যুদ্ধের জের, ১৪ বছরে সর্বোচ্চ শিখরে জ্বালানি তেলের দাম
যুদ্ধের জের, ১৪ বছরে সর্বোচ্চ শিখরে জ্বালানি তেলের দাম
যুদ্ধ চলছে রাশিয়া ইউক্রেনের আর তার জ্বালায় জ্বলছে গোটা বিশ্ব, অন্তত এমনটাই মনে করছেন দুনিয়ার আম আদমি। কারণ একদিকে যেখানে চরম পতনের মুখে শেয়ার বাজার গুলি, ঠিক তেমনই পাল্লা দিয়ে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে সোনা, রূপোর মত ধাতু আর সর্বোপরি পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্যের। সেখানে স্বভাবতই পকেটে টান বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের। আর এবার পেট্রোল ডিজেল সহ জ্বালানি তেলের দাম যে পর্যায়ে গিয়ে ঠেকল তা এককথায় রেকর্ড। কারণ ২০০৮ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে তেলের দাম।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের ফল যে খুব একটা ভালো হবে না সে বিষয়ে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আর এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশ গুলির সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি আলোচনায় বসে রাশিয়ার সঙ্গে প্রেট্রোপণ্য এবং গ্যাস আমদানি-রপ্তানির ব্যাপারে সম্ভাব্য বড়সড় নিষেধাজ্ঞা জারি করা নিয়ে আলোচনা করার পরেই বিশ্ব জুড়ে তেলের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। ইতিমধ্যেই রবিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, রাশিয়ায় তেল সরবরাহের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করছে বাইডেন প্রশাসন এবং মিত্রপক্ষের দেশগুলি। হোয়াইট হাউস অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলিকে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার আগ্রাসনের জন্য মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার চাপ বৃদ্ধি করছে। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে আন্তর্জাতিক তেল বাজার।
মহার্ঘ জ্বালানি
সোনা রূপার মত দামী ধাতুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ বা বিভিন্ন স্থানে তেলের দাম কেমন হবে, তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত পেট্রোলিয়ামের দামের উপর। কিন্তু গ্লোবাল অয়েল বেঞ্চমার্ক ১৩০ মার্কিন ডলারের এর নিচে ফিরে আসার আগেই ব্যারেল প্রতি ১৩৯ মার্কিন ডলারের উপরে উঠে গিয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে তেল কম সরবরাহের আশঙ্কায় সাম্প্রতিক দিনগুলিতে জ্বালানি বাজারগুলি বড় ধাক্কা খেয়েছে। ফলে জ্বালানির দাম এবং গৃহস্থালির বিল বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহকরা ইতিমধ্যে অতিরিক্ত খরচের প্রভাব অনুভব করছেন। আরএসি বা র্যাক অনুসারে, ইংল্যান্ডে পেট্রোলের গড় দাম লিটার প্রতি ১.৫০ ইউরোর উপরে বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে রাশিয়া ইউক্রেন সংঘাতের মধ্যে গ্যাসের এই লাফিয়ে দাম বৃদ্ধি নতুন চিন্তার বাড়াচ্ছে। সমীক্ষা অনুযায়ী এর ফলে রানির দেশে বার্ষিক গৃহস্থালীর জ্বালানি বিল ৩,০০০ ইউরোতে পৌঁছতে পারে, যা যথেষ্ট উদ্বেগ জনক। সেই তালিকায় যুক্ত ভারতও। আগেই দেশে তেলের দাম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে জ্বালানির দাম গুটি গুটি ডবল সেঞ্চুরির দিকে যেতে শুরু করেছে, ফলে আম আদমির পকেটে যে মহাটান পড়বে তা বলে বাহুল্য।
তলানিতে শেয়ার বাজার
তবে শুধুমাত্র জ্বালানি তেল নয়, লাগাতার পতনের মুখে বিশ্বজোড়া শেয়ার মার্কেটও। জাপানের শেয়ার সূচক নিক্কেই এবং হংকংয়ের সূচক হ্যাং সেং ৩% এরও বেশি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এশিয়ার তামাম শেয়ার বাজারগুলি সোমবার আবারও পতনের দিকে গিয়েছে। তথৈবচ অবস্থা ভারতের শেয়ার সূচক সেনসেক্স ও নিফটির। সোমবার সপ্তাহের প্রথম কর্ম দিবসেই বাজার খোলার কিছুক্ষণের মধ্যে ৭মাসে প্রথম ৫৩,০০০ পয়েন্ট পতন হল সেনসেক্সের। পাল্লা দিতে পিছিয়ে নেই নিফটিও। এদিন ১৫,৯০০ পয়েন্ট নীচে নেমেছে এই শেয়ার সূচক। যার ফলে ফের বড় ক্ষতির মুখোমুখি হলেন বিনিয়োগকারীরা।
রাশিয়াকে না
শুধু যে তেল বা গ্যাস তাই নয়, পাশাপাশি আরও বেশকিছু বিষয়ে ধাক্কা খেতে চলেছে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ। বিশ্বব্যাপী নামী ব্র্যান্ডগুলি ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করতে চলেছে। স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্স জানিয়েছে যে রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের পর তারা সে দেশে তাদের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। সেই একই পথে পা মিলিয়েছে ভিসা, মাস্টারকার্ড এবং পিডব্লিউসি-এর মত সংস্থাও। এইসব কোম্পানি রাশিয়া থেকে তাদের পাত্তারি গোটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।