'১৯৬২ যুদ্ধের পর...', লাদাখ সংঘাতের মাঝে ভারত-চিন সম্পর্ক নিয়ে কী বললেন জয়শঙ্কর
১৯৬২ যুদ্ধের পর সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারত ও চিনের সম্পর্ক। ভারত-চিন সম্পর্কের বর্ণনা দিয়ে এদিন এমনটাই বললেন কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। চিনা আগ্রাসন নীতির জেরে কার্যত তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে ভারত-চিন কূটনৈতিক সম্পর্ক। এহেন পরিস্থিতিতে ক্রমশ ঘনিয়ে এসেছে যুদ্ধের পরিস্থিতি। আর জয়শঙ্করের কথায় ফুটে উঠল সেই আশঙ্কাই।
৪৫ বছরে এই প্রথমবার...
একটি সাক্ষাৎকারে সাক্ষাৎকারে এস জয়শঙ্কর বলেন, ১৯৬২ যুদ্ধের পর নিশ্চিতভাবে এটাই সবচেয়ে গুরুতর পরিস্থিতির মধ্যে দুই দেশের সম্পর্ক। ৪৫ বছরে এই প্রথমবার সীমান্তে আমাদের সেনা শহিদ হয়েছেন। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় দুই দেশের তরফে যে বিপুল সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে সেটাও এই প্রথমবার।'
আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে
এর পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, 'গোটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে চিনের সেনাকে পিছু হটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে কূটনৈতিক স্তরে দীর্ঘ আলোচনার পর খুব অল্প জায়গাতেই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ভারত চিনকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে সীমান্তে শান্তি বজায় রাখা দুই দেশের সম্পর্কের মূল শর্ত।'
গম্ভীর পরিস্থিতি
পাশাপাশি বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আরও বলেন, 'আমরা যদি গত তিন দশকের পর্যালোচনা করি তবে এটি স্পষ্ট যে পরিস্থিতি ভআলো নয়। সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে বেশ কয়েক দফা আলোচনা সত্ত্বেও, ভারত ও চিন বাহিনী সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে পূর্ব লাদাখে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে।'
উদ্বেগ বাড়ছে সীমান্তে
১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান শহিদ হন। এরপর থেকেই দফায় দফায় অশান্তির সৃষ্টি হয় ভারত-চিন সীমান্তে। সম্প্রতি দুই দেশের সেনা আধিকারিকদের বৈঠকের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। গালওয়ান থেকে সেনা সরিয়ে নেয় লাল সেনা। তবে মঙ্গলবার হোতানের উপগ্রহ চিত্রটি সামনে আসার পর ফের একবাবর উদ্বেগ বাড়ছে সীমান্তে।
চিন এখনও অবস্থান করছে প্যাংগংয়ে
হটস্প্রিং থেকে সরে গেলেও নাছোড়বান্দা চিন এখনও অবস্থান করছে প্যাংগংয়ে। লাদাখের প্যাংগং হ্রদের কাছে গ্রিন টপের উপর থেকে চিনা সেনা দখলদারি সরাতে না চাওয়াতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও তিক্ত হচ্ছে চিনের। প্যাংগং সোতে চিনা সেনারা ফিঙ্গার ৫ এ ফিরে এসেছিল, তবে তারা এখনও ফিঙ্গার ৪-এর রিজলাইন দখল করে রয়েছে। চিনা সেনারা ফিঙ্গার ৪ থেকে আঙুলের ৮-এর মধ্যে ৮-কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে তাদের তৈরি কাঠামোগুলিকেই এলএসি বলে দাবি করে যাচ্ছে এখনও।
টহল দেওয়ার অধিকার নিয়ে সংঘাত৬
টহলদারী সীমান্ত নিয়ে বরাবরই ভারত ও চিনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল। ভারত বিশ্বাস করে 'ফিঙ্গার ১' থেকে 'ফিঙ্গার ৮' পর্যন্ত টহল দেওয়ার অধিকার রয়েছে তাদের এবং চিন মনে করে যে 'ফিঙ্গার ৮' থেকে 'ফিঙ্গার ৪' পর্যন্ত টহল দেওয়ার অধিকার রয়েছে তাদেরই। ১৫ জুন, এই 'ফিঙ্গার ৪' এলাকাতেই উভয় পক্ষের সেনার মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ বাঁধে। 'ফিঙ্গার ৪'-এ এই জন্যেই উল্লেখযোগ্য হারে সেনার সংখ্যা বাড়িয়েছিল চিন, যাতে ভারতীয় সেনারা আর 'ফিঙ্গার ৮' এর দিক দিয়ে টহল দেওয়ার সুযোগ না পায়।