জোটে হোঁচট! কর্ণাটকে মন্ত্রিসভায় জায়গা না পাওয়ায় বিদ্রোহ
মন্ত্রিসভার স্থান না পাওয়া নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যে বিদ্রোহের ফলে টলমল কর্ণাটকের কুমারস্বামী সরকার।
বড় রকমের হোঁচট খেল কর্ণাটকে কংগ্রেস-জেডিএস জোট সরকার। বুধবারই কুমারস্বামী মন্ত্রিসভার প্রথম সম্প্রসারণ হয়েছে। আর তারপরেই মন্ত্রিসভায় স্থান না পাওয়া বেশ কয়েকজন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা ক্ষোভ উগরে দিতে শুরু করেছেন। এঁদের একাংশ যখন এরপরেও সরকার না ভাঙার আশ্বাস দিচ্ছেন, তখন আরেক অংশ বেশ জোরালো হুমকি দিতে শুরু করেছেন। ফলে পথ চলা শুরুর দুসপ্তাহের মধ্যেই টলমল করছে কর্ণাটকের নয়া জোট সরকার।
জানা গেছে এই বিক্ষুব্ধ নেতাদের ঠান্ডা করতে বৃহস্পতিবার বেশি রাতে তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জি পরমেশ্বর। বৈঠক হয় পরমেশ্বরের বাসভবনেই। কিন্তু তাতে কোনও সমাধান মেলেনি।
এবারের মন্ত্রীসভায় জায়গা দেওয়া নিয়ে কংগ্রেসের স্ট্র্যাটেজি ছিল কর্ণাটকের সব সম্প্রদায়ের এবং সব অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব রাখা। আর এই করতে গিয়েই বাদ পড়েছেন বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ বিধায়ক, বর্ষীয়ান নেতা, এমনকী সিদ্দারামাইয়া সরকারের মন্ত্রীরাও। এঁদের মধ্যে আছেন এমবি পাতিল, রোশন বেগ, রামলিঙ্গা রেড্ডি, এম কৃষ্ণাপ্পা, দিনেশ গুন্ডুরাও, ঈশ্বর খান্ড্রে, শামানুর শিবশঙ্করাপ্পা, সতীশ ঝার্কিহোলি প্রমুখ।
তবে লিঙ্গায়েতদের কংগ্রেসের উপর আস্থা ফেরানোর তাগিদেও এঁদের মধ্যে কয়েকজন বাদ পড়ে থাকতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। লিঙ্গায়েতকে পৃথক ধর্মের মর্যাদা দেওয়ার আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন এমবি পাতিল, ও ঈশ্বর খান্ড্রে। এঁদের পাশাপাশি এবারের মন্ত্রিসভায় ঝায়গা পাননি ৮৯ বছরের শিবশংকরাপ্পাও, যিনি লিঙ্গায়েতদের নয়া ধর্মের নাম 'বীরশৈব-লিঙ্গায়েত' রাখা হোক, প্রস্তাব করেছিলেন।
কারণ যাই হোক, এঁরা প্রত্যেকেই জনপ্রিয় নেতা। তাই এঁরা মন্ত্রীসভায় জায়গা না পাওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ অনেক সমর্থকই। তাঁদের অনেকেরই দাবি, এর পেছনে রয়েছেন জি পরমেশ্বরই। তাঁদের অভিযোগ জেডিএস প্রধান এইচডি দেবগৌড়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এইসব বর্ষীয়ান নেতাদের, বিশেষ করে সিদ্দারামাইয়া ঘনিষ্ঠদের ছেঁটে ফেলতে চাইছেন পরমেশ্বর। আর এইআইসিসির পর্যবেক্ষক কেসি বেনুগোপাল তাঁর হাতের পুতুল হয়ে গিয়েছেন।
স্বাভাবিকভাবেই এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পরমেশ্বর। তাঁর দাবি সিদ্দারামাইয়া, গুন্ডুরাও-সহ সব বড় নেতার সম্মতিতেই মন্ত্রীসভার সদস্যদের নাম ঠিক করা হয়েছে। তাঁর সমর্থকদের নিশানা করছেন পরমেশ্বর এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সিদ্দারামাইয়াও। তিনি বলেন, 'দলের সবাই আমার ঘনিষ্ঠ। শীঘ্রই কোনও সমাধানে পৌঁছনো যাবে।' কুমারস্বামীরও দাবি, যা ঘটেছে, তা বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে সংবাদ মাধ্যমে।
বিজেপিও যথারীতি নেমে পড়েছে ঘোলা জলে মাছ ধরতে। ইয়েদুরাপ্পা বলেছেন, যদি জোট সরকার বেশিদিন চলে, তবে দেবগৌড়া ও তাঁর পুত্র রাজ্য থেকে কংগ্রেসকে মুছে দেবে। আশ্চর্যজনকভাবে এই বিতর্ক নিয়ে এখনও কোনও মুখ খোলেনি কংগ্রেস হাইকমান্ড। কর্ণাটকের বিক্ষুব্ধ নেতারা কিন্তু দিল্লিতে রাহুলের কাছে দরবার করার কথা ভাবছেন। জেডিএসের অন্দরেও কিছু ক্ষোভ রয়েছে। তবে তা কংগ্রেসর মতো প্রকট নয়। জোটের প্রাথমিক উচ্ছ্বাস পড়ে গেছে। এবারই আসল পরীক্ষা। একটু এদিক ওদিক হওয়ার আশায় ১০৪ জন বিধায়ক নিয়ে ওঁত পেতে বসে আছে বিজেপি।