মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে চরম নাটক কংগ্রেসের, শচিন-অশোকের দিল্লি সফর বাতিল
মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে সিদ্ধান্ত এখন নেবেন রাহুল গান্ধী। মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছে যে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব এই নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তই নিতে পারছে না।
তিন রাজ্যে সরকার গঠনের পথে কংগ্রেস। কিন্তু এখনও মুখ্যমন্ত্রী পদে কোনও নামই ঠিক করতে পারল না তারা। শেষমেশ ঠিক হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন রাহুল গান্ধী। মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছে যে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব এই নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তই নিতে পারছে না। যার জেরে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস বিধায়করা বুধবার একটি রেগুলেশন পাস করান। এতে মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার রাহুল গান্ধীর উপরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসও। এখানকার বিধায়করাও একান্তে রাহুল গান্ধীকে তাঁদের পছন্দের মুখ্যমন্ত্রীর নাম জানাবেন।
মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে সবচেয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে আছে রাজস্থানে। যার জেরে মুখ্যমন্ত্রী পদে দুই হেভিওয়েট দাবিদার শচিন পাইলট ও অশোক গেহলটকে দিল্লি-তে ডেকে পাঠানো হয়। বুধবার রাতেই তাঁদের দিল্লি পৌঁছনোর কথা ছিল। বৃহস্পতিবার রাহুল গান্ধী দুই নেতার সঙ্গে বৈঠকে বসারও কথা ছিল। তাঁর আগে রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেস ও সেখানকার কংগ্রেস বিধায়কদের সঙ্গেও কথা বলার কথা ছিল। ইতিমধ্যেই রাহুল গান্ধী তাঁর দূত কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অবিনাশ পাণ্ডে এবং পর্যবেক্ষক কে সি বেণুগোপালের কাছ থেকে রাজস্থান সম্পর্কে রিপোর্টও সংগ্রহ করেছিলেন। বিশেষ সূত্রে খবর এই বৈঠকে তেমন হলে সনিয়া গান্ধীও হাজির থাকার কথা ছিল। কিন্তু, পরে রাজস্থানের দুই নেতাকেই জয়পুরে থাকতে বলা হয়। শচিন পাইলট ও অশোক গেহলট শেষমেশ তাঁদের দিল্লি সফর বাতিল করেন।
বুধবার সন্ধ্যায় জয়পুরে প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে পরিষদীয় দলের বৈঠক হয়। কিন্তু, সেখানেও মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। গত পাঁচ বছর ধরে রাজস্থানে কংগ্রেসের লড়াইয়ের মুখ হয়ে উঠেছেন শচিন পাইলট। অন্যদিকে অশোক গেহলট একটা সময় রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেও এখন দিল্লির রাজনীতি-তেই তাঁকে বেশি দেখা গিয়েছে।
রাজস্থানে কংগ্রেসের জয়ের ছবিটা পরিষ্কার হতেই শচিন পাইলটের অনুগামীরা রাস্তায় নেমে পড়েন। শচিন-এর নাম-এ জয়ধ্বনি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবি জানাতে থাকেন। বুধবার বহু যুবক রক্তে লেখা পোস্টার নিয়েও শচিন পাইলটের বাড়ির সামনে হাজির হয়েছিলেন। এতে শচিন পাইলট-কে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবি জানানো হয়েছিল।
শচিন পাইলট রাজস্থানে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। বিশেষ করে জাত-পাতের রাজনীতির বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই মুগ্ধ করেছে সব সম্প্রদায়ের যুবককে। তাঁর হয়ে নির্বাচনে নেমেছেন বহু মুসিলম, দলিত যুবক। এঁরা শচিন পাইলট-কে নিজেদের ভগবান বলে মানেন। অন্যদিকে, অশোক গেহলট রাজস্থান রাজনীতিতে একজন প্রবীণ ও প্রাজ্ঞ রাজনীতিক বলেই পরিচিত। অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের মধ্যে তাঁরও একটা জনপ্রিয়তা রয়েছে। আগে যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তি-র জন্য সকলেই তাঁকে সম্মান করেন। ফলে রাজস্থানের শাসনভার নবীন শচিন-এর কাঁধে না প্রাজ্ঞ অশোক-এর কাঁধে দেওয়া হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বেজায় অসুবিধায় পড়েছে কংগ্রেস নেতত্ব।
এদিকে মধ্যপ্রদেশেও মুখ্যমন্ত্রীত্ব নিয়ে জটিলতা রয়েছে। মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি কমল নাথ। তিনি আবার ছিন্দওয়ারা-র সাংসদ। গত কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রদেশে ঘাঁটি গেড়ে বসেছিলেন কমল নাথ। অন্যদিকে, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া মধ্যপ্রদেশের ভূমিপূত্র। তিনি-ও গত কয়েক বছর ধরে এখানে কংগ্রেস-এর ভোটব্য়াঙ্ক-কে শক্তিশালী করার কাজ করছিলেন। কমলনাথ ও জ্যোতিরাদিত্য কেউই মুখ্যমন্ত্রীত্ব নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে, হাবেভাবে কমল নাথ বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। অন্যদিকে, জ্যোতিরাদিত্য-র সাফ কথা তাঁকে মধ্যপ্রদেশে বিজেপি-কে উৎখাতের ভার দেওয়া হয়েছিল। তিনি তা সফলভাবে করেছেন। এখন মুখ্যমন্ত্রী কে হবে তা কংগ্রেস হাইকম্যান্ডই সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি দলের সৈনিক। দল যেভাবে এবং যে ভূমিকায় তাঁকে চাইবে সেই ভাবেই কাজ করবেন।
[আরও পড়ুন:অভিজ্ঞতাতেই ভরসা রাহুলের, মধ্যপ্রদেশের মসনদে বসার আগে এক ঝলকে কমলনাথ]
সমস্যা রয়েছে ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়েও। এখানেও এখন পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করতে পারেনি কংগ্রেস। বুধবার সন্ধ্যায় রায়পুরে একটি বৈঠক হয়। সেখানে এখানকার প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এখানে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌঁড়ে ভূপেশ বাঘেল-এর সঙ্গে টিএস সিং দেও ও তম্রদ্বজ সাহু-র নাম রয়েছে। তবে মনে করা হচ্ছে ভূপেশ বাঘেল-কেই হয়তো ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসাতে চলেছে কংগ্রেস।
[আরও পড়ুন:মুখ্যমন্ত্রীত্ব ছেড়ে 'চৌকিদার' হলেন শিবরাজ সিং চৌহান! ১০৯ বিধায়ক নিয়েই দিলেন হুমকি]
[আরও পড়ুন:লক্ষ্য লোকসভা! ফেব্রুয়ারিতে রাজ্য সফরে প্রধানমন্ত্রী ]