দ্রুত টিকাকরণেই ঠেকানো সম্ভব নয়া করোনা স্ট্রেনের প্রাদুর্ভাব! জোর দিচ্ছেন গবেষকরা
দ্রুত টিকাকরণেই ঠেকানো সম্ভব নয়া করোনা স্ট্রেনের প্রাদুর্ভাব! জোর দিচ্ছেন গবেষকরা
সারাবিশ্বে যখন জোরকদমে চলছে করোনা টিকাকরণ কর্মসূচি। তারই মাঝে ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের নব করোনা স্ট্রেনের ফলে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। করোনাবিদদের মতে, নব স্ট্রেনের কারণে অন্তত ভারতীয়দের আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। তবুও ভারতীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রককে সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছে হু। শনিবার ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, ব্রিটেনের ৫০১.ওয়াই.ভি১ (501.Y.V1) স্ট্রেনে ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫০ ভারতীয়। সূত্রের খবর, নতুন অভিযোজিত স্ট্রেনগুলি আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি সংক্রামক হলেও কতটা প্রাণঘাতী, সে বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
কি বদল চোখে পড়ল বিজ্ঞানীদের?
আন্তর্জাতিক সূত্রের খবর, ব্রিটেনের নব স্ট্রেনের কারণে মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ৩০%, মধ্য-জানুয়ারিতে লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন ও লন্ডনের ট্রপিক্যাল মেডিসিন এন্ড ইমপিরিয়াল কলেজের যৌথ গবেষণায় উঠে আসে এহেন তথ্য। এই গবেষণা ও এক্সিটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্রকে হাতিয়ার করে ব্রিটেনের করোনা গবেষণা দল 'নার্ভট্যাগ'-র তরফে জানানো হয়, আগের চেয়েও অধিক সংক্রামক হওয়ার কারণে মৃত্যুহারও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। যদিও নব স্ট্রেনের অধিক সংক্রামক হওয়ার পাশাপাশি অধিক প্রাণঘাতী হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ জন এডমন্ডস।
নতুন গবেষণা কতটা ফলপ্রসূ?
নার্ভট্যাগের তরফে জানান হয়েছে, অধিকাংশ করোনা মৃতদের ক্ষেত্রে হাসপাতালে যাওয়ার পরেই ধরা পড়েছে করোনা। যদিও করোনার নবস্ট্রেনের কারণে হাসপাতালে ভর্তির প্রবণতা কতটা বেড়েছে, তা বোঝা যায়নি এই সমীক্ষা গুলিতে, এমনই বক্তব্য এডমন্ডসের। নার্ভট্যাগের সূত্রে জানা গেছে, সমীক্ষা চলাকালীন করোনায় মোট মৃতের মাত্র ৮%-কেই গবেষণার আওতায় আনা সম্ভব হয় সমীক্ষকদের পক্ষে। স্বাভাবিকভাবেই নমুনার ক্ষেত্রে এহেন গোলযোগকে ঘিরে এই গবেষণাগুলির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অধিকাংশ গবেষক।
নব স্ট্রেনের অধিক প্রাণঘাতী হওয়ার কারণ কি?
বিজ্ঞানীদের মতে, ভাইরাস কোষে যে বদলগুলির কারণে করোনা অধিক সংক্রামক, সেই বদলগুলিই এর অধিক প্রাণঘাতী হওয়ার কারণ। আগের চেয়েও অধিক তাড়াতাড়ি মানবকোষের সাথে যুক্ত হওয়ার কারণে দেহের প্রতিরোধী ক্ষমতার তৈরি হওয়ার আগেই সংক্রমণ সেরে ফেলছে করোনাকোষ, এমনই জানাচ্ছেন নার্ভট্যাগ প্রধান পিটার হরবি। অন্যদিকে ফ্রান্সের খ্যাতনামা ভাইরাসবিদ জর্ন মেয়রের মতে, "আগের চেয়ে শক্তিশালী না হয়ে হয়তো করোনা ভাইরাস তাড়াতাড়ি সংখ্যাবৃদ্ধির ফর্মুলা জেনে গেছে, আর তাই মানবশরীর এত সহজে ভেঙে পড়ছে।"
অভিযোজনের ফলে কতটা ক্ষতি হবে চিকিৎসার?
অভিযোজনের ফলে চিকিৎসা পদ্ধতির কোনোরকম ক্ষতি হবে না, করোনা প্রসঙ্গে সাফ জানালেন পিটার হরবি। তাঁর মতে, "উন্নত চিকিৎসা পরিকাঠামো ও ডেক্সামিথানোজের ক্ষমতা নবস্ট্রেনকেও আটকাতে সক্ষম।" ইতিপূর্বে অভিযোজনের প্রশ্নে ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্না জানিয়েছিল যে নবস্ট্রেনের বিরুদ্ধে লড়তে তাদের ভ্যাকসিনে কোনো বদলের প্রয়োজন নেই। সেই দাবীতেই সম্প্রতি সিলমোহর দিল ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডের করোনাবিজ্ঞানীরা।
আদৌও কী দুর্বল হচ্ছে নয়া করোনা ভাইরাস?
বিশ্বব্যাপী সংক্রমণের পরে দুর্বল হবে করোনা, এর আগে বহু গবেষক এহেন দাবি তুললেও সেই দাবিতে যে জল ঢেলেছে নবস্ট্রেন গুলি তা স্পষ্ট করেছেন বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারী বিশেষজ্ঞ এমা হরক্রফট। অন্যদিকে সাম্প্রতিক গবেষণার উপর নির্ভর করে নিশ্চিত না হওয়ার বার্তা দিলেন ব্রিটেনের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ গ্রাহাম মেডলি। তাঁর মতে, "নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে যে ফাঁকফোকর থেকে গেছে, তা ফলাফলে যথেষ্ট গলদ ঘটাতে সক্ষম।" এদিকে হু-এর তরফে এই প্রসঙ্গে আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথা জানানো হয়েছে।
২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে সব থেকে কম মৃত্যু কলকাতায়! জেলাগুলিতেও স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি