শশী থারুরের প্রাপ্ত ভোট সংস্কার আর পরিবর্তনের! গান্ধী পরিবারের জন্য বার্তা
শশী থারুরের প্রাপ্ত ভোট সংস্কার আর পরিবর্তনের! গান্ধী পরিবারের জন্য বার্তা
কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে পরিবর্তনের মুখ ছিলেন শশী থারুর। তিনি রাজ্য রাজ্যে প্রচার চালিয়ে পরিবর্তনের পক্ষে ভোট চেয়েছিলেন। দাবি তুলেছিলেন সংস্কারের। ভোটে হয়তো হেরেছেন, অনেক ভোটেই হেরেছেন কিন্তু যে ভোট তাঁর পক্ষে গিয়েছেন, সেই ভোট কিন্তু সংস্কার আর পরিবর্তনকামীই। তাই সেটা গান্ধী পরিবারের প্রতি একটা বার্তাও।
কংগ্রেসে একটি শক্তির কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠা করতে সফল শশী
কংগ্রেসের শাসক গোষ্ঠীর বিদ্রোহী ছিলেন স্বাধীনচেতা শশী থারুর। কংগ্রেসের মধ্যে পরিবর্তনের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। পরাজয়ের পরও তিনি নিজেকে কংগ্রেসে একটি শক্তির কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সফল হয়েছেন। তাঁর পক্ষে যে ১০৭২ ভোট গিয়েছে, তা পরিবর্তনের আকাঙ্খাকে জাগ্রত করে। এখন প্রশ্ন কংগ্রেসে যে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সফল হয়েছেন শশী থারুর, তাঁকে কি মল্লিকার্জুন খাড়গে ব্যবহা করবেন তাঁর কমিটিতে। ঠিক যেমন বারাক ওবামা হিলারি ক্লিনটনকে জায়গা দিয়েছিলেন।
থারুরের ১০৭২ ভোট গান্ধী পরিবারের প্রতি একটা বার্তা
কংগ্রেস সভাপতির কুর্সির জন্য ১০৭২ ভোট অনেকটাই কম, কিন্তু শশী থারুরের জন্য ওই ভোট উচ্চ দাবি রাখে। দলের সংস্কার ও পরিবর্তনের পক্ষে এই ভোট। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ১০৭২ জন সদস্য সংস্কার ও পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, কিন্তু আরও অনেক ভোট ছিল যাঁরা সংস্কার ও পরিবর্তনকে সমর্থন করলেও ব্যালট পেপারের দু-নম্বরে ছাপ দেওয়ার সাহস পাননি। শশী থারুরের ১০৭২ ভোট আসলে গান্ধী পরিবারের প্রতি একটা বার্তা।
কংগ্রেসের ইতিহাসে শাসক গোষ্ঠীকে চ্যালেঞ্জ
কংগ্রেসের ইতিহাস ঘাঁটলে এমন আরও চ্যালেঞ্জ সামনে আসবে। যেখানে প্রতিষ্ঠিত দলীয় নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সাফল্যের সরণিতে উঠে এসেছিলেন। ১৯৩৯ সালে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে সুভাষচন্দ্র বসু জিতেছিলেন মহাত্মা গান্ধীর প্রার্থী সীতারামাইয়েক হারিয়ে। ১৯৫০ সালে পিডি ট্যান্ডনের বিজয়, ১৯৭৭ সালে ব্রহ্মানন্দ রেড্ডির সভাপতি হওয়া সবই ছিল শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। ব্রহ্মানন্দ তার আগে ইন্দিরা গান্ধীকে বহিষ্কারের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তারপর ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেস (আই) গড়ে প্রকৃত কংগ্রেস হয়ে উঠেছিলেন।
জয়ের পর কংগ্রেস সভাপতির উদারতার দৃষ্টান্ত
১৯৯৭ সালে শারদ পাওয়ার এবং রাজেশ পাইলট উভয়েই সীতারাম কেশরীর চ্যালেঞ্জার ছিলেন। যদিও দলীয় প্রধান হিসাবে কেশরী যাদেরকে তিনি পরাজিত করেছিলেন তাদের প্রতি উদারতা দেখিয়েছিলেন। দলের মধ্যে গণতন্ত্র নিশ্চিত করেছিলেন। শচীন পাইলটকে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য করা হয়েছিল। কেশরী নিজে সোনিয়া গান্ধীর কাছে হেরে যাওয়ার আগে ১৯৯৮ সালে লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা হিসাবে শরদ পাওয়ারের নাম সুপারিশ করেছিলেন।
সোনিয়া গান্ধীর জিতেন্দ্র প্রসাদের বিরুদ্ধে একতরফা জয়
এরপর সোনিয়া গান্ধী নিজে লড়েছিলেন জিতেন্দ্র প্রসাদের বিরুদ্ধে। একতরফা প্রতিযোগিতায় জিতেন্দ্র প্রসাদকে হারান সোনিয়া। তবে সোনিয়া জিতেন্দ্র প্রসাদের জন্য রাজনৈতিক ভূমিকা নিতে পারার আগে ঘটে যায় অঘটন। শাহজাহানপুরের প্রাক্তন শাসকের স্ট্রোক হয় এবং মারা যান। হালে থারুর কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে লড়াই করলেন একজন পরিবর্তন ও সংস্কারমুখী প্রার্থী হিসেবে। এখন তাঁর পরাজয়ের পর তাঁকে কোন পদে কংগ্রেস ব্যবহার করে, সেটাই দেখার।
শশী থারুরকে নিয়ে কী ভাবছেন বিজয়ী মল্লিকার্জুন
কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী চাইছিলেন শশী থারুর যদি কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে হেরে যান, তবে তাঁকে লোকসভার দলনেতা করতে। অধীর চৌধুরীর জায়গায় তাঁকে স্থলাভিষিক্ত করতে। কেননা অধীর চৌধুরী এই মুহূর্তে একা দুটি পদ সামলাচ্ছেন। তিনি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে বাংলার দায়িত্বে রয়েছেন। এখন মল্লিকার্জুন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী থারুরকে নিয়ে কী ভাবেন সেটাই দেখার। তবে এটা ঠিক যে জি-২৩ গোষ্ঠীর সদস্য শশী থারুর কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিজেকে অনেকটাই উচ্চ মার্গে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন।
মল্লিকার্জুনের হাতে ব্যাটন! এবার কি সুদিন ফিরবে, ২০২৪-এর আগে সাফল্যের দিশারি কংগ্রেস