স্বেচ্ছামৃত্যু মামলা সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট
এর আগে ২০১১ সালের ৮ মার্চ সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি মার্কণ্ডেয় কাটজু অরুণা শানবাগ মামলায় আইনি স্বীকৃতি দিয়েছিলেন প্যাসিভ ইউথ্যানাসিয়াকে। কেন্দ্রকে আদেশ দেন, একটি নির্দেশিকা তৈরি করতে। তারা তো সেটা করেইনি, উল্টে বারবার বিরোধিতা করে এসেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য হল, ভারতের সংবিধান স্বেচ্ছামৃত্যুকে স্বীকার করে না। তাই এর অনুমতি দেওয়ার অর্থ হল, সংবিধান-বিরোধী কাজ করা।
কিন্তু হাল ছাড়েনি প্যাসিভ ইউথ্যানাসিয়ার সমর্থকরা। 'কমন কজ' নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শীর্ষ আদালতে জনস্বার্থ মামলা ঠুকে বলে, এক্ষুণি প্যাসিভ ইউথ্যানাসিয়াকে আইন প্রণয়ন করে স্বীকৃতি দিক সরকার। বিচারপতি মার্কণ্ডেয় কাটজুর দেওয়া রায় মেনে তৈরি করুক নির্দেশিকা। মঙ্গলবারও পুরোনো যুক্তিতে অটল থাকে কেন্দ্রীয় সরকার। অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল সিদ্ধার্থ লুথরা যথারীতি এর বিরোধিতা করেন। গোটা ঘটনায় সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িয়ে আছে দেখে মামলাটি পাঠিয়ে দেওয়া সাংবিধানিক বেঞ্চে।
জেনে নেওয়া ভালো, ইউথ্যানাসিয়া কী?
বাংলা তর্জমায় একে বলে স্বেচ্ছামৃত্যু। ইউথ্যানাসিয়া শব্দটি চিকিৎসা বিজ্ঞানে সাধারণত ব্যবহার হয়। ইউথ্যানাসিয়া দু'ধরনের হয়। প্যাসিভ ও অ্যাক্টিভ।
ইউথ্যানাসিয়া দু'ধরনের হয়, প্যাসিভ ও অ্যাক্টিভ
ধরা যাক, কোনও একজন ব্যক্তি কোমায় চলে গিয়েছে। সারা শরীর অসাড়। শুধু বেঁচে আছে ভেন্টিলেশনের দৌলতে। ডাক্তার বলে দিয়েছে, এই অবস্থা থেকে ফেরার কোনও উপায় নেই। মরণ অনিবার্য। একে বলে 'পার্মানেন্ট ভেজিটেটিভ স্টেট'। তখন সেই লোকটির পরিবারের অনুমতি নিয়ে ডাক্তার ভেন্টিলেশন খুলে দিল বা শরীরে ওষুধ দেওয়া বন্ধ করে দিল। এর ফলে আস্তে আস্তে মারা যাবে লোকটি। তাতে বাইরে থেকে ওষুধ বা ইঞ্জেকশন দিয়ে সংশ্লিষ্ট লোকটিকে মারা হল না ঠিকই, কিন্তু তাকে একটা অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দেওয়া হল। একে বলা হচ্ছে প্যাসিভ ইউথ্যানাসিয়া বা নিষ্ক্রিয়ভাবে স্বেচ্ছামৃত্যু।
এবার ধরা যাক, কারও সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে ক্যান্সার। রোজ অসহ্য বেদনায় ছটফট করছে। পরিবারের লোক, বন্ধুবান্ধবও কষ্ট পাচ্ছে প্রিয়জনের সেই অবস্থা দেখে। ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছে, আর কোনও উপায় নেই। এবার শুধু দিন গোনার পালা। এই অবস্থায় রোগী নিজে মরতে চাইল যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। তখন ডাক্তার বাইরে থেকে ইঞ্জেকশন বা ওষুধ দিয়ে ওই ব্যক্তিকে শীতল মরণের চাদরে ঢেকে দিল। এটাই হল অ্যাক্টিভ ইউথ্যানাসিয়া বা সক্রিয়ভাবে স্বেচ্ছামৃত্যু। এখানে রোগী নিজে উদ্যোগী হয়ে নিজের মৃত্যু চাইছে।
সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে প্যাসিভ ইউথ্যানাসিয়া নিয়ে। সংবিধানের ২১ ধারায় জীবনের অধিকার (রাইট টু লাইফ) স্বীকৃতি পেয়েছে। কেন্দ্রের বক্তব্য, প্যাসিভ ইউথ্যানাসিয়াকে মেনে নিলে সংবিধানকে অমান্য করা হবে। আর স্বেচ্ছামৃত্যুর পক্ষে যারা লড়ছে, তাদের জবাব, ২১ ধারাতেই বলা হয়েছে যে, আইননির্দিষ্ট পদ্ধতিতে (প্রসিডডিওর এস্টাব্লিশড বাই ল) কাউকে জীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায়। ফলে তা সংবিধান-বিরোধী কাজ নয়। প্যাসিভ ইউথ্যানাসিয়াকে আইন স্বীকৃতি দিলে আইন মেনেই স্বেচ্ছামৃত্যু ঘটানো হবে। এটা তাই সংবিধান লঙ্ঘনের সমতুল বলে গণ্য হবে না। আইনের এত মারপ্যাঁচ থাকার কারণে বিষয়টি পাঠানো হয়েছে সাংবিধানিক বেঞ্চে।