
জলবায়ুর পরিবর্তনের জের! ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে অসম-বাংলাদেশ
বন্যায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশ। অবস্থা শোচনীয় অসমেও। সেখানে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে জলবায়ু পরিবর্তন হল এমন বৃষ্টির পিছনে অন্যতম কারণ যার জেরে বাংলাদেশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে নজিরবিহীন বন্যা হয়েছে। বহু মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি লক্ষাধিক মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে বন্যা।

অঞ্চলটি বন্যাপ্রবন নয়
ঘটনা হল এই অঞ্চলটি বন্যাপ্রবন নয়। জলস্তর বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলেও তা সাধারণত বছরের শেষের দিকে হয় অর্থাৎ বর্ষার শেষের দিকে একচোট ভারি বৃষ্টি হয় তাতে অনেকক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে কিন্তু যখন বর্ষা আসার আগেই কোনওদিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।

মার্চে মুষলধারে বৃষ্টি
এই বছরের মার্চের প্রথম দিকে এই অঞ্চলে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছিল। জলবায়ু পরিবর্তন বন্যায় কী পরিমাণ ভূমিকা পালন করেছে তা নির্ধারণ করতে অনেক বেশি সময় লাগতে পারে, তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন যে জলবায়ু পরিবর্তন বর্ষাকে প্রভাবিত করেছে। তাঁরা এও বলছেন গত দশ বছরের ট্রেন্ড দেখলে এই বিষয়টা আরও স্পষ্ট হবে। কীভাবে বৃষ্টি এই অঞ্চলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তা স্পষ্ট হয়ে জবে ওই অঙ্ক দেখলেই। দেখা যাচ্ছে যে সার্বিক ভাবে স্বাভাবিক বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অন্য জায়গায়। আসলে কম সময়ে বেশি বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে বৃষ্টির হওয়া উচিৎ সেটা দিন চারেকে হয়ে যাচ্ছে। ফল , বন্যা।

মেঘালয়ের বৃষ্টি
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ে জুন মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে গড় বৃষ্টিপাতের প্রায় তিনগুণ বৃষ্টি হয়েছে এবং প্রতিবেশী অসমে একই সময়ে তার মাসিক গড় বৃষ্টিপাতের দ্বিগুণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এশিয়ার বৃহত্তম নদীগুলির মধ্যে একটি সহ বেশ কয়েকটি নদী দুটি রাজ্য থেকে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের বাংলাদেশে। ফলে বন্যা হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশেও।

বাংলাদেশের বন্যা
আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়ে হাওয়া অফিস, বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র মঙ্গলবার সতর্ক করেছে যে দেশের উত্তরাঞ্চলে জলস্তর বিপজ্জনকভাবে বেশি থাকবে।বর্ষার ধরণ, ভারত ও বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পুনেতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথিউ কোল বলেছেন, ১৯৫০ সাল থেকে পরিবর্তন হচ্ছে, দীর্ঘ শুষ্ক স্পেল ভারী বৃষ্টির সাথে মিশেছে। এখন সেই পরিস্থিতি বাড়তে বাড়তে এই জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন , "আমরা দীর্ঘদিন এমন সংকটের মুখোমুখি হইনি। এই ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় পরিকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশের ,মেঘালয় এবং অসম থেকে জল সিলেট অঞ্চলকে ডুবিয়ে দিয়েছে।"
হাসিনা বলেন যে বন্যার জল উত্তর-পূর্ব দিক থেকে শীঘ্রই হ্রাস পাবে, তবে সম্ভবত তারা বঙ্গোপসাগরের পথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানবে। ১৭ মে থেকে বাংলাদেশে মোট ৪২ জন মারা গিয়েছে। অসমে এই সংখ্যা ১০০ হয়ে গিয়েছে গতকাল।কয়েক লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে গিয়েছে এবং এই অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ অস্থায়ী উচ্ছেদ কেন্দ্রগুলিতে মানুষ ছুটে যেতে বাধ্য হয়েছে।