করোনা আবহে ওয়াইফাইতে দুর্গা দর্শন, ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শিক্ষা নিক বাংলা
ঝাড়খণ্ডের শিল্প নগরী বোকারো থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মার্রাহ নামক একটি গ্রাম। প্রায় ৭০০ বাঙালি পরিবারের বাস সেই গ্রামে। যেকোনও বছরের দুর্গাপুজোর মতো এবারেও তোড়জোড়ে খামতি নেই সেই গ্রামে। প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো দুর্গা পুজো দর্শনের খেত্রে অবশ্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়।
ঘোষ পরিবারের ৩০০ বছর এই পুরোনো পুজো
মার্রাহ গ্রামের ঘোষ পরিবারের ৩০০ বছরের পুরোনো পুজোতে গ্রামের সবাই আমন্ত্রিত থাকে প্রতিবছর। তবে বিগত ৩০০ বছরের ঐতিহ্য ভেঙে এবারে সেই পথে হাঁটা সম্ভব হবে না গ্রামের লোকেদের জন্য। অবশ্য এই আবহেও গ্রামের মানুষদের দুঃখ গুছাতে এগিয়ে এসেছে প্রযুক্তি। এবং এবছরও গোষবাড়ির পুজো পৌঁছে যাবে গ্রামের সবার কাছে।
পুজো আসতেই বাংলায় সচতেনতা কমেছে
দুর্গা পুজো আসতেই যেভাবে কলকাতা এবং বাংলার অন্যান্য শহরগুলিতে রাস্তায় মানুষের ঢল উপচে পড়েছে, তাতে চিন্তিত সব বিশেষজ্ঞই। এই অবস্থায় অনেক পুজো কমিটি অনলাইনে পুজো দর্শনের পথে হেঁটেছে। তবে রাস্তায় মানুষের ভিড় কমেনি তাতে। রবিবার দ্বিতীয়র তিথিতেই রাস্তায় মানুষ নেমে পড়ে অসমাপ্ত প্যান্ডেল দেখতে। এই অবস্থায় পুজোতে কী পরিস্থিতি হবে তা ভেবেই শিউড়ে উঠছেন চিকিৎসকরা।
পুজোর জন্য ঝাড়খণ্ডের এই প্রত্যন্ত গ্রামে লাগানো হয়েছে ওয়াইফাই
এই অবস্থায় ঝাড়খণ্ডের এই প্রত্যন্ত গ্রামে লাগানো হয়েছে ওয়াইফাই। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে পালনের লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ। এই ওয়াইফাইয়ের ফলেই এবার গ্রামের সবাই পুজো দর্শন করতে পারবেন। মাত্রাটা ছোটো হলেও উদ্যোগটা বৃহৎ। যদিও ঘোষ পরিবারের অনেকেই নিজেদের গ্রামে এবছর আর যেতে পারবেন না বলে জানা গিয়েছে। করোনা আবহে গ্রামে ফেরা হবে না তাঁদের। তবে তাঁদের কাছেও বাড়ির পুজোর আনন্দ পৌঁছে যাবে এই ওয়াইফআইয়ের মাধ্যমেই।
ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যতের দিশা বদল
যেখানে এখনও মার্রাহ গ্রামের কাছাকাছি অনেক গ্রামেই বিদ্যুত পৌঁছায়নি স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরও, সেখানে ঘোষ পরিবারের এহেন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এমনকি গ্রামের মানুষরা জানাচ্ছেন, তাঁদের গ্রামেও খুব বেশি হলে দিনে ১০ ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ থাকে। তবে এই ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে যে শুধু পুজো দেখা হবে তা নয়, ভবিষ্যতের দিশা বাতলে দিয়ে যাবে এই উদ্যোগ।
কেউ যেন পুজোর আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে না হয়
এই উদ্যোগের শ্রেয় অবশ্য পাওয়া উচিত গোষ পরিবারের সদস্য প্রীতিকা দত্তের। তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত এই উদ্যোগ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'কোনও পরিবারে দুর্গাপুজো একবার শুরু হলে তা এক বছরের জন্যও বন্ধ করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। গ্রামের প্রায় সবাই এই পুজোর জন্যই অপেক্ষা করে সারা বছর। তাই এবছর তাঁদের যাতে পুজোর আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে না হয়, তাই এই উদ্যোগ।'
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঐতিহ্যে পরিবর্তন
ওয়াইফাই সেট-আপের জন্য প্রায় ৩০০ মিটার লম্বা তার লাগাতে হয়েছে। এছাড়া রাউটার লাগানো হয়েছে গ্রামের বিভিন্ন স্থানে। এই পুরো খরচাই বহন করেছে গোষ পরিবার। এবং এই কাজ করেছে গ্রামেরই স্থানীয় কেবল অপারেটর। এবং মার্রাহ গ্রামের এই উদাহরণ আমাদেরকে শিখতে সাহায্য করবে যে, ঐতিহ্য বদলায় না, তবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঐতিহ্যে পরিবর্তন হয়।
উৎসবের আমেজে করোনা ভ্রুকুটি , কেরলের উদাহরণ টেনে গোটা দেশকে সতর্কবার্তা হর্ষ বর্ধনের