যোগীর রাজ্যে সাংবাদিকদের মুখ বন্ধের চেষ্টা, এল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ নথিভুক্ত করার বিতর্কিত নির্দেশ
উত্তরপ্রদেশের ললিতপুরে সাংবাদিকদের একটি বিতর্কিত সরকারি নির্দেশিকা জারি করে তাঁদের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপগুলিকে রাজ্যের তথ্য দপ্তরে নথিভুক্ত করতে বলা হয়েছে। নাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
যোগী-রাজ্যে এবার সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা শুরু হল। ললিতপুরে সাংবাদিকদের কাছে এল সরকারি নির্দেশিকা, তাঁদের যাবতীয় হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপকে রাজ্যের তথ্য দপ্তরে নথিভুক্ত করতে হবে, নচেৎ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুয়ো খবর ছড়ানো বন্ধ খরার যুক্তি দেওয়া হলেও সরকারের এই নির্দেশ নিয়ে চরম বিতর্ক বেধেছে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যেসব সাংবাদিকরা হোয়াট্স অ্যাপ গ্রুপ ব্যবহার করেন বা করতে চান তাদের জেলা তথ্য আধিকারিকের কাছে তাদের যাবতীয় তথ্য জমা করতে হবে। গ্রুপগুলির অ্যাডমিনদের অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথির সঙ্গে আধার কার্ডের প্রতিলিপি ও ছবি জমা দিতে বলে হয়েছে। নির্দেশিকাতে সাক্ষর রয়েছে জেলার ম্যাজিস্ট্রেট মানবেন্দ্র সিং ও ললিতপুরে পুলিশের এসপি ও. পি. সিং-এর।
এখনও পর্যন্ত এক জেলাতেই এরকম নির্দেশ এলেও, তা নিয়ে সাড়া পড়েছে গোটা উত্তরপ্রদেশের সাংবাদিক মহলেই। তাঁদের আশঙ্কা, এক জেলায় শুরু হয়েছে যখন, এবার সব জেলাতেই এরকম নির্দেশ দেওয়া হবে, এমনকী একেবারে রাজ্য স্তরেও নির্দেশ আসতে পারে। কারণ উত্তরপ্রদেশে তথ্য মন্ত্রক রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের হাতেই। কাজেই এর পিছনে তাঁর হাত দেখছেন সাংবাদিকরা।
তবে এনিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই ্বস্থা সামাল দিতে আসরে নেমেছেন উত্তরপ্রদেশের তথ্য সচিব অবনীশ অবস্তি। তিনি জানিয়েছেন এরকম কোনও নির্দেশ সরকার বা তথ্য দপ্তর থেকে দেওয়া হয়নি। ললিতপুরে এরকম নির্দেশ দেওয়া হয়ে থাকলে তা একেবারেই স্থানীয় স্তরের সিদ্ধান্ত। রাজ্য সরকার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলেও জানান তিনি।
তবে তাতে বিতর্ক থামছে না। মুখ রক্ষা করতে ডিএম মানবেন্দ্র সিং দাবি করেছেন জেলায় নাকি অধিকাংশই খুব ভালভাবে নিয়েছেন এই সিদ্ধান্ত। তাঁর মতে এনিয়ে শুধু-শুধুই বিতর্ক বাধানো হচ্ছে। কেননা এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, একাংশের লোক, যারা সাংবাদিকের ছদ্মবেশে গুজব রটায় তাদেরকে আটকাতেই।
[আরও পড়ুন: রেকর্ড দামে পৌঁছল তেলের দাম, মূল্যবদ্ধির আশঙ্কাকে জিইয়ে রেখে আরও পড়ল টাকার দাম ]
কিন্তু তার এইসব যুক্তি হালে পানি পাচ্ছে না। স্থানীয় স্তরে এ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এই নির্দেশিকা আসার পরই হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ বন্ধ করে দিচ্ছেন। বিতর্ক পৌঁছে গিয়েছে জাতীয় স্তরেও।
[আরও পড়ুন: কাশ্মীরের ৩৫এ ধারা নিয়ে শুনানি পিছল সুপ্রিম কোর্ট, বনধের চেহারা উপত্যকায়]
সাংবাদিকদের সংগঠন আইএফডব্লুজে-র সোশ্য়াল মিডিয়া সেলের কনভেনর কে বিশ্বদেও রাও বলেছেন, ভূয়ো খবর রটানো আচকাতে হলে, যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের ধরার চেষ্টা করুক সরকার। তার জন্য সাংবাদিকদের উপর নজরদারির প্রয়োজন হয় না। এই নির্দেশের মাধ্যমে তথ্য় দপ্তরর স্পষ্টতই সংবাদমাধ্যমকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে। লখনউ-এর সাংবাদিক তথা অধিকার কর্মী মুদিত মাথুরের বক্তব্য, 'এটা স্বাধীন অভিব্যক্তি প্রকাশের অধিকারকে খর্ব করার চেষ্টা। যা অসাংবিধানিক। কোনও সরকার এটি করতে পারে না।'