অর্থ বিজেপিকে সমর্থন করা। আসন্ন গোয়া নির্বাচন নিয়েও যা হচ্ছে, তা সমীচিন নয় বলে মনে করেন সঞ্জয় রাউত। তাই শিবসেনার মতো মিত্রশক্তি যদি তৃণমূলের পাশ থেকে সরে যায়, তবে অন্যদেরও তৃণমূল পাশে পাবে কি না সন্দেহ।