গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্রামীণ কেন্দ্রগুলো, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্রামীণ কেন্দ্রগুলো
গুজরাতের নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, কোনও দিকে ভোটের দিক মোড় নেবে সেই নিয়ে উত্তেজনা ততই বাড়ছে। এতদিন গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনে মূলত কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে লড়াই হতো। এবারে গুজরাতের নির্বাচনে আসরে নেমেছে আপ। যার জেরে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই বাড়ছে। গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে বিজেপি গ্রাম ও শহরের মধ্যে ব্যবধান মেটাতে চাইছে।
গুজরাতের শহরে বিজেপির প্রভাব
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, গুজরাতের বাসিন্দাদের ৪৩ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করেন। অর্থাৎ গুজরাতের একটা বড় অঙ্কের মানুষ শহরে বাস করেন। কিন্তু বিধানসভার আসন হিসেব করলে বোঝা যাবে, ১৮২টি আসনের মধ্যে গুজরাতে ৯৮টি আসন গ্রামীন নির্বাচনী এলাকার মধ্যে পড়ে। অন্যদিকে ৮৪টি এলাকা শহর বা আধা শহর নির্বাচনী এলাকায় মধ্যে পড়ে। ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়, বিজেপির শহুরে অঞ্চলে প্রভাব বেশি ছিল। অন্যদিকে, কংগ্রেসের গ্রামীন অঞ্চলে প্রভাব বেশি ছিল। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকার ফলে বিজেপির দাপট শহুরে অঞ্চলে বেশি।
বিজেপির চিন্তার কারণ
এতদিন গুজরাতের বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল কংগ্রেস। তবে ২০২২ সালের নির্বাচনে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির নেতৃত্বাধীন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন (এআইএমআইএম) এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন আপ অংশগ্রহণ করেছে। গুজরাত নির্বাচনের আগে জোর প্রচার শুরু করেছে তারা। যা বিজেপির চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে, এই দুটো দল কংগ্রেসের ভোট কাটবে। কিন্তু তারপরেও বিজেপি নিশ্চিন্ত হতে পারছে কই।
গ্রাম ও শহরের বিভাজন
১৯৯৮ সাল থেকে টানা বিজেপি গুজরাতে ক্ষমতায় আছে। ২০১৭ সালে গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৮৪টি শহরের আসনের মধ্যে ৬৩টিতে জিতেছে। আবার ৯৮টি গ্রামীন আসনের মধ্যে বিজেপি ৩৬টি আসনে জিততে পেরছে। পরিসংখ্যান বলছে ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শহরাঞ্চলের স্ট্রাইকরেট ছিল ৭৭ শতাংশ। যা ২০১২ সালের বিধানসভা নির্বাচনের থেকে কম। শহরাঞ্চলে ওই সময় স্ট্রাইক রেট ছিল ৮৭ শতাংশ। সেই তুলনায় বিজেপির গ্রামীণ অঞ্চলে স্ট্রাইক রেট ৩৭ শতাংশ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৯৫ সাল থেকে শহুরে অঞ্চলে গেরুয়া শিবিরের আধিপত্য রয়েছে গুজরাতে।
আপের আগমন
২০২২ সালের নির্বাচনে আপ গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনের জোর প্রচার চালাচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা জানাচ্ছেন, আপ বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় পরিষেবা বিনামূল্যে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মধ্যবিত্তদের ভোট জিততে চাইছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, বিজেপির ভোট ভাঙতে পারবে কিনা। গুজরাতে আপের সাধারণ সম্পাদক মনোজ সোরাথিয়া বলেন, আপ গুজরাতের নির্বাচনে গ্রামীণ ও শহর উভয় অঞ্চলে প্রভাব পড়েছে। গুজরাতের মধ্যবিত্তরা কোভিডের পর মুদ্রাস্ফীতির কবলে পড়েছেন। তাঁরা তাই রাজ্যে নতুন কাউকে চাইছে, যারা তাঁদের সমস্যা বুঝতে পারবেন। যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গুজরাতে বিজেপির দুর্গ রাতারাতি বদল হয়ে যাবে না।
ভোট কাটার আপ
কংগ্রেসের একজন প্রবীণ পরেশ ধনানি বলেন, আপের প্রবেশ গুজরাতে শহর ও আধা শহরে বিজেপি সমর্থকদের ভোট কাটবে। তাতে লাভবান হবে কংগ্রেস। তিনি বলেন, আপ মূলত শহর ও আধা শহরে বিজেপির ভোট কাটবে। গত ৩০ বছর ধরে বিজেপিকে পরাজিত করতে পারেনি কংগ্রেস। চলতি নির্বাচনে আপের ভোট কাটার জেরে কংগ্রেস সুবিধা পাবে। পাল্টা বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে, আপ কংগ্রেসের ভোট অনেকটা কাটবে।