বারে বারেই রঙ বদলাচ্ছে করোনা, শরীর ভেদে ভিন্ন আচরণ ও উপসর্গে বদলের জেরে চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
বারে বারেই রঙ বদলাচ্ছে করোনা, শরীর ভেদে ভিন্ন আচরণ ও উপসর্গে বদলের জেরে চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
দিন যতই গড়াচ্ছে, গোটা বিশ্বে ততই যেন জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে করোনা পরিস্থিতি। সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের কথায় ত্রস্ত গোটা বিশ্ব। ভাইরোলজিস্টদের কথায়, করোনার আচরণে রোজই ভিন্ন ভিন্ন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, ঘ্রাণে অনুভূতিও হারাচ্ছেন অনেক আক্রান্ত। কখনও কখনও করোনা আক্রান্তরা ডেঙ্গু আক্রান্ত না হলেও তার নমুনা ডেঙ্গু পরীক্ষায় পজিটিভ বলে ধরা পড়ছে, যা বিজ্ঞানীদের চিন্তা ক্রমশ বাড়িয়ে দিয়েছে।
উহানে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই শুরু গবেষণা
গত বছরের ডিসেম্বরে চিনের উহান থেকে করোনা ছড়ানোর পর থেকেই বিজ্ঞানীরা ভিন্ন ভিন্ন সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল জোড়া দিয়ে প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের অনেকেরই মতে, গোটা বিশ্বে প্রায় ৩,৫৫,০০০ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া এই ভাইরাসের চরিত্রের একটা দিক এখনও রহস্যের আড়ালে রয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি সিএসআইআরের অভিজ্ঞ ভাইরোলজিস্ট উপাসনা রায় ও তাঁর গবেষকদলের একটি গবেষণায় জানা যাচ্ছে, যে গতিতে করোনা ছড়াচ্ছে তাতে তার স্পাইক প্রোটিনের উপরিভাগে পরিবর্তন ঘটছে। এই পরিবর্তন আক্রান্ত কোষ ও করোনা ভাইরাসের যোগাযোগে প্রভাব আনছে। এর আগে স্পাইক প্রোটিনের এস ১ অঞ্চলে পরিবর্তন দেখা গেলেও এখন এস ২ অঞ্চলেও পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছে।
'স্পাইক প্রোটিন'-এর বিষয়ে গবেষণায় উঠে এল আরও তথ্য
একটি সাক্ষাৎকারে উপাসনা রায় জানিয়েছেন, "প্রোটিনের এস১ অংশ ভাইরাসের সঙ্গে আক্রান্ত কোষের যোগাযোগ স্থাপন করলেও মূলত এস২ অংশটিই ভাইরাস কোষের ত্বক ও আক্রান্ত কোষের ত্বককে একইসাথে যুক্ত হতে সাহায্য করে।" তাঁর মতে, এমন পরিবর্তন লক্ষ্য করার ফলে প্রতিষেধক প্রস্তুতে সুবিধা হবে।
অন্যদিকে গবেষণায় উঠে আসা তথ্যে বাড়ছে বিভ্রান্তি
সম্প্রতি একটি গবেষণায় জানা গেছে, সিঙ্গাপুরের দুজন ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ ধরা পড়ার আগেই ডেঙ্গু অ্যান্টিবডি টেস্টে পজিটিভ রিপোর্ট আসে। যদিও তাঁদের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার কোনো ইতিহাস ছিল না। ফলত, করোনা আক্রান্তদের নকল ডেঙ্গু পজিটিভ আসার খবরে বিভ্রান্ত বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের একটি সমীক্ষায় জানা যায় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া দেশগুলিতে, করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেকটাই কম।
তবে কি বিষে বিষেই বিষক্ষয় ?
এদিকে ভাইরলোজিস্ট শুভজিৎ বিশ্বাস জানিয়েছেন, "গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমী দেশগুলিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম বলেই করোনার বাড়াবাড়ি। অন্য যে দেশগুলিতে ডেঙ্গু ছড়ায়, সেখানকার মানুষ ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হয়েছেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে সেখানেই করোনার প্রকোপও অপেক্ষাকৃত কম!" তবে বর্তমানে ডেঙ্গু ও করোনার যোগাযোগ নিয়ে আরও বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। তাছাড়া করোনার উপসর্গ হিসেবে ঘ্রাণশক্তি হারানোর ব্যাপারটি নিয়েও গবেষণা চলছে বলেও খবর। পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরবর্তীকালে সম্প্রতি এক শিশুর শরীরে হাতে-পায়ে একাধিক ক্ষত ফুটে উঠেছে। ভাইরোলজিস্টদের মতে, এই ধরণের শারীরিক ক্ষত যা 'কোভিড টোজ' নামে পরিচিত। এটিও করোনা আক্রান্ত হওয়ার নতুন উপসর্গ।
ট্রেনে শ্রমিক মৃত্যু বা ট্রেনের পথ হারানো, দায়ি 'সময়'! এ কেমন অজুহাত রেলের?