বাংলা-ত্রিপুরায় আশা নেই! নতুন রাজ্যে নতুন নেতার হদিশ সিপিএমে
মহারাষ্ট্রে নাসিক থেকে মুম্বই লং মার্চের মধ্যে দিয়ে নতুন নেতার হদিশ পেল কার্যত পথ হারানো সিপিএম। মার্চ সফল ও শান্তিপূর্ণ হওয়ায় অশোক ধাওয়ালে,বিজু কৃষ্ণন কিংবা অজিত নাওয়াল-সহ কয়েকজনের নাম নিয়ে আলোচনা
মহারাষ্ট্রে নাসিক থেকে মুম্বই লং মার্চের মধ্যে দিয়ে নতুন নেতার হদিশ পেল কার্যত পথ হারানো সিপিএম। মার্চ সফল ও শান্তিপূর্ণ হওয়ায় অশোক ধাওয়ালে, বিজু কৃষ্ণন কিংবা অজিত নাওয়াল-সহ বেশ কয়েকজনের কথা এখন সিপিএমের অন্দরেই আলোচনার কেন্দ্রে।
দশকের পর দশক ধরে বাম আন্দোলন মানে প্রথমেই এসেছে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল কিংবা ত্রিপুরার নাম। কোনও কোনও সময় অঞ্চল ভিত্তিক সংগঠনের জেরে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র তামিলনাড়ু কিংবা অন্ধ্রের নাম উঠে এসেছে। তবে ২০১১-য় পশ্চিমবঙ্গের বাম সরকার অস্তমিত হওয়ার পর ছিল ত্রিপুরা এবং কেরল। ২০১৮-তে ত্রিপুরা যাওয়া পর হাতে শুধুমাত্র কেরল। তবে কেরলে ৫ বছর পর পর ক্ষমতা বদলের রীতি অনুযায়ী পরের ভোটে সেখানে বাম শাসনের অবসান হওয়াটাই দস্তুর। তাহলে একটা সময়ে দেশে বাম শাসিত রাজ্য বলতে আর কিছুই থাকবে না।
যদিও এরই মধ্যে আশা জাগাতে শুরু করেছে মহারাষ্ট্র। সেখানে বিধানসভায় বামেদের শক্তি একেবারে নেই বললেই চলে। কিন্তু তারই মধ্যে দিয়ে কীভাবে গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরা যায় তা দেখিয়ে দিল নাসিক থেকে মুম্বই, ১৮০ কিমি ব্যাপী লং মার্চ। লং মার্চ সফল করার জন্য মহারাষ্ট্রেরই যে বেশ কয়েকজন নেতা গ্রামে পড়ে থেকে লড়াই চালিয়েছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলেন জীবা পাণ্ডু গাভিত, অশোক ধাওয়ালে কিংবা অজিত নাওয়ালে। তাঁরা এলাকায় অনেকদিন ধরেই আন্দোলনে সামিল, কিন্তু নাম সেভাবে সামনে আসেনি, ঠিক যেভাবে এল এই লং মার্চের পর।
অশোক
ধাওয়ালে
বম্মে
মেডিক্যাল
কলেজে
ডাক্তারি
পড়ার
সময়
থেকেই
এসএফআই-এ।
কিন্তু
ডাক্তারি
ছেড়ে
কৃষক
আন্দোলনে
যোগ
দেন
তিনি।
গোটা
লং
মার্চে
তিনি
হেঁটেছেন।
এমন
কী
ছাত্রছাত্রী
কিংবা
সাধারণের
অসুবিধার
কথা
ভেবে
মাঝরাতে
মুম্বই
ঢোকার
পরিকল্পনা
ছিল
তাঁরই।
সিপিএমের
কেন্দ্রীয়
কমিটির
সদস্য
হলেও
পিছনে
থেকে
কাজ
করতেই
ভাল
বাসেন
তিনি।
জীবা
পাণ্ডু
গাভিত
বছর
চৌষট্টির
এই
নেতা
নাসিক-সহ
বিস্তীর্ণ
এলাকায়
প্রায়
৪০
বছর
ধরে
কাজ
করে
চলেছেন।
বিজেপি,
শিবসেনা
কিংবা
এনসিপির
দাপটের
মধ্যেও
সাতবার
বিধানসভায়
নির্বাচিত
হয়েছেন
এই
আদিবাসী
নেতা।
নাসিক
থেকে
লং
মার্চ
শুরু
হওয়ার
অনেক
আগে
থেকেই
সেখানে
প্রস্তুতি
নিয়েছিলেন
গাভিত।
অজিত
নাওয়ালে
আয়ুর্বেদ
চিকিৎসক
হলেও,
চিকিৎসা
ছেড়ে
রাজনীতি
তিনি।
নাসিক
থেকেই
ছিলেন
মিছিলের
সামনে।
এছাড়াও লং মার্চ সফল হওয়ার পিছনে বিজু কৃষ্ণন কিংবা কিষাণ গুজরেরও অবদান রয়েছে। এছাড়াও রয়েছেন কিষাণ সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা।
অশোক ধাওয়ালে জানিয়েছেন, মিছিল যতই মুম্বইয়ের দিকে এগিয়েছে, ভিড়ও বেড়েছে ততটাই। জীবা পাণ্ডু গাভিত জানিয়েছেন, মিছিল শুরু আগে ১৫ দিনের প্রস্তুতি ছিল। তবে স্থানীয় যুবকরা কাজে ব্যস্ত থাকায় গ্রামের মহিলা কিংবা প্রবীণদের ওপর ভরসা রেখেছিলেন তাঁরা। গ্রামের মহিলা কিংবা প্রবীণদের সামনে জমির অধিকার, বার্ধক্য পেনশন, রেশনের দাবি, কৃষিঋণ মকুবের মতো বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছিল।
আর যে বিষয়টি উল্লেখ করার মতো, আন্দোলনের স্বতঃস্ফূর্ততা। গ্রাম থেকে কৃষকরা যখন এসেছেন, বাড়িতে যোগাযোগের জন্য মোবাইল চার্জ দেওয়ার বন্দোবস্ত করে এসেছিলেন তাঁরা। মাথায় থাকা সৌর প্যানেল অনেকেরই নজর কেড়েছে। অন্যদিকে হাইওয়ে দিয়ে যখন মিছিল এগিয়েছে, তখন খাবার, পানীয় জল ওষুধের বন্দোবস্ত করেছেন স্থানীয়রাই। জানিয়েছেন আন্দোলনকারী নেতারা। এমন কী ফিরে যাওয়ার সময় রেল বিশেষ ট্রেনের বন্দোবস্ত করলেও তাতে নিজেদের পয়সা খরচ করেই টিকিট কেটেছেন তাঁরা। আর লং মার্চ শুরু হওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটাই হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। যা নজর কেড়েছে অনেকেরই।
কংগ্রেস বিরোধী হলেও তারা নয়, কিংবা শিবসেনাও নয়, এই ধরনের আন্দোলন যে একমাত্র বামেরাই সফল করতে পারে তা দেখিয়ে দিয়েছেন জীবা পাণ্ডু গাভিত, অশোক ধাওয়ালে কিংবা অজিত নাওয়ালেরা। পক্ক কেশের বিতর্ক সরিয়ে যেভাবে মহারাষ্ট্রে লং মার্চ সফল হয়েছে, তাতে নতুন করে হিসেব কষছেন অনেকেই।