For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

সংসারের ঘেরাটোপেও এক সাধিকার সাধন সঙ্গীত, গিরিজা দেবী প্রয়াণে শ্রদ্ধার্ঘ

মানসী মজুমদার, প্রায় দু'দশক ধরে গিরিজা দেবীর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছিলেন। গিরিজা দেবীর সঙ্গে তাঁর ছিল মা ও মেয়ের মতো সম্পর্ক। তেমনি কিছু স্মৃতি চারণায় মানসী

Google Oneindia Bengali News

গিরিজা দেবীর প্রয়াণে ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলার পক্ষ থেকে কথা বলা হয়েছিল বেনারস ঘরানার বিশিষ্ট শিল্পী মানসী মজুমদারের সঙ্গে। রাত তখন দেড়টা। বিএম বিড়লা হাসপাতালে দাঁড়িয়ে গুরু মা-র প্রয়াণকে যেন মানসিকভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না মানসী। কারণ, শুধু একজন সঙ্গীতজ্ঞ তো ছিলেন না গিরিজা দেবী, তাঁর সাধনা, তাঁর সঙ্গীতকে বুঝতে গেলে তাঁর সাংসারিক জীবন-যাত্রাটাও যে বোঝা জরুরি। একজন পরিপূর্ণ শিল্পী হয়ে উঠতে হলে সাংসরিক চিন্তাভাবনাও যে কতটা জরুরি তা যেন মানসীর মতো শিষ্যাদের শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন গিরিজা দেবী। মানসী নিজের মুখে প্রয়াত গুরু মা-র স্মৃতি চারণা করলেন।

সংসারের ঘেরাটোপেও এক সাধিকার সাধন সঙ্গীত, গিরিজা দেবী প্রয়াণে শ্রদ্ধার্ঘ

'ঊনিশ বছর ধরে আমি ওনার সঙ্গে রয়েছি। ওনার তালিম এবং ওনার সঙ্গ পাওয়া যাকে বলে। ওনার মধ্যে যে মা-এর মতো একটা ব্যাপার ছিল। আমি যদি কলেজ থেকে ওনার কাছে যেতাম তাহলে বলে উঠতেন 'বেটি কুছ খাওয়োগে'। যদি বলতাম না কিছু খাব না, তাহলেও বলতেন 'না কলেজ থেকে এসেছিস অন্তত চা-টা খা'। খাওয়া-দাওয়ার পর্ব চুকলে বলতেন ' তুমি আজ কী শিখবে বল, তোমার আজ কী শিখতে ইচ্ছে করছে?' এটাই ছিল গিরিজা দেবীর স্কুলের প্রচলিত ধারা। এভাবেই তিনি শেখাতেন। শিষ্যাদের বুকে কাছে টেনে নিতেন মাতৃ স্নেহে। মা যেমন পরম যত্নে তাঁর সন্তানকে এক মহীরুহ হতে সহায়তা করেন, গিরিজা দেবীও ছিলেন তেমনি একজন মা। যদি গলাতে একটু সমস্যা হত তাহলেই বলে উঠতেন 'ক্যা হুয়া রে তেরা, রেওয়াজ-টেওয়াজ নেহি হুয়া'। আমি হয়তো বললাম 'হ্যাঁ, খুব সমস্যা হচ্ছে।' অমনি বলে উঠতেন, 'নেহি নেহি বেটা রেওয়াজ মত ছোড়।' মাঝে-মধ্যেই জিঞ্জেস করতেন 'তোমার গানের খবর কী? কী ভাবে এতটা গ্যাপ পড়ে গেল? যত অসুবিধাই হোক না কেন রেওয়াজ কখনও ছাড়বে না।'

এমনই সব মুহূর্ত, স্মৃতি এখন মনের উপরে নেমে আসছে। এভাবেই ওনাকে দেখে আমি শিখেছি। ওনার কাছ থেকে বহু ছোট-ছোট জিনিস শিখেছি, রপ্ত করেছি এবং এখন বুঝি এই জিনিসগুলো সঙ্গীত সাধনার পক্ষে কতটা কাজের। ওনার কাছেই শিখেছি কীভাবে বাড়িতে অতিথি এলে তাঁর সেবা করতে হয়। বাড়িতে অতিথি এলে গিরিজা দেবী নিজেই তাঁদের জল দিতেন। এমনকী তাঁদের জন্য খাবারও প্লেটে করে নিয়ে আসতেন। যদিও, বয়স হয়ে যাওয়ায় পরের দিকে আর পারতেন না।

