শক্ত হাতে লকডাউন কার্যকর না করলে বাড়বে করোনার প্রকোপ, আশঙ্কা প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্টের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ২১ দিনের ভারত লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, তবে লকডাউন পরবর্তী সময়ে আর্থিক সাহায্য সঠিকভাবে বণ্টন না করলে লকডাউন ব্যর্থ হবে, বলে জানান প্রখ্যাত ভাইরাসবিদ ডঃ টি. জেকব জন। ডঃ জন বর্তমানে ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজের সাম্মানিক প্রফেসর এবং সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ভাইরোলজি রিসার্চ ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের প্রধানের পদে আসীন।
সরকার কর্তৃক লকডাউনের প্রভাব ও পদ্ধতি নিয়ে ডঃ জনের বক্তব্য
ডঃ জন ইতিপূর্বে ভারতে এইচআইভির প্রভাব বিস্তার নিয়ে কাজ করেছেন। সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি সরকারি পদক্ষেপ, লকডাউনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের কথা এবং ভারতে এসএআরএস-সিওভি-২ টেস্টের অপর্যাপ্ত ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করেন।
এতদিন পর্যন্ত সরকারি পদক্ষেপ
ডঃ জনের মতে ইতিপূর্বে পোলিও ও এইচআইভির প্রতিরোধের পূর্ব অভিজ্ঞতায় পুষ্ট ভারতীয় সরকার প্রথমদিকে খুব হালকা ভঙ্গিতে করোনার মোকাবিলায় নামে। কিন্তু সাধারণ মানুষ ও বেসরকারি ক্ষেত্রের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সরকারি হাসপাতালের ত্রুটিকে সকলের সামনে আসতে দেওয়া হয়নি, যা আমাদেরই বিপদ ডেকে এনেছে। ভারতীয় সরকার মূলত সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য পরিষেবার ভারসাম্য নিয়ে উদাসীন ছিল, যা সামলাতে আমরা পরবর্তীকালে হিমশিম খাচ্ছি।
করোনা পরীক্ষার পদ্ধতি সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য
তাঁর মতে করোনা পরীক্ষার পদ্ধতি সাধারণ মানুষের কাছে একেবারেই পরিষ্কার নয়, বরং যেন এটি শুধুমাত্র শিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্যেই বানানো হয়েছে। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি তাদের মত করে পরীক্ষার দিনক্ষণ-পদ্ধতি ঠিক করে দেওয়ায় করোনা-পরীক্ষা সাধারণের কাছে হয় উঠেছে দুর্বোধ্য, অথচ তাদেরই বেশি জানা উচিত।
সাধারণ মানুষ সরকারের শত্রু নয়
সাধারণ মানুষ সরকারের শত্রু নয়। করোনা সম্পর্কে তাদের অবহিত করা উচিত
প্রথম থেকেই জনগণকে করোনার জন্যে দায়ী করে আসা হচ্ছে। কিন্তু জনসাধারণকে প্রথম থেকে এই জাতীয় সুরক্ষার দিকটি সম্পর্কে জানানো হয়নি। জনগণকে প্রথম থেকেই যদি করোনায় সম্ভাব্য আক্রান্তের সংখ্যা, সর্বমোট হাসপাতালের শয্যার সংখ্যা, মাস্ক-ভেন্টিলেটরের অপর্যাপ্ত সংখ্যা, করোনা পরীক্ষার সামগ্রীর অভাব সম্পর্কে অবহিত করা হত, তাহলে মানুষ আরও সচেতন হতে পারত।
লকডাউনের ফলে করোনায় লাগাম ও লকডাউনের ফলে গৃহবন্দি করোনা আক্রান্তরা অজ্ঞাত
লকডাউন আগামীতে করোনার প্রসারকে অবশ্যই সঙ্কুচিত করবে। তিনসপ্তাহের এই গৃহবন্দি অবস্থা করোনার থেকে রক্ষা করবে জনসাধারণকে। কিন্তু এর একটি বিপরীত প্রভাবও রয়েছে। অনেকেই থাকতে পারেন যাঁদের হয়তো প্রাথমিক উপসর্গ নেই, কিন্তু পরিবারের মধ্যে তাঁরা অজান্তেই ছড়িয়ে দিচ্ছেন মারণব্যাধি। সেক্ষেত্রে সরকার পরিবারগুলিকে কি আদৌ গৃহবন্দিকালীন সচেতনতার ব্যাপারে জানিয়েছে? ২১দিন পর পরিবারগুলির মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়লে কি সরকার মোকাবিলার ক্ষমতা রাখবে? এই বিষয় গুলি নিয়েও এদিন একগুচ্ছ প্রশ্ন করেন ডঃ জন।
উপসর্গ দেখা দিলে রক্তের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে ধোঁয়াশা
সাধারণ মানুষ গৃহবন্দিকালীন অবস্থায় উপসর্গের দেখা পেলে কীভাবে সরকারি আধিকারিকের সাহায্য নেবে ও কীভাবে রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্যে পাঠাবে, সে নিয়ে ধোঁয়াশা মানুষের মনে। আগামী ২১দিন উক্ত বিষয়গুলি মাথায় রাখলে সরকার করোনাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে পারবে, কিন্তু যদি তা না হয় তবে ২২দিনের মাথায় আবার লকডাউন জারি হবে এবং এইবারে হয়তো আক্রান্তের সংখ্যা বিপদসীমা ছাড়াবে এমনটাই মনে করছেন এই প্রখ্যাত ভাইরোলোজিস্ট ডঃ জন।