লকডাউনে বাড়ি বসে কাজ করার সময় যৌন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন মহিলারা
লকডাউনে বাড়ি বসে কাজ করার সময় যৌন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন মহিলারা
লকডাউনের কারণে এখন বেশিরভাগ সংস্থার কর্মী বাড়ি থেকে কাজ করছেন। তবে এই লকডাউনের সময় মেয়েরা সবচেয়ে বেশি যৌন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অদ্ভুত সময়ে অবাঞ্ছিত ভিডিও কলের অনুরোধ, ভার্চুয়ান বৈঠকের সময় কথা বলা সহ এ ধরনের যৌন হেনস্থার অভিযোগ আসছে লকডাউনের সময় মহিলাদের কাছ থেকে, জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
যৌন হেনস্থা হচ্ছেন মহিলারা
করোনা ভাইরাস লকডাউনের সময় বহু পেশাদার মহিলাকে বাড়ি বসে এ সময় কাজ করতে হচ্ছে এবং কর্মজীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হচ্ছে। বাড়ি থেকে কাজ করার সময় কীভাবে যৌন হয়রানির অভিযোগ করা যায় সে সম্পর্কে তারা অনিশ্চিত থাকায় অনেক মহিলা গাইডের জন্য বিশেষজ্ঞদের কাছে যোগাযোগ করেছিলেন। সাইবার হয়রানির বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণকারী আকাঙ্খা অ্যাগেনস্ট হ্যারাসমেন্ট সংগঠনের কর্ণধার আকাঙ্খা শ্রীবাস্তব বলেন, ‘বাড়ি থেকে কিভাবে কাজ করা হবে সে বিষয়ে কোনও স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই সংস্থাগুলির আর যে কারণে বিভ্রান্ত হচ্ছেন মহিলারা। লকডাউন কার্যকর হওয়ার পর থেকেই আমি প্রতিদিন ৪-৫টি করে হেনস্থার অভিযোগ পেয়েছি।'
অভিযোগের বদলে পরামর্শ
যদিও লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে জাতীয় মহিলা কমিশনের কাছে এ ধরনের অভিযোগের সংখ্যা কম। তবে এ প্রসঙ্গে বিষেশজ্ঞরা জানিয়েছেন মহিলারা এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ না করে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছেন। শ্রীবাস্তব বলেন, ‘লকডাউনের সময় অনেক মহিলাই তাঁদের চাকরির সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত তাই তাঁরা বুঝতে পারছে না এ বিষয়ে কথা বলা উচিত নাকি চুপ করে থাকাই শ্রেয়। মহিলাদের অবিচ্ছিন্ন দুঃশ্চিতা থাকে যে তাঁদের সমস্যার মতো করে যেন দেখা না হয়।' তিনি জানান, বাড়ি থেকে কাজ করার অর্থই হল কোনও বিঘ্ন ঘটতে চলেছে এবং সেটাকে অবশ্যই দায়িত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে কিন্তু তা হচ্ছে না এবং এটি নারীদের ওপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করছে।
বাড়ি থেকে কাজ করার অভিজ্ঞতা প্রথম
আকাঙ্খা বলেন, ‘এর আগে আমাদের কোনওদিনই বাড়ি থেকে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়নি, মহিলারা সর্বদা দ্বিতীয় অনুমান করে যদি এটি হয়রানি হয়, তবে কিভাবে প্রতিক্রিয়া করবেন বা আপত্তিকর অথবা অসম্মানজনক দৈহিক ভাষাকে কিভাবে বর্ণনা করবেন? পুরুষ সহকর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের স্টক করে বা বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠায়, বন্ধু না হওয়া সত্ত্বেও তারা মহিলাদের ছবিতে মন্তব্য করে।' আকাঙ্খা বলেন, ‘বাড়ির কোনও দায়িত্ব রয়েছে এমন মহিলাকে যদি অদ্ভুত সময়ে অনলাইনে এসে কথা বলতে বলা হয় তবে সেই মহিলার মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে, এমনকি যদি সেই সময়ের পরিবেশ তাঁর পছন্দ নাও হয় তাও। এটি মহিলাদের যৌন হয়রানির খুব সূক্ষ্ম উপায়।'
নানাভাবে যৌন হেনস্থা
উদাহরণ স্বরূপ শ্রীবাস্তব জানান, এক মহিলা সম্প্রতি একটি ভিডিও কলের অনুরোধ পান তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রাত ১১টার সময়। তাও আবার জরুরি বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য। কিন্তু যখন ওই মহিলা ভিডিও কলে আসেন তখন দেখেন যে স্বাভাবিক দিনের মতো যে বিষয়টি ই-মেলে পাঠানো যেত ঠিক একই বিষয় নিয়ে ভিডিও কলে কথা বলছেন তাঁর বস। এমনকি রাতের বেলা মহিলা কর্মীদের ভিডিও কল করে সাধারণ বিষয় নিয়েও কথা বলা হচ্ছে। কিছু মহিলা অভিযোগ করেছেন যে ভার্চুয়াল বৈঠকের সময় তাঁরা অস্বচ্ছন্দ্য বোধ করেন কারণ তাঁদের সহকর্মীদের অদ্ভুত পোশাকের জন্য।
কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার জন্য আইন
যৌন নিগ্রহের নিষিদ্ধকরণ আইন ২০১৩ (বা পোস) আইন মহিলাদের জন্য নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করতে এবং শ্রমজীবী মহিলাদের অধিকার এবং সম্মানের সাম্যের অধিকারকে সম্মান করে এমন পরিবেশ তৈরি করার জন্য প্রণীত হয়েছিল। সাইবার সুরক্ষায় নারীদের শিক্ষিত করে তোলা সংস্থা ইনফোসেক গার্লস-এর এক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, প্রচুর মহিলারা রিপোর্ট করেন না তবে তারা এ জাতীয় পরিস্থিতিতে কী করবেন তা নিয়ে আলোচনা করতে চান। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক সময় দেখা গেছে যে লোকেরা বুঝতে পারে না যে কলের অপরপ্রান্তে মহিলা রয়েছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে বা অজান্তেই আপত্তিকর মন্তব্যগুলি করে বসে। বিশেষত লকডাউনের সময যখন মহিলারা বাড়ি বসে কাজ করছেন তখন অফিসের সহকর্মীরা যখন-তখন ফোন বা ভার্চুয়াল বৈঠকের ফলে মহিলারা অস্বচ্ছন্দ্য বোধ করছেন যা তাঁদের পরিবারেও সমস্যা সৃষ্টি করছে।
বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারকে ত্রাণ বিলির অনুমতি হাইকোর্টের