সংসারের ঘেরাটোপেও এক সাধিকার সাধন সঙ্গীত, গিরিজা দেবী প্রয়াণে শ্রদ্ধার্ঘ

আমি একবার কলজে থেকে সরাসরি গিরিজা দেবীর কাছে গিয়েছিলাম। আমার প্রচন্ড খিদে পেয়েছিল। আমার বাবা-মা নেই, কিন্তু, গিরিজা দেবী সেদিন যে পরম স্নেহের ছোঁয়া দিয়েছিলেন তাতে যেন আমার মা-কে খুঁজে পেয়েছিলাম। আমি গিরিজা দেবীর বাড়িতে ঢোকামাত্রই একটা সুন্দর গন্ধ পাচ্ছিলাম। আমি বললাম 'আপা আপ ক্যায়া বানা রে হে'। উনি বলে উঠলেন 'তু খায়েগি'। আমি বললাম 'ক্যায়া হে'। তো উনি যে জিনিসটা প্লেটে সাজিয়ে নিয়ে এলেন সেটা হল এঁচোড়ের তরকারি। কিন্তু, উনি এমনভাবে তা বানিয়েছিলেন যে আজও তা মনে লেগে রয়েছে।

রুটি আর এঁচোড়ের তরকারি দিয়ে উনি আমাকে টেবিলে বসিয়ে দিলেন। এমনকী, বড় মাপের শিল্পী হয়েও তিনি আমার জন্য গ্লাসে জলটা পর্যন্ত নিয়ে এসে টেবিলে রেখেছিলেন। একটা মানুষের এমন 'সিম্পিলিসিটি', সত্যিকারেই আজ ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। আসলে গিরিজা দেবী কত বড় মাপের সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু, তাঁর জীবন, তাঁর সাধনাকে বুঝতে গেলে তাঁর দিন-প্রতিদিন প্রতিটি কাজকে বিশ্লেষণ করতে হবে। কারণ, শিষ্যা হিসাবে গিরিজা দেবীর জীবনের খুঁটি-নাটিকে প্রত্যক্ষ করাই শুধু নয়, তাঁর প্রতিটি মুহূর্ত প্রতিটি ক্ষণ যেন আমার জীবন আর চিন্তা-ভাবনা গায়িকির সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

সেদিন ওনার স্নেহের ছোঁয়াটা এতটাই মনকে ছুঁয়ে গিয়েছিল যে আমার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এসেছিল। এ তো শুধু খাবার নয় এ যে গুরু মা-এর দেওয়া মহাপ্রসাদ। এভাবে সেই মহাপ্রসাদ আমি পাব তা সত্যিকারেই কখনও ভাবিনি। সেদিন ওনার কাছে শিখেছিলাম একজন অতিথিকে কীভাবে সেবা করতে হয়। ওনার বাড়িতে কেউ এলে অন্তত একটা মিষ্টি জল না খেয়ে যেতে পারত না।

আসলে গিরিজা দেবী রাঁধতে খুব ভালবাসতেন। উনি দারুণ রান্না করতেন। ওনার হাতের রান্না খেয়েছেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর, ওস্তাদ আলি আকবর খাঁ- সাহেবদের মতো কিংবদন্তিরাও। বেনারসের বাড়িতে এরা সকলে আসতেন।

গিরিজাদেবী আমাকে বলতেন 'এই তু খানা পাকা।' এমনভাবেই প্রত্যেককে কাছে টেনে নিতেন গিরিজা দেবী। এটাই তাঁর ক্য়ারিশমা। উনি প্রচণ্ড সংসারী ছিলেন। সংসারের খুঁটি-নাটি বিষয়ে প্রবল নজর ছিল। একটা মেয়েলি স্তস্ফূর্ততা সবসয়ই যেন তাঁর মধ্যে কাজ করত। কোন জিনিসের সঙ্গে কোন জিনিসটা মেশালে একটা সুন্দর পদ তৈরি হবে, সেটা ছিল নখদর্পণে।

সঙ্গীত শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে এভাবেই ওনার কাছ থেকে জীবনেরও শিক্ষা পেয়েছি। একজন পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে গেলে সাধনার সঙ্গে সঙ্গে কোন কোন জিনিসগুলো লাগে সেগুলি যেন তিনি অনায়াসে তাঁর শিষ্যাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতেন।

এমনকী, কীভাবে লোকের সঙ্গে কথা বলতে হয়, বিশেষ করে প্রোগ্রামের ব্যাপারে কী ভাবে কথা বলতে হয়- তার সবকিছুই শিখেছিলাম গিরিজা দেবীর কাছ থেকেই।

উনি ভোর চারটায় উঠে রেওয়াজ করতেন। তখনও গ্য়াস ওভান-এর চল সেভাবে হয়নি। তাই তিনি রেওয়াজের পর কয়লার উনুন জ্বালিয়ে চা-জলখাবার বানাতেন। স্বামী কাজে চলে গেলে ফের বসে পড়তেন রেওয়াজে। এভাবেই সংসার সামলাতে সামলাতে নিজেকে সঙ্গীতের সাধিকায় পরিণত করেছিলেন গিরিজা দেবী। সংসারের বিষয়ে ওনার কতটা নজর তা যেন বার-বার সামনে চলে আসত। আমাদের ক্লাস করাতে করাতেও তিনি রাঁধুনিকে বলে দিতেন কী রান্না করতে হবে। এমনকী, সেই রান্না কীভাবে হবে সেটাও বুঝিয়ে দিতেন। বলতে গেলে সংসারের মধ্যে থেকে সাধন সঙ্গীতের এক চলন্ত মহীরূহে নিজেকে পরিণত করে নিয়েছিলেন গিরিজা দেবী।

একটা হিসেব দিলেই বোঝা যাবে যে গিরিজা দেবী কতখানি সংসারি এবং কতখানি সাধিকা ছিলেন। সকালেই দাঁত মেজে চুলে বেঁধে চা খেয়ে নিতেন। এরপর নিজের হাতে বারো-চোদ্দটা করে পান বানাতেন। তারপরে চলে যেতেন স্নান করতে। স্নান সেরে এসে পুজো করতেন। পুজা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুখে জল তুলতেন না। পুজো সারা হলে হালকা নাস্তা। তারপরেই বসে পড়তেন রেওয়াজে। বিকেলের দিকে এবার তিনি একটি খাতায় লিখে ফেলতেন সারাদিনে কোথায় কত টাকা খরচ করেছেন তার হিসেবটা। প্রতিদিন এই হিসেব রাখতেন তিনি। কাকে কত টাকা দিয়েছেন, কবে দিয়েছেন এই বয়সেও সব খেয়াল রাখতে পারতেন। যেন কমপিউটার ব্রেন। আসলে এটা তাঁর ছিল ব্রেনের এক্সাসাইজ। আমারা অধিকাংশই এই ধরনের খুটি-নাটি খরচ মনে রাখার চেষ্টা করি না। কিন্তু, গিরিজা দেবীকে দেখে বুঝেছিলাম এই খরচের হিসাব রাখাটাও আসলে সঙ্গীত সাধনার অঙ্গ। কারণ, মাঝে-মধ্যে আমাদেরও বলতেন এইভাবে হিসেব রাখতে। এতে মস্তিষ্ক সজাগ থাকে শুধু নয় গানের লাইন ভোলার সমস্যাও কেটে যায় বলে মনে করতেন তিনি।

এতটাই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতী ও নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলতেন যে ৮৮ বছর বয়সেও গিরিজা দেবীর কন্ঠ যেন কোনও এক ষোড়শীর মতো। গিরিজা দেবী বয়স এবং বাচনভঙ্গী দেখলে মনে হতেই পারে কন্ঠেও হয়তো বয়সের ছাপ থাকবে। কিন্তু, যখন গলা ছাড়তেন তখন যেন মনে হত সামনে কোনও অল্পবয়সী মেয়ে বসে গান গাইছে। গলা কোথাও বিন্দুমাত্র কাঁপত না। চোখ বন্ধ করে থাকলে কারোর পক্ষেই বোঝা অসম্ভব যে গলাটি একটি ষোড়শী কন্যা নয় ৮৮ বছরের এক বৃদ্ধার। এটা সারা দেশেরই সঙ্গীতপ্রেমী মানুষদের কাছে একটা বিষ্ময় বলে বোধ হত। এমনকী, গিরিজা দেবী যখন গলা ধরতেন তখন যেন মনে হত তাঁর চেহারা জুড়ে একটা দ্যুতি বেরিয়ে আসছে। আর সেই দ্যুতিতে যেন হারিয়ে যেত বয়সের ছাপ, সমস্তকিছু। শুধুমাত্র পড়ে থাকত এক সাধিকা আর তাঁর সঙ্গীত সাধানা। এই দৃশ্য এখন থেকে শুধু মনে মনে দেখে যেতে হবে এটা ভেবেই মনে উপরে কষ্টের পাথরটা চেপে বসছে। একজন শিষ্যার কাছে তাঁর গুরু মা প্রয়াণে এর থেকে বড় হাহাকার আর কি হতে পারে?'

English summary
Manashi Majumder the diciple of late classical singer Girija Devi narrates how was her Guru Ma? How she lived a life? Girija Devi was not only a Thumri Queen, she was a veru much family woman who kept eying on every neccesity of the family.
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X