বিজেপি শাসিত রাজ্যে রাজ্যে 'জায়ান্ট কিলার'! রাহুলের তারিফ কংগ্রেসে
২০১৯-এর লোকসবা নির্বাচনের আগে বিধানসভা নির্বাচন অন্যতম পরীক্ষা কংগ্রেস ও বিজেপি উভয়ের কাছে।
২০১৯-এর লোকসবা নির্বাচনের আগে বিধানসভা নির্বাচন অন্যতম পরীক্ষা কংগ্রেস ও বিজেপি উভয়ের কাছে। কংগ্রেসের তরফে মানভন্দ্র সিং, অরুণ যাদব এবং করুণা শুক্লাকে দাঁড় করানো হয়েছে যথাক্রমে বসুন্ধরা রাজে, শিবরাজ সিং চৌহান এবং রমন সিং-এর বিরুদ্ধে। তিন কংগ্রেস প্রার্থীরই ক্ষমতা আছে বিজেপি-র তিন হেভিওয়েটের বিরুদ্ধে কড়া লড়াই করার।
বিজেপির সম্মানের লড়াই
হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্য রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে বিধানসভার লড়াই বিজেপির তিন মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষেই সম্মানের লড়াই।
ওয়ারওভার দেয়নি কংগ্রেস
গত বেশ কয়েকটি নির্বাচনের মতো এই তিন রাজ্যে তিন মুখ্যমন্ত্রীকে ওয়াকওভার দেয়নি। পরিবর্তে তারা কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বিজেপি-র তিন হেভিওয়েট মুখ্যমন্ত্রীকে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, অনেকদিন পর কংগ্রেস, মুখ্যমন্ত্রীদের নিজেদের কেন্দ্রেই কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে দাঁড় করিয়েছে।
রাজস্থান
নির্বাচনের জন্য শনিবার মনোনয়ন দাখিল করেছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে। ঝালরাপাতান কেন্দ্র থেকে লড়াই করবেন তিনি। আর এই দিনই কংগ্রেস রাজস্থানে তাদের দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করেছে। আর ওই কেন্দ্র থেকে দাঁড় করিয়েছে মানভেন্দ সিংকে। তাঁর অপর পরিচিতি, তিনি বিজেপির প্রাক্তন নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিং-এর ছেলে। ৫৪ বছরের মানভেন্দ্র এর আগে ১৯৯৯-এ বারমেড়-জয়শলমীর আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু কংগ্রেস প্রার্থী সোনা রামের কাছে হেরে যান। তবে ২০০৪-এ তিনি ওই একই আসন থেকে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছিলেন। বিজেপির টিকিটে ২০১৩-তে শিব বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পেয়েছিলেন। কিন্তু পরের বছরই নিজের বাবা বারমেড়-জয়শলমীর আসন থেকে নির্দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই সময় তাঁর হয়ে প্রচারের জেরে তাঁকে সাসপেন্ড করেছিল বিজেপি। এবছরের ১৭ অক্টোবর তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন।
মধ্যপ্রদেশ
মধ্যপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের বিরুদ্ধে বুধনি কেন্দ্র থেকে লড়াইয়ে রয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ যাদব। মনমোহন সিং সরকারে তিনি ২০০৯ থেকে ২০১১-র মধ্যে মন্ত্রী হয়েছিলেন। মধ্যপ্রদেশের খারগোন লোকসভা কেন্দ্র থেকে দুবারের সাংসদ এই অরুণ যাদব। তিনি মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতিও ছিলেন। এবছরের এপ্রিলে তাঁকে সরিয়ে কমলনাথকে প্রদেশ সভাপতি করা হয়।
তবে অরুণ যাদবের প্রতি মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যেন সহানুভূতি সম্পন্ন। শিবরাজ সিং চৌহান বলেছেন, কংগ্রেস সবসময় পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে শোষণ করে। তাঁকে প্রথমে প্রদেশ সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে এবার বলির পাঠা করা হচ্ছে। যদিও এর উত্তর দিয়েছেন অরুণ যাদব। তিনি বলেছেন, ভুলে যাবেন না মধ্যপ্রদেশের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে অরুণ যাদব ১৯৬২-তে কৈলাস নাথ কাটজু এবং ১৯৭৭ সালে শ্যামাচরণ শুক্লার নাম বলতে চেয়েছেন।
ছত্তিশগড়
রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের মতো ছত্তিশগড়েও কংগ্রেস রাজনন্দগাঁও থেকে মুখ্যমন্ত্রী রমন সিং-এর বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছিল করুণা শুক্লাকে। এই আসনের নির্বাচন ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। করুণা শুক্লার অপর পরিচিতি, তিনি প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর ভাগ্নী। মানভেন্দ্র সিং-এর মতো তিনিও প্রথমে বিজেপি-র হয়ে জয়লাভ করেছিলেন। পরে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।
করুণা শুক্লা ২০০১ সালে বিজেপির বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ছত্তিশগড়ের জাঙ্গজির কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন।
১৯৯৯-এর লোকসভা নির্বাচনে রাজনন্দগাঁও কেন্দ্র থেকে মোতিলাল ভোরাকে পরাজিত করার কারণে রমন সিংকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জায়ান্ট কিলার অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। এবার করুণা শুক্লা সেই জায়ান্ট কিলার হয়ে উঠতে পারেন কিনা এখন সেটাই দেখার।
এর সঙ্গে বিজেপির বাকি দুই মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো রাজস্থানে মানভেন্দ্র সিং এবং মধ্যপ্রদেশে অরুণ যাদবের দিকেও তাকিয়ে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তাঁরাও কি হয়ে উঠবেন জায়ান্ট কিলার, সেই উত্তরের জন্য তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ভোটের ফলের দিকে।