বিচ্ছেদের ২৫ বছর পর দুই যাদবের মিলন, এলজেডি একীভূত হতে প্রস্তুত লালুর আরজেডি-তে
প্রবীণ সমাজতান্ত্রিক নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শরদ যাদবের দল অবশেষে মিশে যাচ্ছে লালু প্রসাদ যাদবের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সঙ্গে।
প্রবীণ সমাজতান্ত্রিক নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শরদ যাদবের দল অবশেষে মিশে যাচ্ছে লালু প্রসাদ যাদবের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সঙ্গে। শরদ যাদব জানিয়েছেন, তাঁর লোকতান্ত্রিক জনতা দলকে তিনি আরজেডির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে প্রস্তুত৷ বিচ্ছেদের ২৫ বছর পর আবার মিশে যাচ্ছেন দুই যাদব নেতা।
বর্তমানে আরজেডি সুপ্রিমো তথা বিহারের বিরোধী দলের নেতা তেজস্বী যাদব দিল্লিতে শরদ যাদবের বাসভবনে ওই একীকরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। ২০১৮ সালের মে মাসের পর থেকে এলজেডি কখনই কোনও নির্বাচনে লড়াই করেনি। শরদ যাদব নিজেই ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মাধেপুরা থেকে আরজেডির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ২০২০ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে শরদ-কন্যা সুহাসিনী যাদব কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে বিহারীগঞ্জ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
একদা বন্ধু লালুপ্রসাদ যাদব প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিলেন শরদ যাদবের। আবার পুরনো দুই বন্ধু হাতে হাত মিলিয়ে মিশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে একই পার্টিতে। লালুপ্রসাদ যাদবের সঙ্গে তাঁর দলকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে শরদ বলেন, এটি পূর্ববর্তী জনতা দলের বিভিন্ন স্প্লিন্টার সংগঠনকে একত্রিত করার প্রচেষ্টার একটা অংশ হবে।
শরদ যাদব বলেন, দেশে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি। তৎকালীন জনতা দলের পাশাপাশি অন্যান্য সমমনা দলগুলোকে একত্রিত করার লক্ষ্যে আমি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। তাই আমি আমার দল এলজেডিকে আরজেডি-তে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সম্প্রতি তিনি টুইট করেও এই একই বার্তা দিয়েছেন
পঞ্চম পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির মামলায় লালুপ্রসাদ যাদবের কারাবাসের পর থেকে আরজেডির নেতৃত্বে রয়েছেন তাঁর পুত্র তেজস্বী যাদব। তিনি শারদকে পিতৃস্থানীয় এবং সমাজতান্ত্রিক আইকন বলে অভিহিত করেছেন। তেজস্বী বলেন, "ভারতীয় রাজনীতিতে প্রবীণ সমাজতান্ত্রিক নেতা শরদ যাদবের গুরুত্ব সকলেই জানেন। তিনি একজন পিতার মতো আমাদের গাইড করবেন।
আরজেডি মুখপাত্র সুবোধ মেহতা বলেন, আরজেডির সঙ্গে এলজেডির একীকরণ শুধু প্রতীকী নয়। শরদ যাদবজি ঠিকই উল্লেখ করেছেন যে, একীভূতকরণ বিরোধী ঐক্যের দিকে প্রথম পদক্ষেপ হবে। শরদ যাদব একজন এমনই ব্যক্তি যিনি রাজনৈতিক বিভাজন দূর করে ঐক্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। আরজেডি তাঁর অভিজ্ঞতায় অনেক লাভবান হবে।
রাজনৈতিক মহলের একটা অংশ মনে করছে, এই একীভূতকরণের প্রক্রিয়া বেশ কিছুদিন ধরেই চলছিল। শরদ যাদব এবং প্রাক্তন সাংসদ আলি আনোয়ারের মতো এলজেডি-র প্রতিষ্ঠাতা নেতারা গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক প্রান্তরে উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু তাদের দল বিহার বা অন্য কোনও রাজ্যে কোনও অগ্রগতি করতে ব্যর্থ হয়েছিল। শারদ পাওয়ারের নিজেরও মাধেপুরার বাইরে তেমন গণভিত্তি ছিল না। এই কেন্দ্র থেকে তিনি লোকসভায় বেশ কয়েকবার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
আরজেডি-র কাছে শরদ যাদবের গুরুত্ব কেবল তার রাজনৈতিক মর্যাদাই নয়, বরং প্রাক্তন জনতা দল (ইউনাইটেড) নেতা তাঁর তৎকালীন সহকর্মী এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে যদি নিজেদের দিকে টেনে আবার পুরনো ঐক্যের সুরে বাঁধা যায়, তবে তা হবে দেশরে পক্ষে মঙ্গল। নীতীশ কুমার ফের বিজেপি-নেতৃত্বাধীন জোটে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিরোধিতা করেছিলেন। এখন দেখার নীতীশকে বুঝিয়ে তিনি আবার জনতা দলকে ঐক্যবদ্ধ চেহারা দিতে পারেন কি না।
এই একীভূতকরণ শারদ-লালুর সম্পর্ককেও পূর্ণ বৃত্তে পরিণত করবে। তৎকালীন দেবীলাল চৌধুরীর সহকারী হিসেবে শরদ যাদব ১৯৯০ সালের বিহার নির্বাচনের পরে একটি অভ্যন্তরীণ দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে লালুপ্রসাদকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচন করার জন্য জনতা দল শিবিরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভিপি সিং-এর ভূমিকাও ছিল সেই নির্বাচনোত্তর পর্বে।
১৯৯০ সালের পর রাজনৈতিক বন্ধু শরদ ও লালুর মধ্যে শত্রুতা দেখা দেয়। তার ফলে ১৯৯৭ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। লালু আরজেডি প্রতিষ্ঠা করেন এবং শারদ জেডি(ইউ) প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরে জর্জ ফার্নান্দেসের সমতা পার্টির সঙ্গে একীভূত হয়। পরবর্তীকালে শরদ এবং লালুও পর্যায়ক্রমে একে অপরকে পরাজিত করে সংসদীয় নির্বাচনে ভূমিকা রেখেছেন।
আবার তাদের রাজনৈতিক কেরিয়ারের গোধূলিতে এসে দুই পুরানো বন্ধু তথা প্রতিদ্বন্দ্বী একত্রিত হচ্ছেন। এলজেডি-আরজেডি একত্রীকরণ নিয়ে যখন বিহার রাজনীতি ফের সন্ধিক্ষণের সামনে এসে দাঁড় করিয়েছেন শরদ, তখন আদালতে মামলা ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে সক্রিয় রাজনীতি থেকে কার্যত সরে এসেছেন লালু। এখন দেখার দুই পার্টির এই মিলে যাওয়া আবার দুই বন্ধুকে সক্রিয় রাজনীতির অঙ্গনে এনে দিতে পারে কি না।