দক্ষিণ ভারতের বেশ কিছু ট্রেন বাতিল, চেন্নাইয়ের স্টেশনগুলিতে অসহায় অবস্থা যাত্রীদের
দক্ষিণ ভারতের বেশ কিছু ট্রেন বাতিল, চেন্নাইয়ের স্টেশনগুলিতে অসহায় যাত্রীরা
পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিক্ষোভ–প্রতিবাদের জেরে হাওড়াগামী বেশ কিছু ট্রেন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। যার জেরে তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ের সেন্ট্রাল স্টেশন ভরে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর–পূর্ব রাজ্যের একাংশের শ্রমিকে।
দক্ষিণের বেশ কিছু ট্রেন বাতিল
মহিলা-শিশু সহ ওই শ্রমিকরা সাধারণত চেন্নাই-হাওড়া করোমন্ডল এক্সপ্রেস ও চেন্নাই-হাওড়া মেলের অসংরক্ষিত বগিগুলি করে চেন্নাই আসে। কিন্তু শনিবার ও রবিবার এই দু'দিনই সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে এই দু'টি ট্রেনকে বাতিল করে দেওয়া হয়। খুব আশ্চর্যভাবে অসমের কিছু শ্রমিক জানান যে তাঁরা এই শহর দ্রুত ছাড়ার চেষ্টা করছেন, কারণ নতুন আইন পাশ হওয়ার পর তাদের ওপর হামলা হতে পারে। টিকিট কাউন্টার সংলগ্ন প্ল্যাটফর্মে শ্রমিকরা রাত কাটালেও রেলের পক্ষ থেকে তাঁদের খাবার বা কম্বল কিছুই দেওয়া হয়নি। চেন্নাই-হাওড়া সেকশন রেলওয়ের সবচেয়ে উচ্চ-চাহিদাযুক্ত রুট। বছরভর এই দু'টি ট্রেনে রোজ একশো শতাংশ করে আসন ভরে থাকে। এর পাশাপাশি পুদুচেরি-হাওড়া সাপ্তাহিক এক্সপ্রেস, যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস এবং ম্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল-সাঁতরাগাছি বিবেক এক্সপ্রেসও বাতিল করা হয়েছে। এর পাশাপাশি কন্যাকুমারি-হাওড়া এক্সপ্রেস চেন্নাই এগমোর থেকে ছাড়ার পর যাত্রীদের কাটপারি, সালেম ও ত্রিপুরে নামিয়ে দেয়। অন্যদিকে শনিবার চেন্নাই-সাঁতরাগাছি স্পেশার ফেয়ার স্পেশাল ট্রেন সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে ছাড়ে কিন্তু ১১০ কিমি নায়দুপেট্টা যাওয়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই ফের সেন্ট্রাল স্টেশনে ফিরে আসে।
সমস্যায় যাত্রীরা
অসমের এক শ্রমিক আবদুল সোহিল জানান যে তিনি তাঁর পরিবার নিয়ে চেন্নাই ছাড়ার চেষ্টা করছেন, কারণ নতুন আইন পাশ হওয়ার পর তাঁর ওপর এখানে হামলা বতে পারে। আবদুল বলেন, ‘কিছু বছর আগে আমার ভাই ও তার বন্ধুর ওপর বিহারে হামলা হয়েছিল। তাই আমি আমার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে চেন্নাই ছাড়তে চাই।' পশ্চিমবঙ্গের আশিষ মুখার্জি যিনি সেন্ট্রাল স্টেশনে আটকে রয়েছেন জানিয়েছেন যে গত দু'দিন ধরে তিনি ভেপেরির এক হোটেলে রয়েছেন। শনিবার তিনি হাওড়া এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন, কিন্তু ফের তাঁকে সেন্ট্রালে ফিরে আসতে হয়। তিনি বলেন, ‘এখন আমাকে থাকার জায়গা ও খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।' পরিস্থিতি একটু আলাদা পুদুচেরি, কাটপাড়ি ও যশবন্তপুর যাত্রীদের কাছে। শনিবার পুদুচেরি-হাওড়া এক্সপ্রেস ও যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস স্টেশন ছাড়ার ৩০ মিনিট আগে বাতিল করে দেওয়া হয়। ওই দু'টি ট্রেনে মোট ২০০০ যাত্রী ছিলেন। তিরুভাল্লুর রেল যাত্রী সায়ক ও ডিভিশন রেল ইউজারস কনসালটেটিভ কমিটি (ড্রুক)-এর সদস্য কে ভাস্করকে এরকম পরিস্থিতি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে তা জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি বলেন, ‘অসঙ্গতভাবে ট্রেনগুলি ছাড়ার ২০ মিনিট পর তা বাতিল করে দেওয়া হয়। দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে কাটপাড়িতে পৌঁছায় যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে তা বাতিল করলে ভালো ছিল। এরকম উদ্ভট সময়ে ট্রেন বাতিল করায় যাত্রীরা কিভাবে বাড়ি ফেরার বিকল্প খুঁজবেন এখন সেটাই বড় প্রশ্ন।' ভাস্কর জানিয়েছেন, হাওড়াগামী ট্রেনগুলিকে সহজেই ভুবনেশ্বর থেকে অন্য বিকল্প রুটে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করা যেত।
প্রভাব পড়েনি বিমানবন্দরগুলিতে
রেলের এক শীর্ষ অধিকর্তা জানিয়েছেন যে যাত্রীদের নিরাপত্তার কারণেই ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই ও ভুবনেশ্বর সহ প্রধান স্টেশনগুলিতে অশান্তি চলছে এবং কোনও অতিরিক্ত ট্রেন চালু করা হয়নি।' তবে সিএএ-এর প্রতিবাদের প্রভাব বিমান পরিষেবায় পড়েনি এবং ট্রেন বাতিল হওয়ার জন্য অনেকেই বিমানে যাতায়াত করছেন। সেক্ষেত্রে বিমানের ভাড়াও বাড়ানো হয়নি বলে জানা গিয়েছে। গুয়াহাটি, নিউ আলিপুরদুয়ার ও নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে আসা ট্রেন যেগুলি পূর্ব রেলওয়ে জোনে যাবে সেই ট্রেনগুলি রবিবার বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
সিএএ নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি, উত্তরপ্রদেশের ছয় জেলায় বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা