জনসংখ্যা বাড়িয়ে পরিধি বাড়াচ্ছে হিন্দি দাবি গবেষকদের
জনসংখ্যা বাড়িয়ে পরিধি বাড়াচ্ছে হিন্দি দাবি গবেষকদের
দেশজুড়ে সংযোগকারী ভাষা হিসেবে হিন্দিকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন সংবিধান প্রণেতারা৷ এই চাওয়াতে সময়ে সময়ে যোগ দিয়েছে অনেক বছর দিল্লির ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেস এবং অধুনা বিজেপি৷ চলতি মাসেই হিন্দি দিবস উদযাপন করেছেন মোদী থেকে, মমতা ৷ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও টুইটে লিখেছেন মাতৃভাষা বাধ্যতামূলক, গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি তবে তার পাশাপাশি সংযোগকারী ভাষা হিসেবে হিন্দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন তিনি৷ সোমবার এ নিয়ে ইংরাজি ভাষায় 'দ্য হিন্দু' সংবাদমাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷ সেটার আলোকেই এই প্রতিবেদন রইল ওয়ানইন্ডিয়া বাংলার পাঠকদের জন্য।
হিন্দিভাষা নিয়ে কিছু ঘটনা!
জুলাই ২০২১-এ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মৌলিক সাক্ষরতা বাড়ানোর জন্য নিপুন ভারত স্কিম চালু করে কেন্দ্র সরকার৷ এই প্রকল্পের শুরু থেকেই অ-হিন্দিভাষী রাজ্যের অংশগ্রহণকারীদের অভিযোগ ছিল যে তারা এই প্রকল্পের আওতায় যে সব বক্তৃতা বা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেওয়া হচ্ছে তা বুঝতে পারছে না। কারণ এগুলি বেশিরভাগই হিন্দিতে অগাস্টে দিল্লির একটি সরকারি হাসপাতালে মালায়ালি নার্সদের নিজেদের মধ্যেও তাদের ভাষায় কথা বলার নিষেধাজ্ঞা জারী হয়েছিল, যার বিরোধিতা করেছিলেন ওই সেবিকারা (সূত্র দ্য হিন্দু, বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম)। এছাড়াও গত অগাস্টে, তামিলনাড়ুর প্রতিনিধিরা একটি যোগ এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ ওয়েবিনারে যোগ দেওয়ার সময় আয়ুশ মন্ত্রনালয়ের সচিব তাদের বলেছিলেন যে তারা যদি ইংরেজি ব্যবহার করতে চান তবে তারা চলে যেতে পারেন, এরকমই দাবি করেছিলেন ওই তামিল প্রতিনিধিরা (সূত্র দ্য হিন্দু, বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম)।
হিন্দির এলাকা বেড়েছে!
শেষ আদমশুমারি অনুসারে, হিন্দি এবং এর ছত্রছায়ায় থাকা ভাষাগুলি ১৯৭১ থেকে ২০১১ এ ৩৬.৯৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৩.৬৪ শতাংশে পৌঁছেছে৷ অর্থাৎ আগে সারা দেশে মোট জনসংখ্যার ৪৩ এর বেশি জনসংখ্যা হিন্দি বুঝতে ও বলতে পারে। এর কারণ কী? সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের সিনিয়র ফেলো পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, দরিদ্রদের মধ্যে এবং কম শিক্ষিত মহিলাদের মধ্যে প্রজনন হার বেশি, হিন্দি ভাষাভাষীদের মধ্যেই এই সংখ্যা তুলনায় বেশি। যে দশটি রাজ্যে হিন্দিভাষীদের সংখ্যা বেড়েছে তারা ১৯৭১ এ ভারতে মোট জনসংখ্যার সেখানে ৪১.৯ শতাংশ ছিল এখন যা বেড় ৪৬.৫ শতাংশ হয়েছে৷
কী বলছে দ্রাবি মুনেত্র কাজগম?
