বিক্রমকে হাতছাড়া নয়, রোটোম্যাক পেন-এর কর্তা ও ছেলেকে গ্রেফতার করল সিবিআই
বিক্রম কোঠারির বিরুদ্ধে ঋণ খেলাপের অভিযোগও দায়ের করেছিল ব্য়াঙ্ক অফ বারোদা। সেই অভিযোগের সূত্র ধরেই সিবিআই বিক্রম কোঠারির বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছিল।
পিএনবি আর্থিক কেলেঙ্কারি সামনে আসার পর থেকেই সামনে এসেছিল রোটোম্যাক পেন-এর ঋণ খেলাপের বিষয়টি। অভিযোগ ছিল রোটোম্যাক পেনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিক্রিম কোঠারি ৩,৭০০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপ করেছেন। বিক্রম কোঠারির বিরুদ্ধে ঋণ খেলাপের অভিযোগও দায়ের করেছিল ব্য়াঙ্ক অফ বারোদা। সেই অভিযোগের সূত্র ধরেই সিবিআই বিক্রম কোঠারির বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছিল। অবশেষে ২২ ফেব্রুয়ারি তথা বৃহস্পতিবার বিক্রম কোঠারি এবং তাঁর ছেলেকে গ্রেফতার করল সিবিআই।
বিক্রম কোঠারি বিখ্যাত পান মশালা 'পান পারাগ'-এর প্রতিষ্ঠাতা মনসুখভাই কোঠারির ছেলে। মনসুখভাই কোঠারির প্রতিষ্ঠা করা 'পান পরাগ' কতটা সফল ব্র্য়ান্ড তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। আট ও নয়ের দশকে টেলিভিশন থেকে শুরু করে সিনেমা হলে ভরে থাকত 'পান পরাগ'-এর বিজ্ঞাপন। এমন এক সফল ব্র্যান্ডের উত্তরাধিকার হয়েও বিক্রম কোঠারি পৈতৃক ব্যবসার রাশ ছোট ভাই-এর হাতে ছেড়ে দিয়ে খুলেছিল পেন তৈরির সংস্থা। নয়ের দশক ও ২০-এর দশকের প্রথম দিকে যথেষ্টই সফল হয়েছিল রোটোম্যাক পেন।
এই রোটোম্য়াক পেন-এর সংস্থার আধুনীকিকরণ-এর জন্য ব্যাঙ্ক থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিলেন বিক্রম কোঠারি। এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক, ব্য়াঙ্ক অফ বারোদা, ব্য়াঙ্ক অফ মহারাষ্ট্র, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক, ওরিয়েন্টাল ব্য়াঙ্ক অফ কমার্স, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক থেকে এই ঋণ নিয়েছিলেন বিক্রম। যার মোট মূল্য ছিল ৩,৬৯৫ কোটি টাকা। যা অনাদায়ে ৩,৭০০ কোটি টাকাতে গিয়ে পৌঁছেছে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি ব্যাঙ্কগুলি বিক্রমকে ঋণ অনাদায়ে 'উইফুল ডিফল্টার' বলে ঘোষিত করে। এর বিরুদ্ধে এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা করে জিতেও যান তিনি। অভিযোগ, এরপরও বিক্রম ঋণ মেটানোর কোনও উদ্যোগ নেননি। শেষপর্যন্ত বিক্রমের কানপুরে প্রতারণার মামলা দায়ের করে ব্যাঙ্ক অফ বারোদা।
বিক্রম অবশ্য প্রথম থেকেই দাবি করে আসছিলেন তিনি কোনও অনৈতিক বা আইন বহির্ভূত কাজ করেননি। পিএনবি আর্থিক কেলেঙ্কারির পর্দা ফাঁস হওয়ার পর ফের সামনে চলে আছে রোটোম্যাক পেনের ঋণ খেলাপের মামলা। সিবিআই গত কয়েক দিন ধরেই বিক্রম ও তাঁর ছেলেকে জেরা করছিল। মাঝে এমন খবরও চাউর হয় যে বিক্রম দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কিন্তু প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে রোটোম্যাক সংস্থা জানিয়ে দেয় তাঁদের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভারতেই আছেন। এমনকী কানপুরে নিজের বাড়ি ও অফিসে নিয়মিত যাতায়াতও করছেন। বুধবার টানা বিক্রম ও তাঁর ছেলে রাহুলকে জেরা করেছিল সিবিআই। আর বৃহস্পতিবার তাঁদের গ্রেফতার করে হেফাজতে নিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
ঋণ খেলাপ করলেও বিক্রম-এর বিলাস বহুল জীবনে তাঁর কোনও ছাপ পড়েনি। কানপুরে তাঁর রাজকীয় প্রাসাদপোম অট্টালিকা এবং একের পর এক লাক্সারি গাড়ি-র কাহিনি লোকের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৯৯ সালে ভাই দীপক কোঠারির হাতে বাবার 'পান পরাগ'-এর ব্যাবসা দায়িত্বভার দিয়ে পেনের ব্যবসায় নেমেছিলেন বিক্রম।