অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক! কাপড় ছিঁড়ে, চুল কেটে মারধর অরুণাচলের মহিলাকে
পাঁচ
বছরের
বিবাহিত
জীবনে
শুধুই
মিলেছে
লাঞ্ছনা,
মারধর।
তাই
মহিলা
সিদ্ধান্ত
নেন
নিজের
ভালোবাসার
মানুষের
সঙ্গে
পালিয়ে
যাবেন
একটা
সুন্দর
জীবন
পাওয়ার
জন্য।
তিনি
ভেবেছিলেন
তাঁর
দুর্ভাগ্য
হয়ত
এখানেই
শেষ
হয়ে
যাবে।
কিন্তু
তাঁর
ভাগ্যে
অন্য
গল্প
লেখা
ছিল।
ওই
মহিলাকে
দোষীর
তকমা
দিল
গ্রামবাসীরা।
২৫ সেপ্টেম্বর রাতে, অরুণাচল প্রদেশের ছাংলান জেলার গ্রামের মহিলারা দোষী মহিলাকে ঠাণ্ডা জলে স্নান করান। তাঁকে প্রথমে গাড়ি থেকে টেনে বের করা হয়, মহিলার কাপড় ছিঁড়ে দেওয়া হয়, এরপর তাঁকে বিভিন্নভাবে হেনস্থা করে সেটার ভিডিও বানানো হয়। ওই মহিলা এই অপমান থেকে বাঁচতে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন ঠিকই, কিন্তু ওই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। মহিলার দোষ কী ছিল? তিনি অন্য এক বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন নিজের পাঁচ বছরের অশান্তিময় দাম্পত্য জীবন ছেড়ে। পুলিশ এই ঘটনায় ৩৮ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে, যারা এই জঘন্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। ইতিমধ্যেই ৯ জন মহিলা সহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ওই মহিলা বলেন, 'তাড়াহুড়ো করে পালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমার পরিবার ও শ্বশুরবাড়ির মধ্যে কোনও বৈঠকই ফলপ্রসু হয়নি এবং আমার ভাগ্যও পরিবর্তন হয়নি।’ দাম্পত্য জীবনে স্বামীর কাছে নির্যাতনের কথা স্মরণ করে মহিলা বলেন, 'এক রাতে আমার স্বামী আমার পেটে এত জোরে লাথি মারে যে আমার গর্ভপাত হয়ে হয়ে যায়। এরপর আমার আর একটা গর্ভপাতও হয়। এই অত্যাচার যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায় আমি একবার হাসপাতালে তা জানাই। আমার শাশুড়ি স্বামীর পক্ষ নিয়ে আমায় মারধর করত এবং এটা নিয়মিত হয়ে গিয়েছিল।’ওই মহিলা দাবি করেন যে যাঁর সঙ্গে তিনি পালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি মহিলার পরিস্থিতি এবং স্বামীর হাতে অত্যাচার হওয়ার কথা জানতেন। মহিলা জানান, ওই ব্যক্তি তাঁর পরিস্থিতি দেখার পরও তাঁকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু মহিলা তা প্রত্যাখান করেন। যদিও এক সেপ্টেম্বর রাতে মহলা সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি এই অত্যাচারের হাত থেকে পালিয়ে ওই ব্যক্তির সঙ্গে অসমের তিনসুকিয়াতে চলে যাবেন।
তবে মহিলার পালানোর খবর পেয়ে তাঁর স্বামীর পরিবার তাঁদের ডেকে পাঠায় এবং বলে সব সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া হবে এবার। সেই কথাতেই গ্রামে ফেরেন ওই তরুণী ও তাঁর সঙ্গী। তারপরেই শুরু হয় নির্যাতন। ওই মহিলা বলেন, 'নীতুলের পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং গ্রামে ডেকে পাঠায়। তারা আমাদের আশ্বস্ত করে যে তারা আমাদের সম্পর্ক মেনে নেবে এবং পরিবারে ফিরিয়ে নেবে। প্রথমে আমরা রাজি হইনি কিন্তু পরে আমরা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই এবং নিজের পরিবারের সঙ্গে থাকতে রাজি হই। ২৫ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে আমরা গ্রামে ফিরে আসি।’
ঘটনার দিন রাতে অধিকাংশ গ্রামবাসী এক জায়গায় জমায়েত হয়ে ছিলেন এবং কিছু বয়স্ক মহিলা আক্রান্ত মহিলাকে টেনে হিঁচড়ে গাড়ি থেকে বের করেন এবং কাপড় টেনে ছিঁড়ে দেন। তাঁকে কনকনে ঠাণ্ডা জলে স্নান করানো হয় এবং তাঁর চুল কেটে দেওয়া হয়। এরপর গ্রামের মহিলারা যখন আক্রান্তের শরীরে থাকা বাকি পোশাকও ছিঁড়তে থাকেন তখন গ্রামের কিছু ব্যক্তি তা ভিডিও করেন, এমনকী আক্রান্ত যখন নিজেকে গোপন করার চেষ্টা করছিলেন তখনও। নগ্ন অবস্থায় ওই মহিলাকে এক স্কুলের ভেতর ঘুমোতে দেওয়া হয় এবং পরের দিন সকাল পর্যন্ত কিছু খেতে দেওয়া হয়নি তাঁকে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিও পরে ভাইরাল হয়। যে ব্যক্তির সঙ্গে ওই মহিলা পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি মহিলাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাঁকেও মারধর করা হয়। জানা গিয়েছে, স্থানীয় মাতব্বররা তাঁদের সম্প্রদায়কে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে বলে দোষ চাপানো হয় ওই মহিলার ঘাড়ে। এই ঘটনার পর গ্রামবাসীরা ওই মহিলার সঙ্গে কী করা হবে তার জন্য বৈঠক করলেও সেখানে মহিলার পরিবারকে ডাকা হয়নি। আলোচনার পরে, আক্রান্তকে গ্রাম থেকে দূরে রাখতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং অন্য ব্যক্তিকে তার সঙ্গ সম্পর্ক ছিন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্থ মহিলার দাদুকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৪০,০০০ টাকা দেওয়া হয়েছিল।