২০২১ সালের মার্চ মাসে দ্রাবিড় মুনেত্র কাজগমের (ডিএমকে) নমাক্কাল এমপি এ.কে.পি. চিনরাজ লোকসভায় একটি প্রশ্ন তোলেন। যেখানে তাঁরা জানতে চেয়েছিলেন যে অ-হিন্দি ভাষাভাষী রাজ্যগুলির আনুমানিক কত সংখ্যায় মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের হিন্দিতে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি এবং আইনগুলি বুঝতে পারবে।
কী বলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক?
জবাব দিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় আদমশুমারির তথ্য দিয়ে দাবি করেছে যে নাগাল্যান্ডের হিন্দি বুঝতে পারে এরকম জনসংখ্যা ছিল ৬২৯৪২, এবং ইংরেজী ভাষাভাষী জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৪১৯ জন। দ্য হিন্দু সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে এই সংখ্যাগুলো আসলে হিন্দি এবং ইংরেজিকে তাদের মাতৃভাষা হিসেবে দাবি করা লোকদের সংখ্যা। প্রকৃতপক্ষে এই ভাষাগুলো বলতে পারে এমন লোকের সংখ্যা নয়।
কী বলছে দ্য হিন্দুর তথ্য?
দ্য হিন্দু-র দ্বিভাষিকতা এবং ত্রিভাষিকতাবাদের তথ্য যা ২০১১ সালে প্রথমবারের জন্য সংগ্রহ করেছিল সংবাদমাধ্যমটির পাওয়া সেই তথ্য অনুসারে নাগাল্যান্ডের ১৬ শতাংশ জনগণ বলেছে যে হিন্দি তাদের তিনটি কথ্য ভাষা পছন্দগুলির মধ্যে একটি৷ আবার নাগাল্যান্ডে ৩৩% মানুষ বলেছে তারা তিনটি কথ্য ভাষার মধ্যে ইংরেজীকে রাখবে৷ একইভাবে, কেরলে ৯ শতাংশ মানুষ তাদের দুটি পছন্দের ভাষার মধ্যে হিন্দিকে রেখেছিল৷ কিন্তু ২০ শতাংশ মানুষ ইংরেজিকে তিনটি ভাষার মধ্যে একটি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিল।
কী বলছেন অমিত শাহ?
গত সপ্তাহে হিন্দি দিবসে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন হিন্দি সমস্ত ভারতীয় ভাষার বন্ধু। সহাবস্থানের মাধ্যমেই অগ্রগতি সম্ভব। মোদী সরকার প্রকৃতপক্ষে আঞ্চলিক ভাষাগুলিকে শক্তিশালী করার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মেডিকেলে প্রবেশের জন্য NEET পরীক্ষা এখন ১৩ টি ভিন্ন ভাষায় দেওয়া হয়। সম্প্রতি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলি পাঁচটি ভারতীয় ভাষায় তাদের পাঠদান শুরু করেছে৷ ২০১২ সালে ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) সরকার সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের নিয়োগ পরীক্ষায় শুধুমাত্র হিন্দি ও ইংরেজিতে সীমাবদ্ধ রাখত। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ২০২১ সাল থেকে সমস্ত ২২ তফসিলি ভাষায় পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।
কী বলছেন অধ্যাপক গবেষক দীপেশ চন্দ্রশেখর
শিব নাদার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির সহকারী অধ্যাপক দীপেশ চন্দ্রশেখর, যিনি ভাষাতত্ত্ব নিয়ে গবেষনা করেন তিনি দ্য হিন্দুকে জানিয়েছেন, হিন্দি বা ইংরেজির কোনটার সরকারি প্রচারের প্রয়োজন নেই। আমি, ভিলি বা গোন্ডির মতো ভাষা নিয়ে বেশি চিন্তিত, যেগুলোতে লাখ লাখ ভাষাভাষী আছে, কিন্তু সংবিধানের অষ্টম তফসিলভুক্ত নয়। যদি কোনো ভাষার প্রচারের জন্য একটি দিবসের প্রয়োজন হয়, তবে এই ভাষাগুলিরই প্রয়োজন।